আজ ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস, এশিয়া এনার্জি-বিরোধী আন্দোলনের ১৬ বছর

ছবি: সংগৃহীত

আজ ২৬ আগস্ট, ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস। ২০০৬ সালের এই দিনে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘিরে রক্তাক্ত হয় দিনাজপুরের এই জনপদ।

দেশের সম্পদ রক্ষার এই আন্দোলনে সেদিন বিশাল সমাবেশে তৎকালীন বিডিআরের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন তিন তরুণ—তরিকুল, আমিন ও সালেকিন। আহত হন ২ শতাধিক আন্দোলনকারী।

প্রতিবছর এই দিনটিকে 'ফুলবাড়ী ট্রাজেডি দিবস' হিসেবে পালন করা হয়।

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ৫টি কয়লা খনির সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো হলো—দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া ও ফুলবাড়ী কয়লাখনি, বিরামপুরের দিঘিপাড়া, জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ ও রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার খালাশপীর কয়লা খনি।

২০০৫ সাল থেকে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে স্যাফট বা টানেল পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হচ্ছে।

খনিগুলোর মধ্যে জামালগঞ্জের খনিতে সবচেয়ে বেশি প্রায় ১ বিলিয়ন টন কয়লা রয়েছে। অন্যদিকে, ফুলবাড়ি খনিতে রয়েছে প্রায় ৫৭০ মিলিয়ন টন কয়লা।

১৯৯৪ সালে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার সংস্থা বিএইচপি'র সঙ্গে চুক্তি হয় সরকারের। পরে এশিয়া এনার্জির সঙ্গে সরকার ৩০ বছর মেয়াদী একটি অসম চুক্তি করে।

প্রস্তাবিত ওই চুক্তি অনুযায়ী, উত্তোলিত কয়লার মাত্র ৬ শতাংশ পাবে বাংলাদেশ, ৯৪ শতাংশ পাবে এশিয়া এনার্জি, যার ৮০ শতাংশ এশিয়া এনার্জি রপ্তানি করবে।

প্রস্তাবিত কয়লাখনি হলে পুরো ফুলবাড়ী শহরসহ আশপাশের কয়েকটি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পানির স্তর নিচে নেমে গেলে কৃষিতে এর প্রভাব পড়বে, হুমকির মুখে পড়বে গোটা পরিবেশ। ফলে বিশাল একটি জনবসতি স্থানান্তরিত হবে। উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে রূপ নেবে পরিবেশবাদীদের এমন হুঁশিয়ারিতে গঠিত হয় 'ফুলবাড়ী রক্ষা কমিটি'। শুরু হয় আন্দোলন।

দাবি ছিল—ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জির সব কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে ফুলবাড়ীতে কোনো উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাখনি হবে না।

পরবর্তীতে জাতীয় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির নেতারা এই আন্দোলনে যোগ দেন।

২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট ঢাকা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদসহ জাতীয় তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির নেতারা বিকেলের দিকে ফুলবাড়ী শহরের নিমতলা এলাকায় সভায় যোগ দেন।

সেদিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ লাঠি নিয়ে সেখানে সমবেত হন।

সমাবেশের পর মিছিল নিয়ে উপজেলার ঢাকা মোড় থেকে এশিয়া এনার্জির কার্যালয় ঘেরাও করতে গেলে তৎকালীন বিডিআর গুলি চালায়। এতে ৩ জন নিহত ও ২০০'র বেশি আন্দোলনকারী আহত হন।

এরপর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে ফুলবাড়ী। ৩০ আগস্ট তৎকালীন সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসেন আন্দোলনের নেতারা।

আলোচনায় আন্দোলনকারীদের ৬ দফা প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয়। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ছিল— এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং দেশের কোথাও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা যাবে না।

স্থানীয় নেতারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সে সময় ফুলবাড়ীবাসীকে তাদের দাবি পূরণের কথা দিয়েছিলেন। তবে তিনি ক্ষমতায় আসার ১৪ বছর পরেও ৬ দফা দাবি এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।

তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দাবি বাস্তবায়ন না হলে এশিয়া এনার্জিকে বিতাড়িত করতে ফুলবাড়ীবাসী আবার ঐক্যবদ্ধ হবে। তিন ফসলি জমি আমাদের স্থায়ী সম্পদ। অস্থায়ী সম্পদের জন্য এটি নষ্ট করা যাবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে স্যাফট বা টানেল পদ্ধতিতে কয়লা তোলা হলেও সেখানে অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেক মানুষকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। প্রায় ৬৪৬ একর আবাদি জমি নষ্ট হয়েছে।'

আন্দোলনের সময় স্থানীয় নেতাকর্মীদের ওপর হয়রানীমূলক মামলা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন ফুলবাড়ী আন্দোলনের অন্যতম নেতা মুরতুজা সরকার মানিক।

Comments

The Daily Star  | English

Arrest of Nusraat Faria 'mockery' of judicial process: NCP

Demands visible progress into the trial of the July killings by next July

2h ago