মন্ত্রীর গাড়িচালক বলে কথা!
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের গাড়িচালক আতিয়ার রহমানের সাথে জমির ঘাস কাটা নিয়ে তর্ক করায় ফুলকমল রায় (৪০) নামে এক কৃষককে ধরে নিয়ে থানায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার দলগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীখাতা গ্রামে। ওই কৃষককে কালীগঞ্জ থানায় শুক্রবার রাত ৯টা থেকে রাত ১২ পযর্ন্ত আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ আছে।
ভুক্তভোগী কৃষক ফুলকমল রায়ের বাড়ি কালীগঞ্জের দলগ্রাম ইউনিয়নের শ্রীখাতা গ্রামে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের গাড়িচালক আতিয়ার রহমানের বাড়িও একই গ্রামে। সমাজকল্যাণমন্ত্রী বাড়ি একই উপজেলার কাশিরাম গ্রামে।
শনিবার সন্ধ্যায় ভুক্তভোগী কৃষক ফুলকমল রায়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শুক্রবার সকালে শ্রীখাতা গ্রামে রাস্তার পাশে একটি জমি থেকে ঘাস তুলছিলেন তিনি। এসময় ওই রাস্তার পাশে এসে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর গাড়িচালক আতিয়ার রহমান তাকে জমি থেকে ঘাস তুলতে নিষেধ করেন।
'আমি আতিয়ার রহমানকে জানাই জমির মালিক অন্যজন কিন্তু আপনি কেন ঘাস তুলতে মানা করছেন। আমার কথায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং জানিয়ে দেন দেখে নেবেন,' বলেন ফুলকমল।
ফুলকমল রায় বলেন, 'শুক্রবার রাত ৯টার দিকে দুই জন গ্রামপুলিশ আমাকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যান। পুলিশের এসআই আমাকে মন্ত্রীর গাড়িচালকের পা ধরে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন।'
'আমি মন্ত্রীর গাড়িচালকের কাছে ক্ষমা চাইনি। থানা থেকে আমাকে শুক্রবার রাত ১২টার দিকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। বর্তমানে আমি ভয়ে আছি। পুলিশ যদি আমাকে মিথ্যা কোনো মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়,' বলেন তিনি।
যে জমি থেকে ঘাস তোলা হয়েছিল সেই জমির মালিক কাকিনা উত্তর বাংলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ও কাশিরাম গ্রামের বাসিন্দা এস তাবাসসুম রায়হান মুসতাযীর জানান, তার জমি থেকে স্থানীয় কৃষকরা ঘাস তুলে নিয়ে যায় তাতে তিনি কখনও আপত্তি করেননি। কিন্তু মন্ত্রীর গাড়িচালক এতে কেন আপত্তি করলেন।
'মন্ত্রীর গাড়িচালক আতিয়ার রহমান আমার আত্মীয় নন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে পুলিশ দিয়ে কৃষককে হয়রানি করেছেন,' তিনি বলেন।
মন্ত্রীর গাড়িচালক আতিয়ার রহমান সাংবাদিকদের জানান, ওই কৃষক তার সাথে খুবই খারাপ ব্যবহার করেছিলেন। ওই কৃষক জমি লাগোয়া রাস্তার ঘাসও তুলছিলেন। তাকে রাস্তার ঘাস তুলতে নিষেধ করা হয়েছিল।
'আমি পুলিশকে মৌখিকভাবে জানিয়েছিলাম। কৃষককে থানায় তুলে নিয়ে যাওয়ার কথা বলিনি,' তিনি দাবি করেন।
কালীগঞ্জ থানার এসআই নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রীর গাড়িচালক আতিয়ার রহমানের মৌখিক অভিযোগে কৃষক ফুলকমল রায়কে থানায় ডেকে আনা হয়েছিল। পরে তাকে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
'আমি শুধু তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেন তিনি মন্ত্রী মহোদয়ের গাড়িচালকের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন,' বলেন এসআই।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম গোলাম রসুল বলেন, কৃষক ফুলকমল রায়কে থানায় নিয়ে আসার পর ঘটনার বিস্তারিত জেনে তাকে বাড়িতে পাঠানো হয়। ওই কৃষককে বাড়ি থেকে তুলে আনা হয়নি। তাকে বাড়ি থেকে ডেকে আনা হয়েছিল বলে ওসি জানান।
এ বিষয়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বক্তব্য জানতে একাধিকবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি সম্ভব হয়নি।
Comments