করোনা ইমার্জেন্সি রেসপন্স প্রকল্পে ১৯৩ কোটি টাকার অডিট আপত্তি

কোভিড–১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রজেক্টের ২০১৯–২০২০ অর্থবছরের হিসাব নিরীক্ষা করে ১৯৩ কোটি টাকার আপত্তি দিয়েছে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয়। 
সিএজি

কোভিড–১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রজেক্টের ২০১৯–২০২০ অর্থবছরের হিসাব নিরীক্ষা করে ১৯৩ কোটি টাকার আপত্তি দিয়েছে মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) কার্যালয়। 

নিষ্পত্তি না হওয়ায় এসব আপত্তি জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার হিসাব কমিটিতে এসব আপত্তি নিয়ে আলোচনা হয়।

করোনাকালে জরুরিভিত্তিতে নেওয়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৩ বছর মেয়াদী এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের প্রথম অর্থবছরের যেসব অডিট আপত্তি এসেছে, সেগুলোর মধ্যে ১২টি আপত্তি নিষ্পত্তি হয়নি। সেগুলো আজ সংসদীয় কমিটিতে তোলা হয়।

অডিট আপত্তিতে বলা হয়, ব্যবহারের অনুপযোগী ২৪ হাজার পিস কেএন–৯৫ মাস্ক সরবরাহ করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সরবরাহকারী কেএন–৯৫ মাস্ক কম সরবরাহ করায় আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। 

৩২ কোটি ৮৫ লাখ ১০ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই), কেএন–৯৫ মাস্ক এবং ইনফ্রারেড থার্মোমিটার প্রাপ্তি ও সরবরাহে গরমিল পাওয়া গেছে নিরীক্ষায়।

আরও যেসব বিষয় নিয়ে আপত্তি এসেছে সেগুলো হলো-অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ সরবরাহকারীর সঙ্গে ৫৯ কোটি ৪০ লাখ টাকার চুক্তি করে পিপিই, মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস কেনা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় জরুরি পরিস্থিতিতে কেনা ৪৭ কোটি ২৬ লাখ ৪৪ হাজার টাকার চিকিৎসা সামগ্রী প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত করে অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলা রাখা হয়।

এছাড়া, একই ধরনের চিকিৎসা সামগ্রী একই সময়ে ভিন্ন ভিন্ন দামে কেনায় সরকারের ক্ষতি হয় ১৭ কোটি ১০ লাখ টাকা। সরবরাহকারীর কাছ থেকে ভ্যাট ও আয়কর না কাটা, কম কাটায় সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার ২৫৭ টাকা। ভ্যাট ও আয়করের টাকা নির্ধারিত সময়ে সরকারি কোষাগারে জমা না করায় দণ্ড সুদসহ সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৫ কোটি ৯২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। 

পিপিআর–২০০৮ এর বিধি লঙ্ঘন করে ১০ কোটি ৮২ হাজার ৬ লাখ টাকার কাজ জামানত ছাড়াই চুক্তি করা হয়। সিঙ্গেল সোর্স সিলেকশন পদ্ধতিতে পরামর্শক ফার্মের মাধ্যমে মোবাইল অ্যাপস, টিভিক্লিপ, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজে অনিয়মিতভাবে ৬ কোটি ১৮ লাখ ৪২ হাজার ৪৮০ টাকা ব্যয় করা হয়।

সরবরাহকারী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মালামাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিলম্ব জরিমানা ছাড়া বিল পরিশোধ করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৯২৮ টাকা।

ডিপিপিতে উল্লেখ করা দরের চেয়ে বেশি দামে চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় করায় সরকারের ক্ষতি হয়েছে ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস প্রকল্পের আওতায় সরবরাহকারী অনুপযোগী ও পরিমাণে কম কেএন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করায় আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে দুদকের মাধ্যমে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে কমিটি থেকে সুপারিশ করা হয়।

অযোগ্য ও অনভিজ্ঞ সরবরাহকারীর সঙ্গে চুক্তি করে পিপিই, মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস কেনার বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ডিজি হেলথ এবং সিএজির পরিচালককে কমিটি গঠন করে তদন্ত করতে সংসদীয় কমিটি সুপারিশ করে।

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ওই প্রকল্পের পিপিই, মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস সরবরাহের জন্য মেসার্স জাদিদ অটোমোবাইলস জেএআইয়ের সঙ্গে ৯০ লাখ টাকার চুক্তি করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির দেড় লাখ পিস কেএন–৯৫ মাস্ক সরবরাহ করার কথা।

এর মধ্যে সরকারের কেন্দ্রীয় ঔষধাগার (সিএমএসডি) ২৪ হাজার পিস মাস্ক ভেজা অবস্থায় গ্রহণ করেছে। প্রতিটি মাস্কের দাম পড়েছিল ৫২০ টাকা। সে হিসেবে এখানে সরকারের ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

Comments