তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে মানসিকতা পরিবর্তনের আহ্বান টিআইবির
তথ্য অধিকার আইনের সর্বোত্তম প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ও মানসিকতার পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০২২ উদযাপনের অংশ হিসেবে টিআইবি ও কাপেং ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আজ মঙ্গলবার এ কথা জানান তিনি।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা ও নির্ভরযোগ্য গবেষণা থেকে দেখা যায়, যে দেশে যত বেশি তথ্যের অবাধ প্রকাশ নিশ্চিত করা যায়, সে দেশে তত বেশি মানবাধিকার সুরক্ষা, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি অর্জিত হয়। আমাদের দেশে আইনটি প্রণয়নের মাত্র ১৩ বছরে দীর্ঘকালের লালিত গোপনীয়তার সংস্কৃতি থেকে উত্তরণ করে স্বচ্ছতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে, সে আশা করা দুরূহ। কেননা, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মতো আইনের মাধ্যমে আমাদের দেশে ঔপনিবেশিককালের গোপনীয়তার সংস্কৃতি এখনও সরকারের একটি অংশের মধ্যে রয়ে গেছে। যদিও তথ্য অধিকার আইনের ফলে এ আইনের বিলুপ্তি হওয়ার কথা ছিল। তথ্য অধিকার আইনের সর্বোত্তম প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপযুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ও মানসিকতার পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য, তথ্য প্রদান ও প্রকাশের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তথ্য প্রকাশের মানসিকতা সৃষ্টিতে উদ্যোগী হতে হবে। একইসঙ্গে, তথ্য অধিকার আইন ও তথ্য চাওয়ার প্রক্রিয়া সর্ম্পকে জনসাধারণকে বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন ও সক্রিয় অনুঘটক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।'
টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় পার্বত্য চট্টগ্রামের ২৫ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তরুণকে 'তথ্য অধিকার আইন ২০০৯' সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি তথ্যপ্রাপ্তির আবেদন প্রক্রিয়া ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করা হয়। সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার ও দৈনিক আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক গোলাম রহমান ও আইনজীবী রুহি নাজ কর্মশালাটি পরিচালনা করেন।
বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইনের সক্রিয় অংশীজন হিসেবে ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর টিআইবি আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উদযাপন করে আসছে।
তথ্য অধিকার দিবস ২০২২ উপলক্ষে প্রণীত ধারণাপত্রেও বেশ কিছু আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
এর মধ্যে আছে - কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতে কার্যকর নীতি কৌশল জরুরি ভিত্তিতে প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; তথ্য প্রকাশ ও তথ্যে অভিগম্যতার সুবিধার্থে ডিজিটাল টুলসের ব্যবহার বৃদ্ধিতে মনোযোগী হওয়া; তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯- এর পরিপন্থী বিদ্যমান আইন সংস্কার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে বাতিল করা, যেমন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ৩২ ধারাসহ বাক-স্বাধীনতা পরিপন্থী অন্যান্য ধারা; নতুন কোনো আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকারের মূল চেতনার পরিপন্থী বা আইনটির কার্যকর বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো ধারা যাতে সংযোজিত না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা; প্রাতিষ্ঠানিক স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের কার্যকরতা বৃদ্ধিতে তথ্য কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা ইত্যাদি ।
Comments