ঢাকা কি আনফিট বাসমুক্ত হবে

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ২৫ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুঁকিপূর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত, রংচটা, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া নির্ধারিত রং পরিবর্তন করে জরাজীর্ণ, বিবর্ণ বা পরিবেশ দূষণকারী কোনো মোটরযান চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।
কোনো নম্বর প্লেট ছাড়া, দড়ি দিয়ে বাঁধা বাম্পার ও ৬ টুকরো হয়ে যাওয়া উইন্ডস্ক্রিন নিয়ে রায়েরবাজারে চলছে একটি মিনিবাস। কর্তৃপক্ষ এ ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান শুরু করবে। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার ফাইল ছবি

সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর ২৫ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুঁকিপূর্ণ বা ক্ষতিগ্রস্ত, রংচটা, কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া নির্ধারিত রং পরিবর্তন করে জরাজীর্ণ, বিবর্ণ বা পরিবেশ দূষণকারী কোনো মোটরযান চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

এ ছাড়া, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে যানবাহন পরিদর্শক রয়েছেন, যাদের কাজ গাড়ির ফিটনেস ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার আগে এর সবকিছু পরীক্ষা করা।

কিন্তু, কঠোর আইনি বিধান ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় এমন ফিটনেসের অনুপযোগী, ঝুঁকিপূর্ণ, জরাজীর্ণ, পরিবেশ দূষণকারী বাস চলাচল করে। এসব বাস সড়ক দুর্ঘটনা ও দূষণেও কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

কর্তৃপক্ষ বেশ কয়েকবার শহরের রাস্তার এসব যানবাহন বন্ধের উদ্যোগ নিলেও পরিবহন সমিতিগুলোর বিরোধিতার মুখে তারা ব্যর্থ হয়।

বিআরটিএ আবারও এই ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এই নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব ত্রুটিপূর্ণ বাস ও মিনিবাসের সমস্যা সমাধানের জন্য পরিবহন সমিতিগুলোকে চিঠি দিয়েছে। গত সপ্তাহে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএ কর্মকর্তারা।

এই সময়ের মধ্যে বাস-মিনিবাসগুলো ঠিক করা না হলে কর্তৃপক্ষ গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে বলে জানান তারা।

বিআরটিএ কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে পরিবহন মালিকদের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের গাড়িগুলোর সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।

এরই মধ্যে বিআরটিএ তাদের সব যানবাহন পরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছে, কোনো ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনকে ফিটনেস ক্লিয়ারেন্স না দিতে। অন্যথায়, তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কেন এই ব্যবস্থা

গত সপ্তাহে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বিআরটিএকে ঝুঁকিপূর্ণ বাস চলাচল বন্ধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলার পর এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের চিঠির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এর সৌন্দর্য ও দেশের চিত্র মূলত শহরে চলাচলকারী যানবাহনের ওপর নির্ভর করে।

কিন্তু দেখা গেছে, শহরে ভাঙা দরজা, জানালা এবং লাইটসহ আরও অনেক কিছু নষ্ট থাকার পরও বিবর্ণ ও অচল বাসগুলো চালানো হচ্ছে।

এ ছাড়া, কিছু বাস কালো ধোঁয়া নির্গত করে এবং কিছু বাস নষ্ট ফ্যান ও নোংরা সিট কভার নিয়েই শহরের রাস্তায় চলাচল করে। এর ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।

বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) সীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, 'সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে চিঠি পেয়ে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরিবহন সমিতিগুলোকে তাদের ত্রুটিপূর্ণ বাস ঠিক করার জন্য চিঠি পাঠিয়েছে। আমরা এই বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।'

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, বাংলাদেশ বাস ট্রাক মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিআরটিএর আরেক কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্লাহ চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গতকাল শনিবার তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা আমাদের সব সদস্যকে বিআরটিএর নির্দেশনা মেনে চলতে বলব।'

বিআরটিএ সদর দপ্তর গত ১১ অক্টোবর সব যানবাহন পরিদর্শককে একটি চিঠি পাঠিয়েছে, যাতে কোনো ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনকে ফিটনেস ক্লিয়ারেন্স না দেওয়া হয়।

কেউ যদি তা করেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সড়ক পরিবহন আইনের ২৫ (২) ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাস্তবায়ন কঠিন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর এক কর্মকর্তা জানান, তারা মালিকদের একই ধরনের নির্দেশনা আগেও দিয়েছেন এবং এ ধরনের যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছেন। কিন্তু তারা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারেনি। কারণ, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সবসময় এই ধরনের অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

বিআরটিএর আরেক কর্মকর্তা বলেন, জনবল সংকট ও বিআরটিএতে যন্ত্রপাতির অভাবে সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন।

তিনি বলেন, বিআরটিএর বিভিন্ন অফিসে প্রায় ১২৫ জন যানবাহন পরিদর্শক রয়েছেন। ফিটনেস ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার আগে একটি বাসের প্রায় ৬০টি উপাদান পরীক্ষা করতে হয়। মাত্র ১২৫ জনের পক্ষে এত বাস পুরোপুরি পরীক্ষা করা সম্ভব না।

এ ছাড়া, বাসের সব উপাদান ম্যানুয়ালি পরীক্ষা করা অসম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বিআরটিএর একটি মাত্র ভেহিকল ইন্সপেক্টর মেশিন আছে।'

ফলে, বেশিরভাগ যানবাহন ম্যানুয়ালি পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং ধোঁয়া নির্গমনসহ বেশ কিছু উপাদান পরীক্ষা করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

এ অবস্থায় সক্ষমতার অভাবে রাজধানীতে ত্রুটিহীন যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব।

Comments

The Daily Star  | English
Overview of Rooppur Nuclear Power Plant Bangladesh

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in December

Project deadline extended by 2 years, but authorities hope to complete grid line work before scheduled commissioning

11h ago