নির্বাচন

আমার চেয়ে বড় খারাপ লোক এ জেলাতে হয় নাই, হবেও না: মৃত্যুদণ্ডের ক্ষমাপ্রাপ্ত আসামি

‘ভোটের দিন পর্যন্ত আমি তেওয়ারীগঞ্জে থাকবো। আমি দেখবো কে কত বড় সন্ত্রাস হয়েছেন।’
এএইচএম আফতাব উদ্দিন বিপ্লব। ছবি: সংগৃহীত

'কেউ ভয় পাবেন না, ধৈর্য্য ধরেন। আমার চেয়ে বড় খারাপ লোক এ জেলায় হয় নাই, হবেও না।'

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে জনসংযোগে গিয়ে বক্তব্য রাখতে দিয়ে এ কথা বলেছেন তিনটি ভিন্ন হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি এএইচএম আফতাব উদ্দিন বিপ্লব। তিনি লক্ষ্মীপুরের সাবেক পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরের বড় ছেলে।

বিপ্লবের এই বক্তব্যকে 'উস্কানিমূলক' উল্লেখ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বলছেন, নির্বাচনে বহিরাগতদের এমন বক্তব্য ভোটের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে শোনা যায় বিপ্লব আরও বলছেন, 'আজকের হামলার ঘটনার জন্য একটা কথা বলি। আমি প্রত্যেকদিন এক ঘণ্টা করে এখানে আসবো। যতক্ষণ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ না হবে, কথা দিচ্ছি আমি এখান থেকে যাবো না। ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবো। আমি দায়িত্ব নিয়েছি, তেওয়ারীগঞ্জ আমি ছাড়বো না। ভোটের দিন পর্যন্ত আমি তেওয়ারীগঞ্জে থাকবো। আমি দেখবো কে কত বড় সন্ত্রাস হয়েছেন। এটার জবাব ভোটের ব্যালটে দেবো ইনশাআল্লাহ। যে আচরণ করেছেন, তা ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দেবো।'

১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ইউনিয়নের নতুন তেওয়ারীগঞ্জ বাজারে আনারস প্রতীকের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ইবনে হুছাইন ভুলুর পক্ষে গণসংযোগকালে বিপ্লব এসব বক্তব্য দেন। এ সময় প্রার্থীও উপস্থিত ছিলেন।

ভুলু সম্পর্কে বিপ্লবের খালাতো বোনের স্বামী এবং সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর বড় ভাই।

অভিযোগ রয়েছে, অটোরিকশা প্রতীকের প্রার্থী ও তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন বোরহান চৌধুরীর সমর্থকরা আনারস প্রতীকের প্রার্থীর জনসংযোগে হামলা করে। এই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বিপ্লব তার বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

বিপ্লব গণমাধ্যমকে বলেন, 'আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি তেওয়ারীগঞ্জে ভুলু ভাইয়ের নির্বাচনী জনসংযোগে যাই। আমাদের শান্তিপূর্ণ জনসংযোগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন হামলা চালায়। আমার গাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। এ জন্য রেগে গিয়ে কথাগুলো বলেছি। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই।'

চেয়ারম্যান প্রার্থী ভুলু বলেন, 'আমাদের জনসংযোগে হামলা হওয়ায় বিপ্লব একটু রেগে গিয়ে বক্তব্যে কথাগুলো বলেছেন।'

'এই হামলার ঘটনায় আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেবো,' যোগ করেন তিনি।

ভুলুর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আক্তার বলেন, 'বিপ্লব বহিরাগত। তিনি ভুলুর গণসংযোগে এসে উচ্ছৃঙ্খল কথাবার্তা বলে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্য শুনে স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন।'

হামলার বিষয়ে তিনি দাবি করেন, 'আমার কোনো লোক তাদের ওপর হামলা করেনি। কোনো ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে বলেও শুনিনি। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে এসব বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দেবো।'

নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ভৌমিক বলেন, 'বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ আমাকে জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ভুলু ও আক্তার ছাড়াও তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পথে প্রার্থী হয়েছেন আরও ছয় জন।

আগামি ২৮ এপ্রিল তেওয়ারীগঞ্জসহ সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ, দালালবাজার, লাহারকান্দি ও দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ হবে।

২০০০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও আইনজীবী নুরুল ইসলামকে লক্ষ্মীপুর শহরের বাসা থেকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। এই হত্যা মামলায় ২০০৩ সালে বিপ্লবসহ পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড ও নয় জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারিক আদালত।

বিপ্লব ২০১১ সালের ৪ এপ্রিল আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তার বাবা আবু তাহের ছেলের প্রাণভিক্ষা চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। ওই বছরের ১৪ জুলাই তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান তার সাজা মওকুফ করেন।

পরের বছর আরও দুটি হত্যা মামলায় (কামাল ও মহসিন হত্যা) বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা কমিয়ে ১০ বছর করেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান।

পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় ২০১২ সালে ফিরোজ হত্যা মামলা থেকেও বিপ্লবের নাম প্রত্যাহার করা হয়। ২০১৪ সালের ১ আগস্ট কারাগারে থেকে বিয়ে করে দেশব্যাপী আলোচনায় আসেন বিপ্লব। ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর তিনি কারামুক্ত হন।

Comments