বাংলাদেশ

ঢাকের হাট জমজমাট

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজা মণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগামীকাল শনিবার ষষ্ঠী তিথিতে হবে দেবীর বোধন। এই মহাষষ্ঠীতে প্রতিমার আসনে প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে বিসর্জন—সবখানেই অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হলো ঢাকের বাজনা।
কটিয়াদীর এই ঢাকের হাটের বয়স ৪০০ বছরের বেশি। ছবি: সংগৃহীত

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে পূজা মণ্ডপগুলোতে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আগামীকাল শনিবার ষষ্ঠী তিথিতে হবে দেবীর বোধন। এই মহাষষ্ঠীতে প্রতিমার আসনে প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে বিসর্জন—সবখানেই অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হলো ঢাকের বাজনা।

দুর্গোৎসব ঘিরে এই বাদ্য বাজানো ঢাকিদের কদর ও চাহিদা থাকে তুঙ্গে। পূজা শুরুর আগ থেকেই ঢাকিরা সাধারণত ব্যক্তিগত যোগাযোগের ভিত্তিতে সারাদেশের মণ্ডপগুলোতে ছড়িয়ে পড়েন। তবে অনেক জায়গার পূজারিরা হাটে গিয়ে দরদাম করে ঢাকিদের নিয়ে আসেন। প্রায় ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার পুরান বাজার এলাকায় ব্যতিক্রমী এই হাট বসে।

প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বসেছে কটিয়াদীর ঢাকের হাট। চলবে আগামীকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত।

কোন ঢাকির দলের মূল্য কত- তা নির্ধারিত হয় ঢাকিদের দক্ষতার ওপর। ছবি: সংগৃহীত

হাটে কোন ঢাকির দলের মূল্য কত- তা নির্ধারিত হচ্ছে ঢাকিদের দক্ষতার ওপর। এই দক্ষতা যাচাই করছেন বিভিন্ন এলাকার পূজা কমিটির কর্তারা। ঢাক-ঢোলের পাশাপাশি কাঁসর, সানাই, বাঁশি, করতাল ও খঞ্জরির মতো যন্ত্রের বাজনায় মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। ৩০ হাজার টাকা থেকে থেকে ২ লাখ টাকায় মিলছে এসব বাদকদল।

জনশ্রুতি আছে যে, ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় তার কটিয়াদীর চারিপাড়া গ্রামের রাজপ্রাসাদে দুর্গাপূজার আয়োজন করতেন। একবার রাজা নবরঙ্গ রায় সেরা ঢাকিদের সন্ধান করতে ঢাকার বিক্রমপুরের (বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ) বিভিন্ন জায়গায় আমন্ত্রণ জানিয়ে বার্তা পাঠান।

সে সময় নৌপথে অনেক ঢাকির দল পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাটে সমবেত হন। রাজা নিজে দাঁড়িয়ে একে একে বাজনা শুনে সেরা দলটি বেছে নেন এবং পুরস্কৃত করেন। সেই থেকে যাত্রাঘাটে এই ঢাকের হাটের প্রচলন শুরু হয়। পরে এ হাট স্থানান্তর করে কটিয়াদীর পুরাতন বাজারের মাছ মহাল এলাকায় আনা হয়।

ঢাক-ঢোলের পাশাপাশি কাঁসর, সানাই, বাঁশি, করতাল ও খঞ্জরির মতো যন্ত্রের বাজনায় মুখর হয়ে উঠেছে মেলা প্রাঙ্গণ। ছবি: সংগৃহীত

এবারও কিশোরগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নরসিংদী ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকীরা এসেছেন এই হাটে ।

সুনামগঞ্জ থেকে দল নিয়ে আসা সুকুমার দাস জানান, এটা তাদের বংশগত পেশা। প্রতি বছর তিনি তার দল নিয়ে এই হাটে আসেন। এ বছর গত বছরের চেয়ে ভালো বায়না পাওয়া যাচ্ছে । 

বাদ্যদল বায়না করতে আসা আভিলাষ মজুমদারের অভিমত, এবার ঢাকিদের 'রেট' একটু বেশি।

কটিয়াদী উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও ঢাকের হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য বেণী মাধব ঘোষের বক্তব্য, প্রতি বছর দুর্গাপূজার আগে ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকের হাট বাঙালির মিলনমেলায় পরিণত হয়।

Comments