কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর ঢাকের হাট, যেখান থেকে সারা দেশে যান ঢাকি-বাদকরা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে প্রতিবছর ঢাক-ঢোল ও বাদ্যযন্ত্রের হাট বসে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে।

ঢাক-ঢোল ছাড়াও নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র ওঠে এই হাটে। বাদকরা অর্থের বিনিময়ে শুধু পূজা চলাকালীন বিভিন্ন এলাকার মণ্ডপের বাজাতে আয়োজকদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন।

চুক্তিমূল্য কত হবে, তা নির্ধারণ হয় ঢাকিদের দক্ষতার ওপর। পূজা উদযাপন কমিটির কর্তারা যাচাই করে নেন ঢাকিদের দক্ষতা।

দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাদক দল ভাড়া করতে ভিড় করেন বিভিন্ন এলাকার পূজারীরা। তাদের নিরাপত্তায় সতর্ক ভূমিকা পালন করে এলাকাবাসী ও পুলিশ।

এবারও গত সোমবার শুরু হয় ঢাকের হাট। বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে ঢাকি ও অন্যান্য বাদকরা চুক্তিবদ্ধ হয়ে চলে গেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

পূজা শুরুর আগেই ঢাক-ঢোল, কাঁসর, সানাই, বাঁশি, কর্তাল, খঞ্জনিসহ বাঙালির চিরচেনা সব বাদ্যযন্ত্রের পসরা সাজিয়ে হাটে বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজনা বাজানোর নৈপুণ্য প্রদর্শনের মহড়ায় মেতে ওঠেন বাদকরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা এসব বাদক দলকে পূজা-মণ্ডপের জন্য ভাড়া করতেও বিভিন্ন এলাকার পূজারীরা ভিড় করেন। ১০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত চুক্তি হয়।

জনশ্রুতি আছে, প্রায় ৫০০ বছর আগে স্থানীয় রাজা নবরঙ্গ রায় তার রাজপ্রাসাদে দুর্গা পূজার আয়োজন করতেন। কটিয়াদীর চারিপাড়া গ্রামে ছিল রাজার প্রাসাদ। একবার রাজা নবরঙ্গ রায় সেরা ঢাকিদের সন্ধান করতে ঢাকার বিক্রমপুরের (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) বিভিন্ন স্থানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বার্তা পাঠান।

সে সময় নৌ পথে অসংখ্য ঢাকির দল পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে যাত্রাঘাটে সমবেত হন। রাজা নিজে দাঁড়িয়ে একে একে বাজনা শুনে সেরা দল বেছে নিতেন এবং পুরস্কৃত করতেন। সেই থেকেই যাত্রাঘাটে ঢাকের হাটের প্রচলন শুরু হয়। পরে এই হাট স্থানান্তর করে কটিয়াদীর পুরাতন বাজারের মাছ মহাল এলাকায় আনা হয়। বাদক ও বাদ্যযন্ত্রের হাট ছাপিয়ে এটি এখন বাঙালির ঐতিহ্য ও মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।

নরসিংদী থেকে আসা বাদক নিতাই জানান, প্রতিবছর এই হাটের আশায় থাকেন তিনি।

নবাবগঞ্জ থেকে হাটে এসেছিলেন হরিরাজ। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চলে আসি এই হাটে।'

কিশোরগঞ্জ শহরের বরুণ কুমার সাহা বলেন, 'প্রায় ৫০০ বছর আগে থেকে এই ঢাক-ঢোলের হাট চলে আসছে। আমরা এলাকাবাসী হিসেবে তাদের নিরাপত্তায় কাজ করি।'

কটিয়াদী পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সেক্রেটারি জনি কুমার সাহা জানান, হাটে বাদকদলের জন্য থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। 

কটিয়াদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এবার প্রায় শতাধিক বাদক এসেছিলেন হাটে। বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে সব ঢাকি ও বাদকরা চুক্তিবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন এলাকায় চলে গেছেন। পূজার আয়োজক ও বাদকদের নিরাপত্তায় ঢাকের হাটে পুলিশ কাজ করেছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Interim govt must not be allowed to fail: Tarique addresses BNP rally

Thousands join BNP rally from Nayapaltan to Manik Mia Avenue

3h ago