ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব

প্রধানমন্ত্রী
জাতিসংঘে গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের (জিসিআরজি) গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ৬ দফা প্রস্তাব দেন। ছবি: বাসস

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক সংহতির আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতি বিপর্যস্তের পাশাপাশি করোনা মহামারি কাটিয়ে ওঠা ও এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের এই রক্তক্ষয়ী ও বিপর্যয়কর সংকটের অবসানের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে মানুষকে গভীরভাবে আঘাত করছে। বিশেষ করে, সরাসরি সংঘাতের সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এবং উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত বিশ্বের মানুষকে বেশি আঘাত করছে।'

গতকাল বুধবার গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ (জিসিআরজি) চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের আয়োজনে গোলটেবিল বৈঠকে চলমান যুদ্ধ বন্ধে ৬ প্রস্তাব উত্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের অব্যাহত ও প্রসারণশীল প্রভাব এবং যুগপৎ অন্যান্য সংকট আমাদের সমাজ ও অর্থনীতিতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে এটি উন্নয়নশীল দেশগুলো এবং আমাদের কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার প্রচেষ্টা ও এসডিজি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় অনেক নতুন চ্যালেঞ্জ যুক্ত করেছে।'

'তবু কোনো দেশ একা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে না। এই মুহূর্তে আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও বৈশ্বিক সংহতি। আমি এ বিষয়ে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট চিন্তা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই,' যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে বৈশ্বিক আর্থিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলা করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'জি-৭, জি-২০, ওইসিডি, আইএফআই ও এমডিবিকে এখন তাৎক্ষণিক উদ্বেগগুলো মোকাবিলার প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে এসডিজি অর্থায়নের অভাব, সীমিত আর্থিক সংস্থান, ক্রমহ্রাসমান ওডিএ ও ঋণ পরিষেবা।'

তিনি বলেন, 'দ্বিতীয়ত, মহাসচিব ব্ল্যাক সি গ্রেইন উদ্যোগ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আপনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য আমরা আপনাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা সংঘাতের সময় খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থাকে ক্ষতির হাত থেকে দূরে রাখার জন্য ভবিষ্যতের যে কোনো উদ্যোগকে সমর্থন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'

তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সাহসী ও ব্যাপক উদ্যোগের প্রয়োজন এবং বিশ্ব বাণিজ্য ও রপ্তানি আয়ে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ন্যায্য অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা অপরিহার্য।

প্রধানমন্ত্রী তার চতুর্থ প্রস্তাবে বলেন, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এবং কার্যকর খাদ্য সংরক্ষণ ও বিতরণ ব্যবস্থার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর কৃষিখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

তিনি আরও বলেন, 'নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি করতে প্রযুক্তি সহায়তা, বর্ধিত ওডিএ এবং রেয়াতি অর্থায়নের লক্ষ্যে আমাদের আরও জি২জি ও বি২বি সহযোগিতার প্রয়োজন।'

পঞ্চমত, তিনি বলেন, জলবায়ু সহযোগিতার জন্য বৈশ্বিক কাঠামোকে আরও কার্যকর এবং ন্যায্য করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের আসন্ন কপ-২৭ এর সুযোগটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর উদ্বেগ নিরসনে কাজে লাগানো উচিত। আমরা অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে চাই যাতে সার্বিক উপায়ে জ্বালানি নিরাপত্তার সমস্যা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় উদ্দীপনা সৃষ্টি করা যায়।'

প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে তার নিরন্তর প্রচেষ্টার জন্য অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে, তার প্রচেষ্টায় কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তিনি আশা করেন, শিগগির এ ব্যাপারে পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছা যাবে।

তিনি বলেন, 'আমরা সে লক্ষ্যে আপনার প্রচেষ্টা জোরদার করতে আপনার নির্দেশনার ওপর আস্থা অব্যাহত রাখব।'

প্রধানমন্ত্রী সংকট মোকাবিলায় জাতিসংঘের ব্যবস্থাকে গতিশীল করার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'আমাদের সামনে উত্থাপিত ৩টি নীতি গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্দেশনা দেয় এবং আমরা এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে সঠিক নীতি বিকল্পগুলো সামনে আনতে অন্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।'

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট রাজস্ব ও আর্থিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

'আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচিগুলো বহুগুণে সম্প্রসারিত করা হয়েছে' উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'কৃষি, এমএসএমই এবং অন্যান্য দুর্বল খাতগুলোর জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের জ্বালানি উৎসগুলোর ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অংশ বাড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি।'

Comments

The Daily Star  | English
Rohingyas hurt in clash in Teknaf

Bangladesh-Myanmar border: Landmine-related injuries on the rise

Having lost her right leg in a landmine explosion, Nur Kaida, a 23-year-old Rohingya woman, now feels helpless at a refugee camp in Teknaf.

11h ago