প্রীতম দাশের মুক্তি চেয়ে ৪৯ নাগরিকের বিবৃতি

প্রীতম দাশ। ছবি: সংগৃহীত

'রাষ্ট্র ও ধর্ম অবমাননার' অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন'র সদস্য প্রীতম দাশের নিঃশর্ত মুক্তি চেয়েছেন দেশের ৪৯ নাগরিক।

আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি যে, একদিকে রাষ্ট্র ভিন্নমত দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো চরম সমালোচিত এবং কুখ্যাত আইনকে ব্যবহার করছে, অন্যদিকে দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে সমাজের ভেতর সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরিতে ক্ষমতাসীনরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। ক্ষমতাসীনদের এমনতর কর্মকাণ্ড সমাজের ভেতর এক ভয়াবহ ফাটল ও অস্থিরতা তৈরি করছে বলে আমরা মনে করি।'

এ অবস্থায় বিবৃতিতে অবিলম্বে প্রীতম দাশসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্য বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো 'নিপীড়নমূলক' আইনগুলো বাতিল করে বাকস্বাধীনতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়।

বিবৃতিদাতারা হলেন- অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও আইনুন নাহার, আইনুন নাহার, , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা ঋতু, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা, সাংবাদিক ও গবেষক সাইদিয়া গুলরুখ, নারীনেত্রী ফরিদা আখতার, নারীপক্ষ'র সদস্য শিরিন হক, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বেলা'র প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী মো. নুর খান লিটন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী, লেখক ও রাজনৈতিক কর্মী বাকি বিল্লাহ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক দিলীপ রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নজির আমিন জয় ও সহসভাপতি অনিক রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আরিফ মাইনুদ্দিন, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিয়া প্রিয়া, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি সুনয়ন চাকমা, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের সহ সাধারণ সম্পাদক অভিনু কিবরিয়া, সংস্কৃতিকর্মী বীথি ঘোষ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম সবুজ, , সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সহসভাপতি তবারক হোসাইন, লেখক ও গবেষক ফাহমিদুল হক, গবেষক হানা শামস আহমেদ, চিকিৎসক অধ্যাপক হারুণ অর রশিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, অধ্যাপক, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক বীণা ডি কস্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, মানবাধিকারকর্মী রোজিনা বেগম, আলোকচিত্রী ও শিক্ষক জান্নাতুল মাওয়া, বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল নোমান, সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন, কবি রহমান মুফিজ, লেখক ও সাংবাদিক ফারুক ওয়াসিফ, কবি ও সাংবাদিক সৈকত আমিন, গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সহকারী অধ্যাপক মনিরা শরমিন, বহ্নিশিখা'র প্রতিষ্ঠাতা তাসাফি হোসেন, উন্নয়নকর্মী ফেরদৌস আরা রুমী, মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন, কোস্টবিডি'র রেজাউল করিম চৌধুরী এবং গ্রীণ ভয়েস'র কো-অর্ডিনেটর আলমগীর কবির।

বিবৃতিদাতারা বলেন, 'মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চা-শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গত ২৭ আগস্ট "রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন" শ্রীমঙ্গলে সমাবেশ করলে সেখানে স্থানীয় ছাত্রলীগের একাংশ হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে ২৯ ও ৩০ আগস্ট শ্রীমঙ্গলে দুটি সংবাদ সম্মেলন করে "রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন" হামলাকারীদের বিচার দাবি করে। প্রীতম দাশ সে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েছিলেন। উক্ত সংবাদ সম্মেলনের পরপর স্থানীয় ছাত্রলীগ কর্মীরা প্রীতম দাশের পুরোনো ফেসবুক স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট ভাইরাল করে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীনভাবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনে।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'প্রীতম দাশের ফেসবুকে শেয়ারকৃত বিখ্যাত উর্দু সাহিত্যিক সাদাত হোসেন মান্টোর একটি উদ্ধৃতিকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ছাত্রলীগ একটি সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। উল্লেখ্য, প্রীতমের আগে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ও সাবেক সংসদ সদস্য এম নাসের রহমানসহ অনেকেই এই উদ্ধৃতিটি প্রচার করেছেন।

'পরবর্তীতে স্থানীয় মসজিদসমূহের ইমাম এবং স্থানীয় সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেই সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রতিরোধ করা গেলেও প্রীতম দাশকে নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে উল্টো তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ভিন্নমত ও আন্দোলন দমানোর জন্য সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং সেটা ভণ্ডুল হয়ে গেলে ডিজিটাল নিরাপত্তার আইনের মতো নিপীড়নমূলক আইনের মাধ্যমে হয়রানি করার এমন নগ্ন নজিরে আমরা উদ্বিগ্ন।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Divisions widen over July Charter’s status, implementation

Major political parties are divided over the July Charter’s implementation timeline

11h ago