পিএসসির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড

পরীক্ষায় ভুয়া পরিচয়ে অংশ নিলে ২ বছরের সাজার বিধান রেখে সংসদে বিল
৪৩তম বিসিএসের ফল প্রকাশ
ছবি: সংগৃহীত

সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) পরিচালিত কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ভুয়া পরিচয়ে কেউ অংশ নিলে ২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে নতুন আইন হচ্ছে।

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৭৭ রহিত করে নতুন আইন প্রণয়নে আজ সোমবার সংসদে এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করা হয়। 

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন বিল ২০২২ জাতীয় সংসদে তুললে বিলটি পরীক্ষা করে ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলটি উত্থাপনের আপত্তি তোলেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি সব ধরনের চাকরি ও মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশ্নফাঁস হচ্ছে দাবি করে বলেন, দক্ষ জনবল নিয়োগর বিকল্প নেই। কিন্তু সরকারি চাকরির নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্য–উপযুক্ত বিবেচিত হওয়ার পর পুলিশি যাচাইয়ের নামে ভিন্নমতের প্রার্থীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। এটি প্রতিকারের বিষয়ে আইনে কিছু নেই। তিনি পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধের জন্য আলাদা আলাদা আইন না করে অভিন্ন একটি আইন করার দাবি জানান।

হারুনের বক্তব্যের জবাবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, অতীতে প্রশ্নফাঁস নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। ২০০১–২০০৬ সালে বেশি ছিল। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

পরে কণ্ঠভোটে হারুনের আপত্তি নাকচ হয়ে যায়। 

বিলে বলা হয়েছে, একজন সভাপতি, অন্তত ৬ জন এবং সর্বোচ্চ ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে কমিশন গঠিত হবে। বিদ্যমান আইনে ভুয়া পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বা প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো সাজার বিধান ছিল না। নতুন আইনে সেটি যুক্ত করা হয়েছে।

কোনো ব্যক্তি পরীক্ষার্থী না হয়েও নিজেকে পরীক্ষার্থী হিসেবে হাজির করলে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে পরীক্ষার সময় পরীক্ষার হলে প্রবেশ করলে বা অন্য কোনো ব্যক্তির নামে বা কোনো কল্পিত নামে পরীক্ষায় অংশ নিলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ড।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে পরীক্ষার জন্য প্রণীত কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য, পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে বলে মিথ্যা ধারণাদায়ক কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য অথবা পরীক্ষার জন্য প্রণীত প্রশ্নের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে বলে বিবেচিত হওয়ার অভিপ্রায়ে কোনো প্রশ্ন সম্বলিত কাগজ বা তথ্য যেকোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণ দণ্ডণীয় অপরাধ। এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। এই অপরাধ আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য হবে।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষা সংক্রান্ত উত্তরপত্র বা এর অংশবিশেষের পরিবর্তে অন্য কোনো উত্তরপত্র বা এর অংশ বিশেষ প্রতিস্থাপন করলে বা পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থী কর্তৃক লিখিত হয়নি এ ধরনের উত্তর সম্বলিত অতিরিক্ত পৃষ্টা কোনো উত্তরপত্রের সঙ্গে সংযোজন করলে তার জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া যাবে।

বিলে আরও বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি কোনো পরীক্ষার্থীকে কোনো লিখিত উত্তর, বই, লিখিত কাগজ, পৃষ্ঠা বা এখান থেকে কোনো উদ্ধৃতি পরীক্ষার হলে সরবরাহ করলে বা মৌখিকভাবে বা যান্ত্রিক কোনো ডিভাইসের মাধ্যমে কোনো প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য সহায়তা করলে তার দণ্ড হবে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদন্ড ও অর্থদণ্ড।

বিলের বিধান অনুযায়ী প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি ছাড়া অন্যান্য অপরাধের সাজা মোবাইল কোর্টের আওতায়ভুক্ত হবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সামরিক শাসনামলে জারি করা অধ্যাদেশগুলো পর্যালোচনা করে আইন আকারে বাংলায় প্রণয়নের বিষয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে পাবলিক পরীক্ষা সসংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দ্য পাবলিক এক্সামিনেশন (অফেনসেস) আইন কার্যকর আছে। এই আইনে পাবলিক পরীক্ষার সংজ্ঞায় পিএসসি আয়োজিত পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত না থাকায় এবং পাবলিক পরীক্ষার সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন আয়োজিত পরীক্ষার মিল না থাকায় প্রস্তাবিত আইনে পিএসসির আওতায় অনুষ্ঠিত পরীক্ষা সংক্রান্ত অপরাধ ও শাস্তির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

BNP rally begins at Nayapaltan

The rally will conclude at Manik Mia Avenue, where the closing speech will be delivered by Tarique Rahman

22m ago