নাটোরে উদ্বোধনের আগেই ধসে গেছে জেলা সড়কের ১৫০ মিটার ঢাল

নাটোরের সড়কুতিয়া-শেরকোল জেলা সড়কের পাশ থেকে মাটি কেটে রাস্তা প্রশস্ত করায় বারবার ধসে যাচ্ছে সড়কের ঢালের বিভিন্ন অংশ।
নাটোর সড়ক
নাটোরের সড়কুতিয়া-শেরকোল জেলা সড়কের ভুষনগাছা এলাকা। ১ সেপ্টেম্বর ২০২২। ছবি: স্টার

নাটোরের সড়কুতিয়া-শেরকোল জেলা সড়কের পাশ থেকে মাটি কেটে রাস্তা প্রশস্ত করায় বারবার ধসে যাচ্ছে সড়কের ঢালের বিভিন্ন অংশ।

এ বছর ভারি বর্ষণ ও বন্যা না হওয়ার পরও ভুষনগাছা এলাকায় প্রায় ১০০ মিটার ও আঁচড়াখালি এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার সড়কের ঢাল ধসে গেছে।

উদ্বোধনের আগেই দ্বিতীয়বারের মতো ধসে গেল ভুষনগাছা এলাকায় সড়কের প্রায় ১০০ মিটার ঢাল। গত বছর আগস্টে নির্মাণ চলাকালে প্রথমবার সড়কের এই অংশটি ধসে পড়েছিল।

সড়কটি প্রশস্তকরণের কাজে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।

নাটোর সড়ক
ছবি: স্টার

এমনকি, বসতবাড়ির ভেতরে গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। যারা মাটি কাটতে দেননি তাদের দিতে হয়েছে মাটির দাম।

নলডাঙ্গা উপজেলার আঁচড়াখালি গ্রামের সাহাদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঠিকাদারের লোকেরা ভেকু দিয়ে রাস্তার পাশ থেকে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে জোর করে মাটি কেটেছে।'

তার অভিযোগ, 'কেউ তাদের জমি থেকে মাটি কাটতে না দিলে দিতে হয়েছে মাটির দাম।'

তিনি মনে করেন, রাস্তার পাশ থেকে মাটি কেটে সড়ক নির্মাণ ও প্রশস্তকরণ করায় এমন ধস হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষের জমি কেটে তাদের ক্ষতি করা হয়েছে, অন্যদিকে এ কাজ টিকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

আঁচড়াখালি গ্রামের সোহরাব হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঠিকাদার বাড়ির ভিটা থেকে মাটি কেটে নিতে চান। মাটি কাটতে দিতে না চাইলে স্থানীয় মেম্বার ও রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, মাটি কাটতে না দিলে ভেকুর ভাড়া হিসেবে ঘণ্টা প্রতি ৫ হাজার টাকা করে দিতে হবে।'

'উপায় না দেখে মাটির খরচ বাবদ ঠিকাদারের লোকদের ১৪ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছি,' যোগ করেন তিনি।

সিংড়া উপজেলার বড়বাড়ি গ্রামের সাহেদা বেগম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঠিকাদারের লোকেরা রাস্তার জন্য বসতবাড়ির ভেতর থেকে মাটি কেটে নিয়েছে। অনুরোধ করেও প্রতিকার হয়নি। স্থানীয় মেম্বার ও সরকারি দলের নেতাদের বলেছি। তারা বলেছেন, মাটি না কাটতে দিলে টাকা দিতে হবে। টাকা দিতে পারিনি। তাই বাড়ির ভেতর থেকে মাটি কাটতে দিতে হয়েছে।'

নাটোর সড়ক
নাটোরের সড়কুতিয়া-শেরকোল জেলা সড়কের আঁচড়াখালি এলাকা। ১ সেপ্টেম্বর ২০২২। ছবি: স্টার

একই গ্রামের বাদেশ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কালীগঞ্জ থেকে শেরকোল পর্যন্ত পুরো রাস্তার ২ ধারে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে রাস্তার ওপর ফেলা হয়েছে। যেখানে বাড়িঘর পড়েছে তাদের কাছ থেকে মাটির দাম নিয়ে ঠিকাদার বাইরে থেকে মাটি এনে ফেলেছে।'

ওই এলাকার অজুফা বেগম, মফিজ উদ্দিন, পাঞ্জাব আলীসহ অনেকেই একই অভিযোগ করেছেন।

নাটোরের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঠিকাদারেরা সড়কের পাশ থেকে মাটি কেটেছে কি না তা জানা নেই। তবে মাটির জন্য আলাদা বরাদ্দ ছিল। বাইরে থেকে মাটি কিনে কাজ করার কথা।'

'ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে মাটির কাটার অভিযোগ পাইনি' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'মেসার্স মইনউদ্দিন বাশী ও মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজের বরাদ্দ পাওয়া কাজ স্থানীয়ভাবে করেছেন ঠিকাদার আশফাকুল ইসলাম।'

সড়কে ধসের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে দাবি করে তিনি বলেন, 'ঠিকাদারের ডিফেক্ট লায়াবেলিটি চলমান আছে। ধসে যাওয়া অংশ ঠিকাদার সংস্কার করে দেবে।'

সড়কের পাশ থেকে মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করে ঠিকাদার আশফাকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাটির কাজের জন্য অন্য ঠিকাদারকে সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছি। মাটির কাজ পাওয়া ঠিকাদার সড়কের পাশ থেকে মাটি কেটে এমনভাবে সড়কে ফেলেছে যে স্লপ নির্মাণ করা যাচ্ছিল না। সেই চুক্তি বাতিল করে এখন নিজেরা মাটি ভরাটের কাজ করছি।'

সড়কে ধসের বিষয়ে তিনি বলেন, 'ধসে যাওয়া অংশ সড়ক ও জনপথ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী সংস্কার করা হয়েছে। ধসে যাওয়ার দায় আমাদের নয়।'

ধসের জন্য সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের দায়ী করে তিনি বলেন, 'সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই সড়কের কাজের এস্টিমেট ঠিকমতো করতে পারেনি। সড়কের স্লপ নির্মাণের জন্য পাইলিং করতে হতো। তারা তা করেনি।'

সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধের ওপর সিংড়া উপজেলার শেরকোল থেকে নলডাঙ্গার সরকুতিয়া পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সিঙ্গেল লেন সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে।

প্রায় ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ প্যাকেজে ৩টি কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস মইনউদ্দিন বাশী (১২ কিলোমিটার), মের্সাস মোজাহার এন্টারপ্রাইজ (৭ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার) ও মের্সাস হাবিবুল আলম অ্যান্ড রানা বিল্ডারস লিমিটেড (৭ দশমিক ২৫ কিলোমিটার)।

Comments