রাজউকের পুনর্গঠন চান স্থপতি ও পরিবেশবিদরা

আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন স্থপতি ইকবাল হাবিব (ডান থেকে চতুর্থ), অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান (বা থেকে চতুর্থ), বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (ডান থেকে পঞ্চম), দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশ মাহফুজ আনাম (বা থেকে ষষ্ঠ) ও নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক (ডান থেকে ষষ্ঠ)। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য যে নতুন করে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) করেছে, তা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন স্থপতি ও পরিবেশবিদরা। এমনকি, তারা রাজউকের পুনর্গঠনের দাবিও জানিয়েছেন।

তারা বলছেন, 'মুখ্য জলস্রোত' ছাড়া তথাকথিত 'সাধারণ জলস্রোত' ও 'সাধারণ প্লাবন ভূমিতে' শর্তসাপেক্ষে ভূমি ব্যবহার পরিবর্তন ও স্থাপনা অনুমোদনের প্রস্তাবনা আইন-আদালতের আদেশ ও জনস্বার্থ পরিপন্থী। এমন প্রস্তাবনা গৃহীত হলে বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ঢাকা আরও বিপজ্জনক অবস্থায় পড়বে।

আজ রোববার দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারের আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে ড্যাপ বিষয়ে এক আলোচনায় সভায় তারা এসব কথা বলেন।

গত ২৩ আগস্ট গেজেট আকারে প্রকাশিত ড্যাপে মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, পীরেরবাগ, আগারগাঁও, বাড্ডার মতো এলাকাগুলোতে ফার (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) কম দেওয়া হয়েছে। ফলে এসব এলাকায় ৩-৪ তলার বেশি ভবন করা যাবে না।

অন্যদিকে গুলশান, বনানী, বারিধারা, জলসিঁড়ি, ধানমন্ডির মতো এলাকায় ফার বেশি দেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় ১০ তলা বা তারচেয়ে বেশি উঁচু ভবন করা যাবে। সাধারণত যারা যত বেশি ফার পাবেন, তারা ততবেশি উঁচু ভবন নির্মাণ করতে পারবেন।

সভায় স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, 'এই ড্যাপ বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা রাজউকের নেই। রাজউক যে এলাকাভিত্তিক জনঘনত্বের কথা বলছে, তাদের সেই তথ্যের মধ্যেই ঝামেলা আছে। সরকার ২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকায় সবার আবাসন নিশ্চিত করতে চায়। কিন্তু এই ড্যাপ সেই সমস্যার সমাধান করতে পারবে না।'

এই স্থপতি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, আমাদের এক ছটাক জমিও যেন না পড়ে থাকে। অথচ এই ড্যাপে কৃষি জমিতে ইকো-পার্ক, ডাকবাংলো, ভিলা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে করে আমাদের কৃষি জমির সংকট হবে। যেভাবেই হোক, আমাদেরকে কৃষি জমি বাঁচাতে হবে।'

রাজউকের পুনর্গঠন দাবি করে ইকবাল হাবিব বলেন, 'আগে রাজউকের বোর্ড মেম্বারদের মধ্যে অবশ্যই টেকনিক্যাল বিষয়ে জানা-শোনাদের রাখতে হবে এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে হবে। ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অনেক কিছু এই ড্যাপে আছে। অবশ্যই সেগুলো পুনর্বিবেচনা করতে হবে।'

ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের কোনো পরিকল্পনা এই ড্যাপে নেই জানিয়ে তিনি বলেন, 'ঢাকার আশেপাশে সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জের মতো এলাকায় ১ দশমিক ২ থেকে ৪ এর মধ্যে ফার দেওয়া হয়েছে। ড্যাপে ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণের ধারণা নেই। করাইল বস্তি এলাকায় ফার দেওয়া হয়েছে ১ দশমিক ৩, আর তার পাশেই বনানীতে পার দেওয়া হয়েছে ৫ দশমিক ৭, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।'

'ড্যাপে ব্লু নেটওয়ার্কের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু কোথায় এই ব্লু নেটওয়ার্ক হবে তার বিস্তারিত কিছুই বলা হচ্ছে না। রাজউক ২৩টি খাল চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছে। কিন্তু এর আগে আমরা সমীক্ষায় ৪৬টি জলাশয় থাকার তথ্য পেয়েছি। বাকি জলাশয়গুলো তাহলে কোথায় গেল', তিনি যোগ করেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, 'ঢাকাতে এমনিতেই জনঘনত্ব অনেক বেশি। নতুন ড্যাপে যে ফার নির্ধারণ করা হয়েছে, তা ঠিক আছে। তবে গুলশান, জলসিঁড়ির মতো যেসব এলাকায় ফার বেশি দেওয়া হয়েছে, বরং সেসব এলাকায় ফার কমাতে হবে। আমরা আগেই বলছি, গুলশান, জলসিঁড়ির মতো এলাকাগুলোতে ফার ৪ দেওয়া যাবে না। এসব এলাকায় ফার কমাতে হবে। জলসিঁড়ি ফ্লাড ফ্লো জোন। তাই সেখানে ৩ এর বেশি ফার কোনোভাবেই দেওয়া যাবে না। ড্যাপে রাজউকের যে ভাবনা তা কার্যকর হবে না।'

ব্লকভিত্তিক ভবন উন্নয়নের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, 'কয়েকজন জমির মালিক তাদের জমি এক করে কোনো স্থাপনা করলে এমনিতেই ফার বেশি পাওয়া যাবে এবং উঁচু ভবন নির্মাণ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি পার্ক, খেলার মাঠ, প্রশস্ত রাস্তাও পাওয়া যাবে।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'এই ড্যাপে ঢাকা শহরের জন্য কোনো দর্শন নেই। ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে না পারলে জনঘনত্বের সমস্যা কোনোভাবেই সমাধান করা সম্ভব না। বর্তমান রাজউক দিয়ে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। রাজউকের পুনর্গঠন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। রাজউক যখন ডিআইটি (ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট) ছিল, বোর্ডে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, হাইকোর্টের বিচারকরাও সেখানে সদস্য থাকতেন। এখন আর তারা থাকেন না।'

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'পূর্বাচলে শুধু গাছ কাটা বাবদ সরকার ক্ষতিপূরণ দিয়েছে ১৫ কোটি টাকা। জমি বাবদ দিয়েছে ১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সেখানে পরিবেশকে এক ধরনের হত্যা করা হয়েছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

13h ago