মৈনট-চর ভদ্রাসন নৌপথে চালু হচ্ছে লঞ্চ সার্ভিস

স্টার ফাইল ছবি

ঢাকার দোহারের মৈনটঘাট থেকে ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন নৌপথে লঞ্চ সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া (মাওয়া) ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে চলাচলরত সানকেনডেক লঞ্চ নতুন এ নৌপথে চলাচল করবে।

পদ্মাসেতু চালুর পর থেকে এই নৌপথে লঞ্চে যাত্রী না থাকায় এ পরিকল্পনা নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। ইতোমধ্যে মৈনটঘাট ও চরভদ্রাসন ঘাটে পল্টুন স্থাপন শেষে হয়েছে। তবে, জেটি স্থাপন, সংযোগ সড়ক, যাত্রীছাউনিসহ নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ বাকি আছে।

শিমুলিয়া জোনের লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি-বাংলাবাজার নৌপথের যাত্রী নেই। এখানকার লঞ্চে প্রায় ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ৬০০ মানুষ কর্মরত। এছাড়া, পরিবারসহ প্রায় ৫০ হাজার মানুষ জড়িত। তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

তিনি জানান, দোহারের মৈনটঘাট থেকে ফরিদপুরের চর চন্দ্রভাসন নৌপথে লঞ্চ চলাচলের জন্য কয়েকমাস আগে আমরা বিআইডব্লিউটিএ'র কাছে লিখিত আবেদন করি। সেখানে শুধু ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে। নতুন নৌপথের রাস্তাঘাটও ভালো। নতুন এ নৌপথে রুট পারমিটের জন্য আমরা আবেদনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

আলেয়া শাকিল খান শিপিংস নামের লঞ্চ মালিক মো. রফিক জানান, নতুন নৌপথে লঞ্চ চালুর ব্যাপারে আমরা সবাই আগ্রহী। পদ্মাসেতু চালুর থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে লঞ্চে যাত্রী নেই। হাতে গোনা কয়েকজন যাত্রী মাঝেমধ্যে ঘাটে আসে। নতুন নৌপথে গিয়ে সেখানে আমরা চেষ্টা করব ভালো সার্ভিস দিয়ে যাত্রীদেরকে লঞ্চমুখী করার।

জেএস নেভিগেশন লঞ্চের মালিক মো. খোকন জানান, যাত্রী না থাকায় ব্যবসা খারাপের দিকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ৫-৬ জন মালিক লঞ্চ বিক্রি করে দিয়েছে। ভালো দাম পেলে অনেকেই বিক্রির আশায় আছেন। যদি নতুন নৌপথে লঞ্চ সার্ভিস চালু হয় তবে আমরা সেখানে ব্যবসা করব।

এম এল বেপারি লঞ্চের ম্যানেজার জাহাঙ্গীর বেপারি জানান, প্রায় ২৬ বছর ধরে আমরা পদ্মা নদীতে সানকেন ডেক লঞ্চে যাত্রী পারাপার হয়েছে। উত্তাল পদ্মা নদীতে এসব লঞ্চ চলাচলে কোনো অসুবিধা হয়নি। নতুন নৌপথেও চলাচলে অসুবিধা হবে না।

বিআইডাব্লিউটিএ'র শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী পরিচালক শাহাদত হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ইতোমধ্যে দোহারের মৈনটঘাট ও ফরিদপুরের চর ভদ্রাসনে ২টি পল্টুন স্থাপন করা হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথের লঞ্চে যাত্রী কমে এসেছে। এজন্য লঞ্চ মালিকদের আবেদন ও অনুরোধের প্রেক্ষিতে নতুন নৌপথে লঞ্চ সার্ভিস স্থানান্তর করা হচ্ছে।

তিনি জানান, কেরানীগঞ্জের কদমতলীসহ আশেপাশের এলাকায় গার্মেন্টস, কলকারখানা নির্মাণ হচ্ছে। কর্মরত শ্রমিকরা দক্ষিণবঙ্গের জেলা থেকে ঢাকার কাছে এসে চাকরি করেন। তাদের জন্য এ নৌপথটি ব্যবহার সাশ্রয়ী হবে। ফরিদপুরের ভাঙা এলাকার যাত্রীদের জন্য চর ভদ্রাসন ঘাট ব্যবহার করে ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে এ নৌপথ সুবিধাজনক হবে। শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটের লঞ্চ মালিকদের আবেদন ও যাত্রীদের সুবিধার্থে উপজেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকা এ ঘাটে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ'র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, মৈনটঘাট ও চর ভদ্রাসন ঘাটে জেটি স্থাপন, সংযোগ সড়কের কাজ বাকি আছে। শিমুলিয়া ও বাংলাবাজার নৌপথের সব মালিক নতুন নৌপথে লঞ্চ চালুর ব্যাপারে আগ্রহী। রুট পারমিটের জন্য কয়েকজন আবেদন করেছেন।

তিনি জানান, নতুন ২টি ঘাটে দীর্ঘদিন যাবত ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করছে। সেখানে লঞ্চ সার্ভিস চালু হলে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। এসব কাটিয়ে উঠে সার্ভিস চালু করতে সময় লাগবে। সব লঞ্চের রুট পারমিটের আবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে কবে থেকে চালু হচ্ছে লঞ্চ।

বিআইডাব্লিউটিএ শিমুলিয়া ঘাট সূত্রে জানা যায়, দোহারের মৈনটঘাট থেকে পদ্মা নদী পার হয়ে ফরিদপুরের চর ভদ্রাসন ঘাটের দূরত্ব প্রায় সাড়ে ৯ কিলোমিটার। লঞ্চে এ দূরত্ব পার হতে সময় লাগবে প্রায় ৩৫-৪০ মিনিট। আর ভাড়া লাগতে পারে ১০০ টাকা। অন্যদিকে, গুলিস্তান থেকে বাসে মৈনটঘাট আসতে সময় লাগবে প্রায় এক ঘণ্টা। আর যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত একই গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগবে ৫০ মিনিট। যাত্রীদের জন্য সাশ্রয়ী হবে। গুলিস্তান থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙা পর্যন্ত ভাড়া লাগবে ২৫০ টাকা। সেখানে নতুন নৌপথে ভাড়া লাগবে ২০০ টাকারও কম। তবে ভাড়া কম লাগলেও সময় বেশি লাগবে এ পথে। কেরানীগঞ্জের কদমতলীসহ বিভিন্ন এলাকার গার্মেন্টস ও কারখানার শ্রমিকদের জন্য এ নৌপথে চলাচলে সুবিধা হবে। বর্তমানে মৈনট থেকে চর ভদ্রাসন নৌপথে ১০-১২টি ট্রলার ও ২০-২২টি স্পিডবোট চলাচল করছে। লঞ্চ সার্ভিস চালু হলে যাত্রী সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।

Comments

The Daily Star  | English

Govt to review media outlets owned by AL ministers, MPs: information adviser

The adviser made these remarks during a stakeholders' meeting of the Department of Films and Publications

29m ago