‘প্রীতমের পুরোনো পোস্ট চা শ্রমিকদের আন্দোলনের সময় ভাইরাল করে ছাত্রলীগ’

প্রীতম দাশ। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের দুর্দশা নিয়ে লেখক সাদাত হোসেন মান্টোর একটি উক্তি ফেসবুকে পোস্ট করায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রীতম দাশকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

এদিকে মান্টোর উদ্ধৃতি নিয়ে গত ২৮ জুলাই সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ছেলে এবং মৌলভীবাজার-২ আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমান নামের ফেসবুক পেজ থেকেও একই স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিল। তবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠে কেবল প্রীতমের বিরুদ্ধে।

প্রীতমের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছিলেন স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মী মাহবুব আলম ভুঁইয়া। সে মামলায় শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রীমঙ্গল শহরের একটি বাড়ি থেকে প্রীতমকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শ্রীমঙ্গল থানার ওসি (পরিদর্শক-তদন্ত) হুমায়ুন কবির জানান, গত ৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি করা হয়। জনপ্রিয় লেখক মান্টোর একটি উক্তি গত ৮ জুলাই ফেসবুকে পোস্ট করেন প্রীতম তার প্রেক্ষিতেই মামলা হয়েছে। 

আগের দিন ৭ জুলাই একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনও 'নও পাকিস্তানি নও বাংলাদেশ' শিরোনামের একটি লেখায় পাকিস্তানের দুর্দশার বর্ণনা করতে গিয়ে মান্টোর ওই উদ্ধৃতি ব্যবহার করেন।

সেই লেখা থেকে নেওয়া মান্টোর উদ্ধৃতি নিয়ে পোস্ট করেছিলেন প্রীতম।

শুরুতে প্রীতমের বিরুদ্ধে 'ধর্ম অবমাননার' অভিযোগ তোলেন শ্রীমঙ্গল পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেন। তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন তিনি। সেই পোস্ট ভাইরাল হলে শ্রীমঙ্গলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেন গত ২৯ আগস্ট নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্ট দেন।

২৯ আগস্ট প্রীতমের পোস্টের স্ক্রিনশট যুক্ত করে আবেদ লেখেন , 'আমি তার ফেসবুকে ৭ জুলাইয়ের একটি পোস্টের স্ক্রিনশট দিলাম যেখানে সে দেশের অবস্থা নাজেহাল বুঝাতে গিয়ে আমাদের ইসলাম ধর্মকে ব্যঙ্গ করে, জুমার নামাজ, মসজিদের ইমাম এবং নামাজ পরাকে ব্যঙ্গ করেছে।'

আবেদ আরও লেখেন, 'আমি শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন ও শ্রীমঙ্গল থানার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই এ ধরনের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে যারা পবিত্র ধর্ম নিয়ে উস্কানিমূলক কথা বলে তাদেরকে অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে তারা কার এজেন্ডা বাস্তবায়নে করতে চায় তা বের করা দরকার।'

আবেদের এই স্ট্যাটাসের পর তার অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীসহ আরও অনেকে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। 

এরপর ৩১ আগস্ট প্রীতম দাশকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে 'শ্রীমঙ্গলের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতা'। সেই মিছিল থেকে প্রীতমকে গ্রেপ্তারে শুক্রবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল।

এদিকে, সম্প্রতি চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে যুক্ত থাকায় প্রীতমের পুরনো একটি স্ট্যাটাস নিয়ে শ্রীমঙ্গলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে উসকানি ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে ২৭ আগস্ট শ্রীমঙ্গলে সমাবেশ করে 'রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন' সংগঠনটি। শ্রীমঙ্গলে চৌমোহনা চত্বরে আয়োজিত এ সমাবেশে সেদিন হামলার ঘটনা ঘটে। 

স্থানীয় ছাত্রলীগের একটি অংশ এ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করেন আয়োজকরা।

প্রীতম দাশ 'রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন'-এর কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। হামলার পর ২৯ ও ৩০ আগস্ট শ্রীমঙ্গলে দুটি সংবাদ সম্মেলন করে 'রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন'। সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়েন প্রীতম দাশ।

এতে তিনি অভিযোগ করেন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবেদ হোসেনের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা সমাবেশে হামলা চালায়। এতে প্রায় ১০ জন কর্মী আহত হন।

এই সংবাদ সম্মেলনের পর পরই ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে প্রীতমের বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দেন আবেদসহ অন্যরা।

৩০ আগস্ট সংবাদ সম্মেলন শেষে প্রীতম দাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চা শ্রমিকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে আমাদের সমাবেশে আবেদের নেতৃত্বে হামলা করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আমি তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছিলাম। সে কারণে সে ক্ষুব্ধ হয়ে আমার নামে মিথ্যা প্রচার চালিয়ে উস্কানি ছড়াচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English
education in Bangladesh

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

13h ago