‘নিশ্চিত করে বলতে পারি বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিত হবে না’

এএনআইকে বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: এএনআই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফর করবেন। তার ভ্রমণসূচি অনুযায়ী, ৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় নয়াদিল্লি পৌঁছাবেন তিনি। ৬ সেপ্টেম্বর তার সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। একই দিন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন তিনি।

এই সফরের প্রাক্কালে ভারতীয় গণমাধ্যম এএনআই শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায়। ঢাকায় এসে এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এএনআইয়ের সম্পাদক স্মিতা প্রকাশ।

ইংরেজি সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করে দ্য ডেইলি স্টার বাংলার পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

এএনআই: শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনি অবগত। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি এড়াতে চীনের ঋণের ফাঁদসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের সচেতন হওয়া উচিৎ। আপনি কি এমন কোনো চ্যালেঞ্জ দেখতে পান?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: না, তেমন কিছু দেখি না। কারণ, এখনও আমাদের অর্থনীতি অনেক মজবুত। যদিও আমরা করোনা মহামারি মোকাবিলা করেছি, এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চলছে। এগুলোর প্রভাব বাংলাদেশে পড়েছে।

ঋণ পরিশোধের হিসাব করলে, বাংলাদেশ সব সময় ঠিক সময়ে ঋণ পরিশোধ করছে। যার ফলে শ্রীলঙ্কার তুলনায় আমাদের ঋণের হার খুবই কম। আমরা আমাদের অর্থনীতি খুবই পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। পরিকল্পিত অর্থনীতির কারণে আমরা শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে পড়ব বলে মনে করি না।

শুধু তাই নয়, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর আমি জনগণকে সতর্ক করেছি এবং তাদেরকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছি, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত। দেশের জনগণকে উৎসাহিত করছি, যত বেশি সম্ভব তারা যেন খাদ্য উৎপাদন করে। আমি সব সময় তাদের সহযোগিতা করছি যেন তারা নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করে, আমাদের যেন খাদ্যের জন্য আমদানির ওপর নির্ভর করতে না হয়। (ইউক্রেন-রাশিয়া) যুদ্ধ একটি খারাপ প্রভাব ফেলেছে। পুরো বিশ্বই এর কারণে অর্থনৈতিক চাপে পড়েছে, তেমনি আমরাও পড়েছি।

কিছু মানুষ এটা বলছে যে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যাবে, এমন অনেক কিছু। কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, তেমন কিছু হবে না। কারণ, আমরা আমাদের সব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সময় নিশ্চিত করি যে সেখান থেকে কতটা ফেরত পাব এবং জনগণ কীভাবে উপকৃত হবে। অন্যথায় শুধু টাকা খরচ করার জন্য কোনো প্রকল্প হাতে নেই না। আমরা টাকা খরচ করব, ঋণ নেব। কিন্তু, প্রকল্প শেষ হওয়ার পর কতটা ফেরত পাব, আমাদের অর্থনীতি কীভাবে এগিয়ে যাবে, জনগণের কী উপকার হবে— সেটাতেই আমাদের অগ্রাধিকার। সেভাবেই আমরা আমাদের প্রকল্প গ্রহণ করি। অপ্রয়োজনে কোনো টাকা খরচ করি না।

এএনআই: করোনা মহামারির কথা বলছিলেন। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ টিকার আওতায় এসেছে। 'ভ্যাকসিন মৈত্রী' প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ কীভাবে উপকৃত হয়েছে?

শেখ হাসিনা: আমি ধন্যবাদ দিতে চাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এমন একটি উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে টিকা প্রদানের যে উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন, তা খুবই সহযোগিতাপূর্ণ ছিল। এর পাশাপাশি আমরা নিজেদের টাকায় টিকা কিনেছি এবং অন্যান্য দেশও সহযোগিতা করেছে।

আমরা আমাদের জনগণকে টিকা নিতে উৎসাহিত করেছি। গ্রামে, এমনকি শহরাঞ্চলেও অনেককে আমি দেখেছি টিকা নিতে অনীহা প্রকাশ করেছে। তাদেরকে টিকা নিতে তাড়া দিয়েছি। তাদের বলেছি, এটা জীবন বাঁচাবে। নিঃসন্দেহে 'ভ্যাকসিন মৈত্রী' একটি ভালো উদ্যোগ।

এএনআই: পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মাঝে মাঝেই বলেন, সার্কের (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) সদস্যরা অন্যান্য গ্রুপের মতো নিজেদের সহযোগিতা করে না। কিন্তু ভ্যাকসিন মৈত্রী প্রকল্প, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের উদ্ধারসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পারস্পরিক সহযোগিতার কারণেই।

শেখ হাসিনা: এটা সত্য। আমি আবারও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। যুদ্ধের মধ্যে ইউক্রেনে অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী আটকে পড়ে, তারা পোল্যান্ডে যায়। ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের সময় তারা আমাদের শিক্ষার্থীদেরও নিয়ে এসেছে। এটা নিঃসন্দেহে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ।

এএনআই: বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরও পানি বণ্টনের বিষয়টি এলে একটি সমস্যা থেকেই যায়। এতো সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের পরও এই বিষয়ে অগ্রগতি ধীর। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে অনেক বছর বৈঠকও হয় না। এখন এই বিষয়ের সমাধান হতে পারে বলে মনে করেন কি?

শেখ হাসিনা: এটা দুঃখজনক বিষয়। আমরা ভাটির দেশ, পানি আসছে ভারত থেকে। ভারতের আরও বেশি উদারতা দেখানো উচিত। এর থেকে উভয় দেশেই উপকৃত হবে। কিছু কিছু সময় আমাদের জনগণ খুব বেশি ভোগে পানির অভাবে। বিশেষ করে তিস্তার পানির অভাবে আমরা চাষাবাদ করতে পারি না, আরও নানান ধরনের সমস্যা হয়। আমি মনে করি এই সমস্যার সমাধান দ্রুত হয়ে যাওয়া উচিত।

আমরা দেখেছি প্রধানমন্ত্রী (নরেন্দ্র মোদি) এই সমস্যা সমাধানে আগ্রহী, কিন্তু আপনাদের দেশেই সমস্যাটি রয়ে গেছে। আমরা আশা করি, এর সমাধান হয়ে যাবে।

শুধু মাত্র গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি আমরা করেছি। আমাদের আরও ৫৪টি নদী রয়েছে। কাজেই এটা অনেক বড় একটি বিষয় এবং এর সমাধান হওয়া জরুরি। আর এই সমস্যার সমাধার নির্ভর করছে ভারতের উপর।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus joins stakeholders’ dialogue on Rohingya crisis in Cox’s Bazar

The three-day conference began with the aim of engaging global stakeholders to find solutions to the prolonged Rohingya crisis

1h ago