চসিকের হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর প্রতিবাদে শুক্রবার গণসমাবেশ

বন্দরনগরীর মনসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আশরাফ গত মাসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের নোটিশ পেয়ে অবাক হয়ে যান। ৬ তলা ভবনের মালিক আশরাফ আগে চসিককে বার্ষিক হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করতেন। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা, যা গত বছরের কর থেকে ৬ গুণ বেশি।
চসিক
চসিকের হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রতিবাদে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের বিক্ষোভ। ছবি: সংগৃহীত

বন্দরনগরীর মনসুরাবাদ এলাকার বাসিন্দা আবদুল্লাহ আশরাফ গত মাসে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধের নোটিশ পেয়ে অবাক হয়ে যান। ৬ তলা ভবনের মালিক আশরাফ আগে চসিককে বার্ষিক হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করতেন। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮১ হাজার টাকা, যা গত বছরের কর থেকে ৬ গুণ বেশি।

আশরাফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেছি হোল্ডিং ট্যাক্স ৬ গুণ বাড়ানোর কারণ কী? তিনি বললেন যে নতুন কর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে এই পরিমাণ কর এসেছে।'

'কীভাবে আমি হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ এত বড় অংকের কর পরিশোধ করব? ফ্ল্যাট থেকে ভাড়া বাবদ যে টাকা পাই, তা দিয়ে আমার সংসার চালাই,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমাকে যদি ৬ গুণ বেশি হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হয়, তবে আমাকে ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে। কিন্তু বর্তমান দ্রব্য মূল্যবৃদ্ধি পরিস্থিতিতে ভাড়াটিয়াদের পক্ষে অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়াও সম্ভব হবে না।'

আশরাফের মতো চট্টগ্রাম মহানগরীর অনেক বাসিন্দাই হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। তারা বলছেন, নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে হোল্ডিং ট্যাক্স ৬-১০ গুণ বাড়ানো হয়েছে।

বাকালিয়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক ডেইলি স্টারকে জানান, আগে তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ১৮ হাজার টাকা দিতেন। কিন্তু নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে তা বেড়েছে ৭ গুণ। 

'আমি চসিক কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা আমাকে আপিল করার পরামর্শ দিয়েছেন,' বলেন তিনি।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ২০১৭ সালে কর পুনর্নির্ধারণের উদ্যোগ নেন। 

এ উদ্যোগকে অযৌক্তিক উল্লেখ করে সে সময় বন্দরনগরীতে করদাতাদের সুরক্ষার জন্য নাগরিক মঞ্চ 'করদাতা সুরক্ষা পরিষদ, চট্টগ্রাম' নামে আন্দোলন শুরু হয় এবং এই উদ্যোগ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।

করদাতা
কাউন্সিলরদের স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার আগে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব আমির উদ্দিন ও অন্যান্যরা, ছবি: সংগৃহীত

আন্দোলন তীব্র হওয়ায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ওই বছর ১০ ডিসেম্বর হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির উদ্যোগ স্থগিত করে।

চসিক সূত্র জানায়, গত মাসে বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে।

এর পর আবারও আন্দোলন শুরু করে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ, চট্টগ্রাম।

আন্দোলনের অংশ হিসেবে সংগঠনটি নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার চসিকের ৭ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে স্মারকলিপি দেয়।

আগামী শুক্রবার বিকেলে বন্দরনগরীর কদমতলী মোড়ে গণসমাবেশেরও ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রামের করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আমির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে বন্দরনগরীর বাসিন্দারা যৌক্তিক পদ্ধতিতে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতেন। চসিকের একজন কর্মকর্তা ভবনের আকার, অবস্থান এবং মালিকের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে হোল্ডিং ট্যাক্স ঠিক করার জন্য বাড়ি বাড়ি  যেতেন। নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতিতে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে বাড়ি ভাড়ার ১৭ শতাংশ।'

তিনি বলেন, 'বাড়ির মালিক যদি ভাড়াটিয়া ছাড়া শুধু নিজেও বাড়িতে থাকেন তাহলেও তাকে বাড়ি ভাড়ার ১৭ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হবে।'

'আমি আমার নিজের বাড়িতে থাকি। আমি যদি বাড়ির ভাড়াটিয়া হতাম, তাহলে আমাকে মাসিক ভাড়া হিসেবে ২০ হাজার টাকা দিতে হবে, যা বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এখন আমাকে হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ ৩৪ হাজার টাকা দিতে হবে। কেমন অযৌক্তিক ব্যবস্থা,' বলেন তিনি।

আমির আরও বলেন, 'নতুন ব্যবস্থায় হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হলে বাড়ির মালিকদের দ্বৈত কর দিতে হবে। আমরা আয়কর দেই এবং বাড়ি ভাড়া থেকে উপার্জনকে মোট আয়ের মধ্যে গণনা করি। আমরা আমাদের মোট আয়ের ওপর কর দেই। এখন বাড়ি ভাড়ার ওপর ট্যাক্স দিতে হলে একই আয়ের জন্য দ্বৈত কর দিতে হবে।'

জানতে চাইলে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হোল্ডিং ট্যাক্স করদাতাদের জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। 'আমরা উচ্চ কর আরোপ করছি না। করদাতাদের আপিল করার সুযোগ আছে এবং যারা আপিল দাখিল করছেন, তারা আপিল বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ট্যাক্স নিয়ে সন্তুষ্ট।'

আপিলের বিষয়ে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সদস্য সচিব আমির জানান, তারা চান না করদাতারা অযৌক্তিক ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট সিস্টেমের বিরুদ্ধে আপিল করুক। বরং তারা চান এই অযৌক্তিক ব্যবস্থা বাতিল করা হোক।

তিনি বলেন, 'আপিলের ব্যবস্থা চসিকের এক শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য দুর্নীতির সুযোগ  ছাড়া কিছুই নয়।'

'বর্তমান মেয়র তার নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়াবেন না এবং করদাতাদের জন্য কর সহনীয় পর্যায়ে রাখবেন। তবে এখন তিনি তার প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। আমরা এই পদক্ষেপের প্রতিবাদে গণ সমাবেশের আয়োজন করব শুক্রবার,' বলেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে চসিক মেয়র রেজাউল ডেইলি স্টারকে জানান, কর যৌক্তিক ও সহনীয় পর্যায়ে রাখার প্রতিশ্রুতিতে তিনি এখনো অনড়।

তিনি বলেন, 'হোল্ডিং ট্যাক্সের সর্বশেষ মূল্যায়ন করা হয়েছিল ২০০৯ সালে এবং গত ১২ বছরে এটি পুনর্মূল্যায়ন করা হয়নি। প্রতি ৫ বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স পুনর্মূল্যায়নের বিধান আছে।'

'যেহেতু মূল্যায়ন ১২ বছর পর হচ্ছে, তাই কিছু সমস্যা থাকতে পারে এবং তাই আমরা আপিলের বিধান রেখেছি,' বলেন তিনি।

মেয়র আরও বলেন, 'যদি কোনো করদাতা আপিল বোর্ডে আসেন, তিনি অবশ্যই বোর্ড যে কর নির্ধারণ করবে, তাতে সন্তুষ্ট হবেন এবং এখানে দুর্নীতির  কোনো সুযোগ নেই। একটি বোর্ড পুরো বিষয়টি পর্যালোচনা করবে।'

Comments

The Daily Star  | English

The cost-of-living crisis prolongs for wage workers

The cost-of-living crisis in Bangladesh appears to have caused more trouble for daily workers as their wage growth has been lower than the inflation rate for more than two years.

1h ago