নতুন ড্যাপে ‘কল্পনা’ আছে ‘পরিকল্পনা’ নেই

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নতুন করে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। যার মেয়াদ হবে ২০১৬-২০৩৫ সাল পর্যন্ত। তবে ড্যাপের গেজেট প্রকাশের পর থেকেই তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।
স্টার বাংলা অনলাইন গ্রাফিক্স

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নতুন করে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। যার মেয়াদ হবে ২০১৬-২০৩৫ সাল পর্যন্ত। তবে ড্যাপের গেজেট প্রকাশের পর থেকেই তা নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে মধ্যবিত্তরা গরিব হবে এবং ধনীরা আরও ধনী হবে। ড্যাপকে একটি অকার্যকর ও উদ্ভট পরিকল্পনা বলেও মনে করছেন অনেকে।

তবে রাজউক বলছে, ঢাকাকে বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা মাথায় রেখে ড্যাপ করা হয়েছে। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে বলেও আশাবাদী রাজউক।

গত ২৩ আগস্ট গেজেট আকারে প্রকাশিত এই ড্যাপে মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, পীরেরবাগ, আগারগাঁও, বাড্ডার মতো এলাকাগুলোতে ফার (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) কম দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব এলাকায় ৩-৪ তলার বেশি ভবন করা যাবে না।

অন্যদিকে গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডির মতো এলাকায় ফার বেশি দেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় ১০ তলা বা তারচেয়ে বেশি উঁচু ভবন করা যাবে। সাধারণত যারা যত বেশি ফার পাবেন, তারা ততবেশি উঁচু ভবন নির্মাণ করতে পারবেন।

নতুন ড্যাপ বিষয়ে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, 'ঢাকায় ৫ তলার অধিক ভবনের সংখ্যা ৮ শতাংশ, ২-৫ তলা ভবনের সংখ্যা ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ঢাকায় ১ তলা ভবনের সংখ্যা ৬৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যেগুলোকে বলা হচ্ছে অনুন্নত এলাকা। নতুন ড্যাপ অনুযায়ী অনুন্নত এলাকায় ২-৩ তলার ওপরে ভবন নির্মাণ করা যাবে না। ড্যাপে মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, পীরেরবাগসহ বেশি কিছু এলাকাকে অনুন্নত এলাকা হিসেবে এবং গুলশান, বনানী, বারিধারা, বসুন্ধরা, ধানমন্ডির মতো এলাকাগুলোকে উন্নত এলাকা, অর্থাৎ বসবাসের উপযোগী ধরা হয়েছে। উন্নত এলাকায় ভবন নির্মাণে ফার বেশি পাওয়া যাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'ফারের পার্থক্যের কারণে দেখা যাবে, যারা মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুরের মতো এলাকায় ৪০ লাখ টাকায় ফ্ল্যাট কিনতেন, তারা আর সেই সুযোগ পাবেন না। কারণ, এসব এলাকায় ভবনের উচ্চতা কম হবে। সুতরাং ফ্ল্যাট কিনতে উন্নত এলাকায় ৪-৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে। যা অনেকটা অসাধ্য। এতে ধনীরা আরও ধনী হবে এবং গরিবরা আরও গরিব হবে।'

'উন্নত করার পরিবর্তে অনুন্নত ৬৭ শতাংশ এলাকার ফার কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি অর্থায়ণে জরুরিভিত্তিতে এই ৬৭ শতাংশ এলাকার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এর মাধ্যমে এসব এলাকার ফার উন্নত এলাকার মতো ৫-৬ করতে হবে।'

এই স্থপতি বলেন, 'ফ্ল্যাটের সংখ্যা কমিয়ে কোনো এলাকায় জনঘনত্ব কমানোর ইতিহাস পৃথিবীর কোথাও নেই। এর ফলে আবাসন সংকট দেখা দেবে। সরকার চাইলেই এসব এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নিয়ে উন্নত সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করতে পারে। কিন্তু তা না করে উদ্ভট চিন্তা করে জনঘনত্ব কমাতে চাচ্ছে। ড্যাপ কার্যকর হলে আবাসিক ভবনে ফ্ল্যাটের সংখ্যা কমে যাবে এবং ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। এই ড্যাপ জনবান্ধব না। আবাসন সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এটি পুনরায় পর্যালোচনা করে জনবান্ধব করা উচিত।'

জনঘনত্ব কমাতে ঢাকার বাইরে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা জানিয়ে মোবাশ্বের হোসেন বলেন, 'আবাসন প্রতিষ্ঠান শেলটেক এই ড্যাপ তৈরি করেছে। শেলটেক মূলত জমি ও ফ্ল্যাটের ব্যবসা করে। এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব কাজ করতে পারে। পৃথিবীর কোথাও শেলটেক এমন ড্যাপ করেছে এবং তা সার্থক হয়েছে, এমনটা আমার জানা নেই। শেলেটেকের এমন কাজের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। কেন তাদের দিয়ে এই কাজ করানো হলো তা বুঝতে পারছি না।'

স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, '২০৩৫ সালের মধ্যে যে পরিমাণ মানুষ ঢাকা নগরীতে বাস করবেন, তাদের প্রত্যেকের আবাসন ব্যবস্থার কথা বলেছে সরকার। এই ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে এখন যেমন অনেক মানুষ রাস্তায় ফুটপাতে থাকে, ২০৩৫ সালেরও পরেও এমনই থাকবে।'

তিনি আরও বলেন, 'মধ্যবিত্তের সম্ভাবনা অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। কিন্তু তা না করে এখানে মধ্যবিত্তদের গরিব আর ধনীদের আরও ধনী বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কারণ বসুন্ধরা, গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডির মতো এলাকায় ফার দেওয়া হবে ৫ এর বেশি। ফলে তারা ১০ তলার বেশি ভবন বানাতে পারবে। অন্যদিকে যেসব এলাকা অনুন্নত বলা হচ্ছে, সেসব এলাকায় ফার দেওয়া হবে ২ এর মতো। অর্থাৎ তারা ৪ তলার বেশি ভবন বানাতে পারবে না।'

ইকবাল হাবিবের ভাষ্য, 'সরকার বলছে, অনুন্নত ৬৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ এলাকায় খেলার মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, পার্কসহ অন্যান্য সুবিধা নেই। তাই তাদেরকে ফার কম দেওয়া হবে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব জনগণের না সরকারের? সরকার এগুলো নিশ্চিত না করতে পেরে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।'

এই স্থপতি বলেন, 'বলা হচ্ছে, অনুন্নত এলাকাগুলোতে সরু রাস্তা, কিন্তু বড় বড় দালান। রাজউক অনুমোদন না দিলে এসব নির্মাণ হলো কীভাবে? রাজউক বলছে, এসব এলাকায় নাকি ৫ শতাংশ ভবন তাদের নিয়ন্ত্রণে। তাহলে, বাকিগুলো হলো কীভাবে? রাজউকের দুর্নীতিগ্রস্ততা ও দায়িত্বহীনতার কারণে তারা এসব এলাকায় ভবন হওয়ার সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। সুতরাং এসবের দায়ভার রাজউককেই নিতে হবে।'

'এখন প্রয়োজন ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোতে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো। সেসব এলাকায় ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, কর্মসংস্থান, যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করতে পারলে, মানুষ সেখানে গিয়ে বাস করবে। কিন্তু তার কোনো উদ্যোগ নেই এই ড্যাপে। ঢাকার আশেপাশের এলাকাগুলোতেও ফার দেড় থেকে ২ শতাংশ দেওয়া হয়েছে। যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না', ইকবাল হাবিব যোগ করেন।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, 'নদী, খাল, জলাশয়ের বৈধ অভিভাবক হলো জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। নদী বা খালে কোনো স্থাপনা বা কোনো কিছু করতে হলে অবশ্যই নদী রক্ষা কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কিন্তু এই ড্যাপ নিয়ে নদী রক্ষা কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা করা হয়নি। এমনকি তারা আমাদের তেমন কোনো তথ্যও সরবরাহ করেনি।'

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, 'নতুন এই ড্যাপ অনুযায়ী ঢাকার ভেতরে থাকা ৫৪টি খাল কোথায়, সে সম্পর্কে কোনো তথ্য আমাদের জানানো হয়নি। এই খালগুলো উদ্ধারে কোনো তথ্য নেই। ঢাকার ভেতরে ৫৭৪ কিলোমিটার নৌ-চলাচলের উপযোগী নৌপথের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই নৌপথের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, এর ফলে নদী দূষণ হবে কি না বা পরিবেশের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব পড়বে কি না, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য আমরা জানি না। এই নৌপথের ফলে নদীর দূষণ বাড়তে পারে। আর এই দূষিত পানি মেঘনায় গিয়ে পড়লে, তা ইলিশের প্রজননে সমস্যা হবে। আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে কোনো পরিকল্পনা করাটা কতটা কার্যকর হবে, তা আমার বোধগম্য নয়।'

তিনি বলেন, 'একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই, একটি কমিউনিস্ট দেশে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাড়ি-ঘর কমালে জনসংখ্যা কমবে, এটা সঠিক না। এই ড্যাপ আমার কাছে একটি অদ্ভুত পরিকল্পনা মনে হয়েছে। যারা এই ড্যাপ তৈরির সঙ্গে জড়িত, তাদের পুরো চিন্তাই ভুল। যেসব এলাকায় বলা হচ্ছে ২ তলার বেশি ভবন করা যাবে না, সেসব এলাকার সম্পদকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। ওই এলাকায় ২ তলা ভবন করার জন্য কোনো ডেভেলপার যাবে না। ফলে যাদের সামান্য জমি আছে, তাদের একটি বাড়ি নির্মাণ করা অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে। এতে করে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তদের অবস্থা আরও খারাপ হবে, অন্যদিকে ধনীরা আরও ধনী হবেন।'

ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর মতে, 'চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ঢাকার আশেপাশে নিশ্চিত করতে পারলে মানুষ এমনিতেই ঢাকার বাইরে বসবাস করবে। কিন্তু তা না করে, অবাস্তব পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে শুধু জনগণের অর্থ অপচয় করা ছাড়া এই ড্যাপে আর কিছু নেই। এখানে শুধু কল্পনা করা হয়েছে। কোনো পরিকল্পনা নেই। কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য আছে এখানে। এই ড্যাপ ফলপ্রসূ কোনো কাজ হয়নি। বলা যেতে পারে, এটি অকার্যকর ড্যাপ।'

ড্যাপ তৈরিতে রাজউকের সঙ্গে কনসালটেন্সি ফার্ম হিসেবে কাজ করেছে শেলটেক।

ড্যাপ বিষয়ে শেলটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরীফ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, 'বর্তমান ড্যাপ নদী রক্ষা কমিশন, রিহ্যাব কারো জন্যই সুখকর কিছু না। এটি বাস্তবায়ন হলে তাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই ড্যাপ বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। যারা সমালোচনা করছেন, অবশ্যই তাদের যৌক্তিকতা আছে।'

বিশ্বের কোথাও কি ভবনের উচ্চতা কমিয়ে জনঘনত্ব কমানো হয়েছে? ঢাকায় আদৌ কি এই উদ্যোগ সফল হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'ভবনের উচ্চতা কমিয়ে জনঘনত্ব কমানো যায় না। আমার জানা মতে, এমন নজির বিশ্বের কোথাও নেই। এই ড্যাপের সফলতা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।'

নতুন এই ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে যারা কম ফার পাবে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না এবং ঢাকায় আবাসন সংকট তৈরি হবে কি না— জানতে চাইলে শেলটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, 'এখানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন জমির মালিকরা। আবাসন সংকট প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আমি মনে করি। বাড়ি ভাড়া বেড়ে যাবে। কিছু জমির উন্নয়ন হবে, তবে ফ্ল্যাটের দাম হবে আকাশচুম্বি। সাশ্রয়ী হাউজিং বলতে কিছু থাকবে না।'

এই কর্মকর্তা বলেন, 'এই ড্যাপে ধনীরা আসলেই আরও ধনী হবে। উন্নত এলাকাগুলোতে তখন ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। অনেকেই ফ্ল্যাট কিনতে পারবে না। জনঘনত্ব কমিয়ে, ভবনের উচ্চতা কমিয়ে সমস্যা সমাধান সম্ভব না। সরকার চাইলেই অনুন্নত এলাকায় সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে সবার জন্য বাসযোগ্য ঢাকা করতে পারতো।'

ড্যাপ তৈরিতে শেলটেক রাজউকের সঙ্গে প্রধান কনসালটেন্সি ফার্ম হিসেবে কাজ করেছে। যখন এটি নিয়ে আলোচনা হয়, তখন শেলটেক কেন এই সমস্যাগুলোর কথা উল্লেখ করেনি? জানতে চাইলে শেলটেকের এই কর্মকর্তা বলেন, 'ড্যাপ তৈরিতে আমাদের মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান কনসালটেন্সি ফার্ম হিসেবে কাজ করেছে, এটি সত্য। তবে আমাদের সবকিছু করতে হয়েছে রাজউকের শতভাগ নির্দেশনা অনুযায়ী। তাদের মতাদর্শের বাইরে আমাদের কিছুই করণীয় নেই। চালকের আসনে ছিল রাজউক। সুতরাং রাজউক যেভাবে করেছে, সেভাবেই সব হয়েছে।'

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখে এই ড্যাপ করা হয়েছে। যেসব জায়গায় জনঘনত্ব বেশি, সেসব এলাকায় ফার কমে গেছে। যেসব এলাকায় ফাঁকা জায়গা আছে, সেখানে ভারসাম্য আনার জন্য ফার বেশি দেওয়া হয়েছে।'

যেসব এলাকায় ১ তলা ভবন আছে এবং রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কম, সেসব এলাকায় সরকার সুযোগ-সুবিধা না বাড়িয়ে ভবনের উচ্চতা কম নির্ধারণ করে দেওয়া কতটা যৌক্তিক— জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান বলেন, 'আমরা কিছু কিছু এলাকায় এমন উদ্যোগ নিয়েছি। যেমন: পুরান ঢাকার ৫টি জায়গায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওইসব এলাকায় ভবনগুলো ভেঙে উঁচু ভবন করা হবে এবং অন্যান্য সুবিধা থাকবে। আমরা ৫৭টি জায়গা রেখেছি, যেখানে সবার জন্য বসবাস করা সহজলভ্য হবে। যারা ঢাকায় একদম গরিব মানুষ, তারা এই এলাকাগুলোতে বাস করতে পারবে। এর জন্য কোনো ডাউনপেমেন্ট দিতে হবে না। আমরা ডেভেরপারদের অনুরোধ করবো, তারা যেন গরিব মানুষের বসবাস উপযোগী ভবন তৈরি করে।'

যেসব এলাকায় ২-৩ তলার বেশি ভবন করা যাবে না, সেসব এলাকায় কি ডেভেলপার বিনিয়োগ করবে বলে আপনার মনে হয়? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, 'তারা অবশ্যই তাদের ব্যবসা আগে দেখবে। এর জন্য হয়তো কোনো কোনো জায়গায় কম বিনিয়োগ করবে।'

মধ্যবিত্তরা আগে ৪০-৫০ লাখ টাকায় একটু অনুন্নত এলাকায় ফ্ল্যাট কিনতে পারতো। এখন তারা ফ্ল্যাট কিনতে চাইলে গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো এলাকায় যেতে হবে। যেখানে ফ্ল্যাটের দাম ৪-৫ কোটি হতে পারে। ড্যাপে মধ্যবিত্তদের এই বিষয়টি নিয়ে কী ভাবা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'মধ্যবিত্তরা কোনোকালেই এসব উন্নত এলাকায় ছিল না। আমরা এর জন্য পূর্বাচল করেছি, উত্তরায় কিছু এলাকা আছে, সেখানে তারা তুলনামূলক কম দামে ফ্ল্যাট কিনতে পারবে। তাছাড়া, রাজধানীতে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে। এজন্য একটু দূরে বসবাস করলেও তেমন কোনো সমস্যা হবে না।'

সাভার, গাজীপুরসহ ঢাকার আশেপাশের অন্যান্য এলাকায় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে সেসব এলাকায় হয়তো মানুষ বসবাস করতে চাইতো। কিন্তু ড্যাপে সেসব এলাকায় সুযোগ-সুবিধা না বাড়িয়ে বরং ফার কমিয়ে দেওয়া হলো কেন— জানতে চাইলে আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, 'ফার আসলে পুরো এলাকাভিত্তিক না। নির্দিষ্ট এলাকায় কমবেশি ফার আছে। প্লট বড় হলে ফার বেশি পাবে। যেমন: ৪ জনের যদি ৫ কাঠা করে প্লট থাকে এবং তারা যদি প্লটগুলো এক করে যৌথভাবে ভবন নির্মাণ করে, তাহলে কিন্তু প্লট বড় হবে এবং ফার বেশি পাবে। এ জন্য আমরা বড় প্লটকে উৎসাহিত করছি।'

যেখানে আপন ভাইদের মধ্যে মিল থাকে না, সেখানে ৪-৫ জন প্লট এক করে ভবন নির্মাণ করবে? এর উত্তরে তিনি বলেন, 'সবকিছু বিবেচনা করে নিজেদের সুবিধার জন্য এখন অবশ্যই মানুষ এক হবে বলে আমি মনে করি।'

ভবনের উচ্চতা কমিয়ে পৃথিবীতে কোথাও জনঘনত্ব কমানো হয়েছে এমন কোনো উদাহরণ আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ভবনের উচ্চতা কমলে তো মানুষ কম বাস করবো, এটা স্বাভাবিক। আমি জয়েন করার আগেই ড্যাপ বিষয়ে বিভিন্ন সভা ও আলোচনা হয়েছে। তারা হয়তো বিভিন্ন দেশের বিষয়গুলো যাচাই করে দেখেছে। অন্যান্য দেশের বিষয়ে এই মুহূর্তে আমি বলতে পারবো না।'

ড্যাপ করার দায়িত্ব শেলটেককে দেওয়া এবং তাদের পূর্বাভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সেটা আমার জানা নেই। আমাদের লোকজন কিন্তু সবার সঙ্গে আলোচনা করেছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে এমন কাজ কিন্তু আগে কোথাও হয়নি।'

আবাসন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শেলটেকের কনসালটেন্সিতে ড্যাপ করা নিয়ে তৈরি হওয়া সমালোচনা বিষয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, 'এটা এমনিতেই তাদেরকে দেওয়া হয়নি। অনেক আলোচনা, বিচার-বিশ্লেষণ করে তাদেরকে এই কাজ দেওয়া হয়েছে। আরও অনেকে আবেদন করেছিল। আমি জয়েন করার অনেক আগেই তাদেরকে এই কাজ দেওয়া হয়েছে।'

এখন শেলটেকও নতুন ড্যাপ কার্যকর করা কঠিন বলে মনে করছে। কারণ কী? গত মঙ্গলবার এই প্রশ্নের পর টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর গত ২ দিনে রাজউক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞার সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। এসএমএসেরও উত্তর দেননি।

Comments