গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু উভয়েই মানবতা-শান্তির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, মহাত্মা গান্ধী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উভয়েই মানবতা ও শান্তির প্রতি নিবেদিত ছিলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত ‘বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মহাত্মা গান্ধী ও শেখ মুজিবের অবদান’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক অনলাইন সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, মহাত্মা গান্ধী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উভয়েই মানবতা ও শান্তির প্রতি নিবেদিত ছিলেন।

আজ রোববার দুপুরে মহাত্মা গান্ধীর ১৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি আয়োজিত 'বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় মহাত্মা গান্ধী ও শেখ মুজিবের অবদান' শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক অনলাইন সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

শাহরিয়ার কবির বলেন, 'আজ ২ অক্টোবর। আমরা বিভিন্ন দেশের নাগরিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের পুরোগামী নেতা মহাত্মা গান্ধীর ১৫২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করতে এই বহুজাতিক সম্মেলনে জড়ো হয়েছি। ২০০৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সম্পাদক গান্ধীর পথকে সম্মান জানাতে ২ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিল। এই দিনে বিশ্বজুড়ে অহিংসা এবং শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হয়।'

'মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার সময় আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা জানাতে চাই, যিনি ১৯৭১ সালের মার্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউনের আগে বাংলাদেশে একটি অভূতপূর্ব অসহযোগ ও অহিংসা আন্দোলন শুরু করেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানের জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনী বাংলাদেশের জনগণের ওপর গণহত্যার মতো নৃশংস কর্মকাণ্ড চালায়', বলেন তিনি।

নির্মূল কমিটির সভাপতি বলেন, 'যখন আমাদের পৃথিবী যুদ্ধ, সহিংসতা, গৃহযুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ, অসহিষ্ণুতা এবং মানবতার বিরুদ্ধে অন্যান্য অপরাধের দ্বারা বিপন্ন হয়, তখন মহাত্মা গান্ধীর কথা মনে রাখা উচিত। যিনি বলেছিলেন, "চোখের বদলে চোখ পুরো বিশ্বকে অন্ধ করে দেবে"। মানবতার বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, "আপনি মানবতার ওপর বিশ্বাস হারাবেন না। মানবতা একটি সমুদ্র, সাগরের কয়েক ফোঁটা নোংরা হলে সাগর নোংরা হয় না"।'

তিনি বলেন, 'একইভাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, "আমার সবচেয়ে বড় শক্তি জনগণের প্রতি ভালোবাসা, আমার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো আমি তাদের খুব বেশি ভালোবাসি"। তিনি আরও বলেন, "দেশ থেকে সব অন্যায়, শোষণ-পীড়ন বন্ধ করতে প্রয়োজন হলে আমি জীবন উৎসর্গ করব"। তার পররাষ্ট্রনীতি ছিল সুফিদের মানবতাবাদী চিন্তাধারার ওপর ভিত্তি করে, যারা বলেছিলেন, "সবার জন্য ভালোবাসা, কারও জন্য ঘৃণা নয়"।'

'ইতিহাসের পরিহাস হলো- ২ মহান নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে মানবতার শত্রুরা। মানবতা, ভালোবাসা এবং শান্তির প্রতি অঙ্গীকারের জন্য তারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, যা সর্বদা সুরক্ষিত, প্রচার এবং অনুশীলন করা প্রয়োজন', যোগ করেন শাহরিয়ার কবির।

সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশের ২১ মানবাধিকার নেতা, শান্তি কর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবী ও উন্নয়নকর্মী অংশ নেন।

শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বেলজিয়ামের সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক এমইপি পর্তুগিজ মানবাধিকার নেতা পাওলো কাসাকা, ভারতের জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ, পাকিস্তানের নারী অধিকার ও শান্তি কর্মী তেহরিক-ই-নিশওয়ানের সভাপতি ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী সীমা কেরমানি, পাকিস্তানের মানবাধিকারকর্মী ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন গবেষক-লেখক তাহিরা আবদুল্লাহ, তুরস্কের পেন ক্লাবের সাবেক সভাপতি, কবি ও নাট্যকার তারেক গুনেরসেল, আফগান ইন্টেলেকচুয়াল গ্লোবাল কমিউনিটি আমেরিকার সভাপতি মানবাধিকার নেতা ও লেখক শাহী সাদাত, সুইজারল্যান্ডে নির্বাসিত আফগান শান্তিকর্মী ও লেখক আসলাম জামি, যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্ব সিন্ধি কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকার নেতা অধ্যাপক লাখুমাল লুহানা, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. রাসবিহারী ঘোষ, ফোরাম ফর সেক্যুলার নেপালের সভাপতি রাষ্ট্রদূত যুবনাথ লামসাল, সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত আফগান কণ্ঠশিল্পী ও শান্তিকর্মী ঝালা সারমাস্ত, ইরানের মানবাধিকার নেত্রী ব্যানফশেহ পোরজান্দ, পোল্যান্ডের নেভার অ্যাগেইনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মানবাধিকার নেত্রী নাটালিয়া সিনায়েভা, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকারকর্মী এমপি আরমা দত্ত, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুনীর চৌধুরীর সন্তান মানবাধিকার নেতা আসিফ মুনীর তন্ময়, নির্মূল কমিটির সর্ব-ইউরোপীয় সভাপতি মানবাধিকারকর্মী তরুণ কান্তি চৌধুরী, ফিনল্যান্ডের নির্মূল কমিটির সভাপতি মানবাধিকার নেতা ও গবেষক ড. মুজিবর রহমান এবং অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার নেতা টিটো সোহেল।

বেলজিয়ামের সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক এমইপি পর্তুগিজ রাজনীতিবিদ পাওলো কাসাকা বলেন, 'এমন এক সময়ে আমরা এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছি, যখন বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ইউরোপ দেখছে রাশিয়ার নৃশংসতা। মিয়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর যে নৃশংসতা দেখাচ্ছে সেই দেশের সামরিক সরকার, এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সে দেশের নাগরিকদের আশ্রয় দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে। মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে ইরানে, মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে আফগানিস্তানে। ভারতে মহাত্মা গান্ধী ও বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্যারিশম্যাটিক নেতা ছিলেন। তারা তাদের দেশে মানবতা লঙ্ঘনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দুজনেই দুটি দেশের অভ্যুদয়ে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন।'

ভারতের জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় কে ভরদ্বাজ বলেন, 'গান্ধীজী যেমন সমাজকে প্রভাবিত করেছিলেন তেমনি একটি দেশের অভ্যুদয় ও সমাজ পরিবর্তনে বঙ্গবন্ধুও প্রভাবিত করেছিলেন। গান্ধীর মতো বঙ্গবন্ধুর নীতি এখনো সমাজ পরিবর্তনে প্রযোজ্য। মহাত্মা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমান দুজনেই সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে বঙ্গবন্ধুর সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিফলন দেখা যায়।'

পাকিস্তানের নারী অধিকার ও শান্তিকর্মী তেহরিক-ই-নিশওয়ানের সভাপতি ধ্রুপদী নৃত্যশিল্পী সীমা কেরমানি বলেন, 'আমি দেখছি বিশ্বজুড়ে নিজের স্বাধীনতার জন্য নারীরা বিশেষ করে ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে অহিংস আন্দোলন করছে। কিন্তু এই দেশগুলোর সরকার ধারাবাহিকভাবেই নারীদের ওপর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার। আর এজন্য বিশ্ব নেতাদের এগিয়ে আসা উচিত।'

পাকিস্তানের মানবাধিকার নেত্রী ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন গবেষক-লেখক তাহিরা আবদুল্লাহ বলেন, 'গান্ধীজী ও বঙ্গবন্ধু দুজনেই দুটি দেশের জাতির জনক। কোনো কোনো সময় ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে শান্তি প্রক্রিয়া চালাতে হয়। তালেবান প্রভাবিত পাকিস্তান ও ইরানে কী হচ্ছে সবাই আমরা জানি। গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর মতো শান্তি প্রতিষ্ঠা অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে করতে পারেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, অনেক সময় শান্তির জন্যও যুদ্ধ করতে হয়। শাসকদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে শান্তিকর্মীদের অহিংস আন্দোলনই যথেষ্ট নয়। যার উদাহরণ রয়েছে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে।'

তুরস্কের পেন ক্লাবের প্রাক্তন সভাপতি, কবি ও নাট্যকার তারেক গুনেরসেল বলেন, 'আমার শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম মহাত্মা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্ব শান্তির লক্ষ্যে সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আগ্রাসন ও অবিচার রোধে আসুন আমরা খুব ভালোভাবে কাজ করি। আসুন সমগ্র বিশ্বে একটি ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক ফেডারেশন গড়ে তুলি।'

অনলাইন কনফারেন্সে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আফগান ইন্টেলেকচুয়াল গ্লোবাল কমিউনিটি আমেরিকার সভাপতি মানবাধিকারকর্মী ও লেখক শাহী সাদাত বলেন, 'আমরা এমন একটা সময়ে মহান নেতা মহাত্মা গান্ধীর ১৫২তম জন্মবার্ষিকী পালন করছি, যখন বিশ্বের অন্যান্য অংশে গণহত্যার মতো নৃশংস কর্মকাণ্ড চলছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে চলছে এই গণহত্যা। আমি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ করব আফগানিস্তানকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার জন্য। এখন যদি আমাদের কান্না না শোনেন, আমাদের কথা না শোনেন, তবে একদিন দেখবেন যুদ্ধ আমাদের দরজার ভেতরে ঢুকে গেছে।'

সুইজারল্যান্ডে নির্বাসিত আফগান শান্তিকর্মী ও লেখক আসলাম জামি বলেন, 'সবাই জানেন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ, যা একটি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তার নির্দেশনায় একটি দেশ স্বাধীন হয়েছিল। আফগানিস্তানেও বঙ্গবন্ধুর মতো একজন ব্যক্তিত্ব দরকার ছিল, যিনি একটি জাতিকে তার দুরবস্থা থেকে বের করে আনবেন।'

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ওয়ার্ল্ড সিন্ধি কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক মানবাধিকারকর্মী অধ্যাপক লাখুমাল লুহানা বলেন, 'অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে মহাত্মা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমান ভারত ও বাংলাদেশ নামক দুটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটিয়েছিলেন। ভারত থেকে বাংলাদেশের বিষয়টা একটু ভিন্ন। সো কল্ড পাকিস্তান চেয়েছিল বাংলাদেশের মানুষকে নানা অন্যায়- অত্যাচারের মধ্য দিয়ে দাবিয়ে রাখতে। এজন্য তারা বাংলাদেশে গণহত্যাও চালিয়েছে। কিন্তু তারা এই হিংস্বাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে বাঙালিদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি।'

ফোরাম ফর সেক্যুলার নেপালের সভাপতি রাষ্ট্রদূত যুবনাথ লামসাল বলেন, 'গান্ধীজী যেমন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলনের পথে হেঁটেছিলেন, তেমনি বঙ্গবন্ধুও অত্যাচারী পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ অহিংস নীতি গ্রহণ করেছিলেন। বিশ্বে যে হারে মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে সেই অবস্থায় অহিংস আন্দোলনের আদর্শ মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুকে অনুসরণ করা উচিত।'

পোল্যান্ডের নেভার এগেইনের প্রতিষ্ঠান সদস্য মানবাধিকার নেত্রী নাটালিয়া সিনায়েভা বলেন, 'ইউক্রেনের যুদ্ধ আক্রান্ত মানুষকে সহযোগিতার জন্য পোল্যান্ড থেকে আমরা নানাভাবে চেষ্টা করছি। ইউক্রেনে মানবতা লঙ্ঘন রোধে মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা প্রয়োজন।'

সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত আফগান কণ্ঠশিল্পী ও মানবাধিকার কর্মী ঝালা সারমাস্ত বলেন, 'আমরা এমন একটা সময়ে এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছি যখন সারাবিশ্বেই মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানে এই অবস্থা খুবই ভয়াবহ। তালেবানের বিরুদ্ধে যেভাবেই হোক আফগানিস্তানকে রক্ষা করতে হবে।'

ইরানের মানবাধিকার নেতা ব্যানফশেহ পোরজান্দ বলেন, 'আমি ১৯৭৯ সাল থেকেই খোমেনির সাম্প্রদায়িক ইরানের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছি। ইরানে প্রতিনিয়তই মানবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে। আর এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিদিনই প্রতিটি ইরানিয়ান আন্দোলন করে আসছে। আমার বাবা প্রখ্যাত সাংবাদিক ও মানবাধিকার নেতা সেই আন্দোলনেরই একজন। তাকে শেষ পর্যন্ত অত্যাচার করে মেরে ফেলেছে ইরান সরকার। আধুনিক ইরানের জন্য আমার আন্দোলনও অব্যাহত আছে।'

ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. রাসবিহারী ঘোষ বলেন, 'অহিংস আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু দুজনেই বিশ্বের মানুষের কাছে আদর্শ। শ্রদ্ধা জানাই তাদের।'

মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের সভাপতি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, 'জাতিসংঘ অক্টোবরের ২ তারিখকে বিশ্ব অহিংসা দিবস ঘোষণা করেছে। এই দিন মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। তিনি ভারতবর্ষে অহিংস আন্দোলনের প্রবক্তা। বিশ্ব শান্তিতে মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুকরণীয়।'

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভাষাসংগ্রামী ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের পৌত্রী মানবাধিকার নেত্রী এমপি আরমা দত্ত বলেন, 'মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুকে প্রথমেই জানাই গভীর শ্রদ্ধা। বিশ্বে এখন গভীর সংকট চলছে। মানবতা চরম লঙ্ঘিত হচ্ছে ইউক্রেন, ইরান, আফগানিস্তানে এবং অন্যান্য দেশেও। এই অবস্থায় গান্ধীজী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণ খুবই জরুরি।'

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুনীর চৌধুরীর সন্তান মানবাধিকারকর্মী আসিফ মুনীর তন্ময় বলেন, 'গান্ধীবাদী দর্শন এবং শেখ মুজিবের শান্তির আদর্শ উভয়ই যুগে যুগে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক, এ কারণেই তারা আধুনিক দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২ নেতা। শান্তির জন্য তাদের প্রধান দৃষ্টি ছিল সমাজ এবং জাতির মধ্যে বৈষম্য হ্রাস। মহাত্মা এবং বঙ্গবন্ধু উভয়েই শান্তির জন্য যা প্রচার করেছিলেন, তার উদাহরণও সৃষ্টি করেছিলেন।'

নির্মূল কমিটির সর্ব-ইউরোপীয় সভাপতি মানবাধিকার নেতা তরুণ কান্তি চৌধুরী বলেন, 'মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকী ২ অক্টোবর সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক অহিংসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মানবতা লঙ্ঘনের বর্তমান পরিস্থিতিতে অহিংস আন্দোলনের অনুকরণীয় এই ২ মহান নেতার মতো রাষ্ট্রনায়ক আজ খুব দরকার।'

ফিনল্যান্ডের নির্মূল কমিটির সভাপতি মানবাধিকার কর্মী ও গবেষক ড. মুজিবর রহমান বলেন, 'মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব ইতিহাসের ২ সম্মানিত নেতা। উভয়ই তাদের সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন এবং তাদের ধর্ম, বর্ণ এবং জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে মানুষের সমতায় বিশ্বাসী ছিলেন।'

অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার নেতা টিটো সোহেল বলেন, 'অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা এ দেশের স্বার্থরক্ষায় কাজ করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।'

Comments