৯ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ৫৮, আহত ৫ হাজার ৪০০: আসক

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে দেশে রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ৩৮৭টি। এতে নিহত হয়েছেন ৫৮ জন ও আহত হয়েছেন প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জন।

আজ শুক্রবার মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রকাশিত গত ৯ মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতির পরিসংখ্যানগত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বছরের প্রথম ৯ মাসের রাজনৈতিক সহিংসতার তথ্য বিশ্লেষণ করে আসক জানায়, স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক কারণে দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সবকটিতেই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সহিংসতার সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লায়।

কুমিল্লা জেলায় গত ৯ মাসে ২৫টি সহিংসতার ঘটনায় ২ জনের মৃত্যুসহ ২৫৬ জন আহত হয়েছেন। চট্টগ্রামে ২৩টি ঘটনায় ৬ জন নিহত এবং ৩০২ জন আহত হয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ, বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এ ৯ মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, অপহরণ ও রহস্যজনক নিখোঁজ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে হয়রানি, সীমান্তে নির্যাতন ও হত্যাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে বলে উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। 

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও হেফাজতে মৃত্যু

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে আসক জানায়, গত ৯ মাসে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৯ জন পুলিশ কর্তৃক এবং ৫ জন র‌্যাব কর্তৃক এবং ১ জন ডিবি পুলিশ কর্তৃক নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ৩ জন, শারীরিক নির্যাতনে ৭ জন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ১ জন, অসুস্থ হয়ে ৩ জন মারা যান। এছাড়া হেফাজতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ১টি।
 
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ

পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীর অভিযোগ অনুযায়ী, সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে ৪ জনকে অপহরণের খবর পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১ জন ফেরত এসেছেন এবং ১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ২ জন এখনো নিখোঁজ আছেন। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। 

ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন 

এ সময়ের মধ্যে ২টি ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ৪টি বাড়ি-ঘরসহ ৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে নড়াইল জেলায় হামলার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্য।

সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি

গত ৯ মাসে ১৭৯ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়েছেন অন্তত ৬৬ জন সংবাদকর্মী। দুর্বৃত্তদের গুলিতে কুমিল্লায় নিহত হয়েছেন ১ জন সাংবাদিক।

নারীর প্রতি সহিংসতা

গত ৯ মাসে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন ২০৯ জন নারী-পুরুষ। তাদের মধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন ১৩৬ জন নারী ও ৭৩ জন পুরুষ। বখাটেদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন ১২০ জন, বখাটেদের সঙ্গে সংঘাতে আহত হয়েছেন ৭৪ জন। যৌন হয়রানির কারণে ৭ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন।

একই সময়ে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ৭৩৪ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৪ নারীকে। এছাড়া ১২৮ জন নারী ধর্ষণচেষ্টার শিকার হয়েছেন।

এ সময়ে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৩৬৭ জন নারী। তাদের মধ্যে ২২৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৬৭ জন নারী। এছাড়া শারীরিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৭২ জন নারী। 

যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ১৪৮ জন নারী। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৬৯ জনকে এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৬ জন নারী। তাদের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৬২ জন। 

এ সময়কালে মোট ১৯ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এসিড হামলার শিকার হয়েছেন মোট ১১ জন নারী। তাদের মধ্যে ৩ জন মারা গেছেন।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ধর্ষণের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের প্রায় সবকয়টি জেলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায় ৬৪, নারায়ণগঞ্জে ৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।

শিশু নির্যাতন ও হত্যা  

দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ৯ মাসে মোট ১ হাজার ২৭৮ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। তাদের মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ২৪০ জন শিশু, আত্মহত্যা করেছে ৪৪ শিশু, বিভিন্ন সময়ে মোট ৯১ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ সময় ঢাকায় ৫৪, নারায়ণগঞ্জে ২৪, গাজীপুরে ২১, কুমিল্লায় ১৬ এবং চট্টগ্রামে ১৫ শিশু নিহত হয়েছে। 

সীমান্ত সংঘাত

সীমান্তে বিএসএফের গুলি, নির্যাতন ও ধাওয়ায় নিহত হয়েছেন ১২ বাংলাদেশি নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছেন ৭ জন ও অপহরণের শিকার হয়েছেন ৮ জন।

কারা হেফাজতে মৃত্যু 

৯ মাসে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৫৪ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২০ জন এবং হাজতি ৩৪ জন।

গণপিটুনিতে নিহত 

গত ৯ মাসে গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হন মোট ২৮ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৫ জন নিহত হন। 

Comments

The Daily Star  | English

In coffins, from faraway lands

Kazi Salauddin, a 44-year-old man from Cumilla, migrated to Saudi Arabia in October 2022, hoping to secure a bright future for his family. But barely a year later, Salauddin, the father of two daughters and a son, died suddenly.

6h ago