রাত ২টায় ওষুধের দোকান বন্ধের সিদ্ধান্ত কতটা বিবেচনাপ্রসূত

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায় সাধারণ ওষুধের দোকান রাত ১২টা পর্যন্ত এবং হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব ওষুধের দোকান রাত ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ডিএসসিসির আওতাধীন এলাকায় সাধারণ ওষুধের দোকান রাত ১২টা পর্যন্ত এবং হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত নিজস্ব ওষুধের দোকান রাত ২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।

কিন্তু, রাত ২টার পর মানুষ অসুস্থ হলে কী করবে? এ সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক? দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ এবং চিকিৎসক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব আব্দুন নূর তুষারের সঙ্গে।

তাদের মতে, সিটি করপোরেশনের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। ওষুধের দোকার অবশ্যই ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে।

বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সাশ্রয়ে অন্য পন্থা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, 'প্রথমত, হাসপাতাল যদি খোলা থাকে, তাহলে ফার্মেসি মানে তো একটা রুম। সেটা কেন রাত ২টার পর বন্ধ করতে হবে? এখান থেকে কতটুকু বিদ্যুৎ বা জ্বালানি সাশ্রয় হবে? যদি আসলেই তারা সাশ্রয় করতে চায়, তাহলে তাদেরকে কমন সেন্স খাটাতে হবে। সপ্তাহে একদিন জরুরি বাদে অন্য সব বেসরকারি যানবাহন বন্ধ রাখতে হবে। ওই দিন সবাই গণপরিবহন ব্যবহার করবে। প্রতিদিন ৫-৭ ঘণ্টা কষ্ট করার চেয়ে সপ্তাহে একদিন এটা করা যায় না? বিশ্বের অনেক দেশেই এ নিয়ম আছে। তাতে দূষণও কমবে, জ্বালানি সাশ্রয়ও হবে। কিন্তু, ওষুধের দোকান রাত ২টার পর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।'

'দ্বিতীয়ত, ওষুধপ্রাপ্তির বিষয়টিই তো আমাদের এখানে জটিল। এটাকে সহজ করতে হবে। হাসপাতাল থেকেই ওষুধ দিতে হবে। কমন ওষুধগুলো সব হাসপাতাল থেকে দেবে এবং সেগুলোর বিল করে নেবে। এরকম ব্যবস্থা হলে তো দোকান খোলা রাখা বা না রাখার এ ঝামেলায় যেতেই হতো না। সহজ জিনিসটাকে জটিল করে ফেলছে', যোগ করেন তিনি।

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, 'রাত ২টার পর ওষুধের দোকান বন্ধ করে দিতে হবে— এটা কখনই হতে পারে না। পৃথিবীর কোথাও এ নিয়ম নেই। ১৯৭১ সালেও ওষুধের দোকান সব সময় খোলা ছিল।'

'জীবন বাঁচানোর জন্য ওষুধের প্রয়োজন হয়। বিদ্যুৎ তো জীবনের জন্য। সেই জীবনই যদি না থাকে, তাহলে বিদ্যুৎ বাঁচিয়ে কী হবে? কোনো লাভ নেই। অবশ্যই এটি একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত। অনতিবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে, ক্ষমা চাইতে হবে', বলেন তিনি।

আব্দুন নূর তুষার বলেন, 'প্রথমত, অধিকাংশ হাসপাতালের সঙ্গেই ওষুধের দোকান নেই। দ্বিতীয়ত সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যেসব ওষুধের দোকান, সেগুলো বেসরকারি। ফলে সেগুলোকে হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত বলা যাবে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মতো সরকারি হাসপাতালে রোগীদের ওষুধসহ অন্যান্য জিনিস বাইরে থেকে কিনতে হয়। ফলে মেডিকেলের বাইরে যেসব ওষুধের দোকান, সেগুলোকে হাসপাতালের সঙ্গে সংযুক্ত বলা যাবে না। বললে সেটা হবে বেআইনি।'

'এখন রাত ২টার পর রোগী অসুস্থ হলে কোথায় ওষুধ পাবে, সেটার জবাব সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে। সারা পৃথিবীতে ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। ওষুধের দোকান ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে, সেটাই আধুনিক শহরের বৈশিষ্ট্য। রাতে যদি রোগীর জরুরি ওষুধ লাগে, যেমন: অ্যাজমার আক্রমণে ইনহেলার, হৃদরোগের জন্য কোনো ধরনের স্প্রে কিংবা জরুরি কোনো ওষুধ, ডায়াবেটিস রোগীর ইনসুলিন, সিভিয়ার অ্যালার্জির জন্য ওষুধসহ অন্যান্য যেসব ওষুধ জরুরিভিত্তিতে দরকার পড়ে, রাত ২টার পর সেগুলো কোথায় পাওয়া যাবে, তার জবাব সিটি করপোরেশনের সেসব বুদ্ধিমান কর্মকর্তাদেরকে বলতে হবে', বলেন তিনি।

আব্দুন নূর তুষার বলেন, 'চিকিৎসক হিসেবে আমি মনে করি এই সিদ্ধান্ত অবিবেচনাপ্রসূত। নির্বুদ্ধিতা থেকে এই সিদ্ধান্ত এসেছে।'

Comments