১৫ বছরে সাগুফতা ইয়াসমিনের সম্পদ বেড়েছে ১৩ গুণ, স্বামীর ৭ গুণ

২০০৮ সালে সাগুফতা ইয়াসমিনের কোনো স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। কিন্তু, ১৫ বছর পর তিনি ১৪ শতাংশ কৃষিজমি যার মূল্য ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা ও ঢাকার উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে ৫ কাঠা জমির উপর নির্মিত একটি বাড়ির মালিক হয়েছেন যার জমির মূল্য ২০ লাখ ও বাড়ির মূল্য ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
সাগুফতা ইয়াসমিন
সাগুফতা ইয়াসমিন। ছবি: সংগৃহীত

মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিনের পেশা ছিল বিবিধ কৃষিপণ্য মজুদের ব্যবসা। তবে, ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পরবর্তী সব হলফনামায় পেশা হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন 'সংসদ সদস্য'।

এই সময়ের মধ্যে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৩ গুণ ও তার স্বামীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ৭ গুণ। ২০০৮ থেকে শুরু করে ২০১৩, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় তার নিজের দেওয়া সম্পদের হিসাব থেকে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

২০০৮ সালে বিবিধ কৃষিপণ্য মজুদের ব্যবসা থেকে সাগুফতার বাৎসরিক আয় ছিল ৮ লাখ ৪৮ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া চাকরি (হলফনামায় বিস্তারিত বিবরণ নেই) থেকে ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে তিনি এককালীন ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় করেন। অন্যদিকে, ২০২৩ সালে বাড়ি ও দোকান ভাড়া, শেয়ার, ব্যাংক আমানত, চাকরি তথা সংসদ সদস্যের বেতন-ভাতাসহ মোট আয় করেন ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

২০০৮ সালে সাগুফতা ইয়াসমিনের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল নগদ ১১ লাখ ১৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা মাত্র ৩০ হাজার টাকা, ২০ ভরি স্বর্ণ যার অর্জনকালীন মূল্য ৮০ হাজার টাকা ও মাত্র ৫৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র। ২০০৮ সালে তার কোনো পিস্তল বা শটগান ছিল না। ছিল না কোনো গাড়িও। কিন্তু, একাধারে ১৫ বছর সংসদ সদস্য হিসেবে থাকার পর ২০২৩ সালে তার অস্থাবর সম্পদ হয়েছে ১৩ গুণ।

এর মধ্যে নগদ টাকা ২ লাখ ২৪ হাজার, ব্যাংকে জমা ৩ লাখ ৮৭ হাজার, শেয়ার ৫ লাখ ১৫ হাজার, সঞ্চয়পত্র ৬০ লাখ টাকা, প্রায় ৯৩ লাখ টাকার ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮ গাড়ি, সাড়ে ৩ লাখ টাকার সাড়ে ৩ ভরি স্বর্ণ, ১ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও দেড় লাখ টাকার আসবাবপত্র। ইতোমধ্যে তিনি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকায় দুটি অস্ত্র কিনেছেন যার একটি পিস্তল ও একটি শট গান।

তার স্বামীরও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। ২০০৮ সালে স্বামীর নগদ ছিল ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ৪৫ হাজার টাকা, প্রাইজবন্ড, শেয়ার ও ঋণ প্রদানসহ মোট ৯ লাখ ৯ হাজার, সঞ্চয়পত্র ২৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ৮০ হাজার টাকার স্বর্ণ ও ৫৫ হাজার টাকার আসবাবপত্রসহ মোট ৪১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

তবে, গত ১৫ বছরে তার মোট অস্থাবর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ৩ কোটি ১৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে আছে নগদ ৫ লাখ ২৮ হাজার, ব্যাংকে জমা ৫ লাখ ৬৩ হাজার, শেয়ার ও বন্ড ৯৯ লাখ ২৩ হাজার, সঞ্চয়পত্র ৭৩ লাখ ৩৫ হাজার, স্থায়ী আমানত ১ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

এছাড়া, আরও আছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার স্বর্ণ, ৮৪ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৫৫ হাজার টাকার আসবাবপত্র।

২০০৮ সালে সাগুফতা ইয়াসমিনের কোনো স্থাবর সম্পত্তি ছিল না। কিন্তু, ১৫ বছর পর তিনি ১৪ শতাংশ কৃষিজমি যার মূল্য ৫ লাখ ১৫ হাজার টাকা ও ঢাকার উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে ৫ কাঠা জমির উপর নির্মিত একটি বাড়ির মালিক হয়েছেন যার জমির মূল্য ২০ লাখ ও বাড়ির মূল্য ২ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, সাগুফতা ইয়াসমিনের স্বামীর ঢাকার মিরপুরে একটি বাড়িসহ নাখালপাড়া ও লালমাটিয়ায় দুটি ফ্ল্যাট ছিল। এই সম্পত্তির মূল্য ছিল ২৩ লাখ ২১ হাজার টাকা। বর্তমানে ঝিলমিল, হলদিয়া ও সাতারকুলে ৫৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকার অকৃষিজমি রয়েছে, যার পরিমাণ তিনি উল্লেখ করেননি। তিনি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার টাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টের কথা উল্লেখ করেছেন। তবে, অ্যাপার্টমেন্টটির অবস্থান উল্লেখ করা হয়নি।

এছাড়াও, ২০১৮ সালের হলফনামায় সাগুফতা ইয়াসমিনের ওপর নির্ভরশীলদের ব্যাংকে জমা ছিল ১৪ লাখ ৩৫ হাজার ও স্থায়ী আমানত ছিল ৫০ লাখ টাকার।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে সাগুফতা ইয়াসমিনের দায় ছিল ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি যার মধ্যে আত্মীয়-স্বজনের কাছে দায় ছিল ১ কোটি ৩৫ লাখ ৮১ হাজার টাকা। তবে, ২০২৩ সালে তার দায় কমে হয়েছে ৭১ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

সাগুফতা ইয়াসমিন ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য ছিলেন। ৬১ বছর বয়সী সাগুফতা সর্বমোট ২০ বছর ধরে সংসদ সদস্য ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago