চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ: কাজ বাড়লেও বাড়েনি জনবল

রেল পুলিশ
চট্টগ্রাম রেল পুলিশের ফৌজদারহাট ফাঁড়ি। ছবি: সংগৃহীত

কর্মপরিধি এবং কাজের চাপ বাড়লেও, চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের জনবল বাড়েনি। দীর্ঘদিন ধরেই সীমিত জনবল দিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন রুটে চলা ১০ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন, মালবাহী ট্রেনসহ রেলস্টেশনের নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। এর পাশাপাশি থানা ও ফাঁড়িতেও তাদের দায়িত্ব পালন করে যেতে হচ্ছে।

জনবল সংকটে বিভিন্ন ট্রেনে পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি না থাকায়, ছিনতাই, চুরি, যৌন হয়রানির মতো অপরাধ ও অপ্রীতিকর ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় যাত্রীদের।

শুধু জনবল সংকট নয়, অবকাঠামোগত সংকট, অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা অবকাঠামো ও নিরাপত্তা সামগ্রী এবং যানবাহন ঘাটতিও আছে চট্টগ্রাম রেল পুলিশের।

রেল পুলিশ সদস্যরা বলছেন, অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের ফলে তাদের শরীর ও মনে পড়ছে এর বিরূপ প্রভাব। অন্যদিকে সার্বিক নিরাপত্তা বলয়ে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চল সূত্র জানায়, বর্তমানে এ অঞ্চলে ৩টি থানা, ৬টি ফাঁড়ি, পুলিশ সুপার কার্যালয়, রিজার্ভসহ মোট ৩৫০ জন পুলিশ সদস্য আছে। তাদের মধ্যে ১০ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেনসহ অন্য ট্রেনে ৩-৪ জন করে দায়িত্ব পালন করেন। 

রেল পুলিশ
সীতাকুণ্ডে রেল পুলিশের সচেতনতামূলক কার্যক্রম। ছবি: সংগৃহীত

এছাড়া থানার অধীনে রেললাইনের আশেপাশের এলাকা, দুর্ঘটনার তদন্ত, মাদক উদ্ধার, চোরাকারবার রোধ, মরদেহ উদ্ধার, ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার মতো ঘটনা প্রতিরোধ থেকে শুরু করে অন্যান্য সাধারণ ফৌজদারি মামলার তদন্তও করতে হয় রেল পুলিশকে।

রেল পুলিশের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী তার এলাকায় জনবল সংকটের বিষয়টি মানতে নারাজ।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার এলাকায় যে ফোর্স আছে তা দিয়েই আমি ভালোভাবে কাজ চালাতে পারছি। আমাদের তেমন জনবল সংকট নেই।'

এদিকে একাধিক পুলিশ সদস্য এসপির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা ডেইলি স্টারকে জানান, জনবল সংকটের কারণে তারা নিয়মিত ছুটি ভোগ করতে পারেন না। এছাড়া ঈদ, পূজা-পার্বণে ট্রেনে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের। আবার আবাসন সংকটের ফলে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করলেও, পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পাওয়া যায় না।

তারা বলছেন, আবাসন সংকট ও যানবাহনের সংকটের ফলে অনেক সময় ভাড়া গাড়িতে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়। 

রেল পুলিশের সঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপির ২০২০ বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুসারে, রেল পুলিশের প্রধান সংকট হলো জনবল সংকট, পুলিশের থানা-ফাঁড়ির আবাসন সংকট, যানবাহনের অপ্রতুলতা, অপর্যাপ্ত নিরাপত্তা অবকাঠামো ও নিরাপত্তা সামগ্রী এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ সুবিধা ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব।

জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে রেল পুলিশ প্রধান বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. দিদার আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সারা বাংলাদেশে আমাদের ২ হাজার ১০০ জনের মতো পুলিশ সদস্য আছে এবং এটা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। জনবল সংকট থাকলেও যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা বিধানে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।'

তিনি বলেন, 'জনবল সংকটের কথা জানিয়ে ইতোমধ্যে আমরা পুলিশ সদর দপ্তরে ১ হাজার ৫০০ পুলিশ চেয়ে নতুন একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এটি এখন মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন হলে রেল পুলিশকে আমরা আবার নতুন করে সাজাবো।'

চট্টগ্রামকে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে সেখানে রেলের কয়েকটি প্রজেক্ট চলমান। এগুলো চালু হলে রেল পুলিশের ওপর চাপ আরও বাড়বে। তখন সীমিত জনবল দিয়ে এত বড় এলাকায় দায়িত্ব পালন করা কষ্টকর হয়ে যাবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Election in first half of April 2026

In his address to the nation, CA says EC will later provide detailed roadmap

1h ago