মা-মেয়ে একসঙ্গে দিচ্ছেন এইচএসসি পরীক্ষা

মা-মেয়ে এইচএসসি
এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মা মারুফা আক্তার (বামে) ও শাহী আক্তার (ডানে)। ছবি: সংগৃহীত

ইচ্ছা থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়। সেই কথাই যেন প্রমাণ করলেন দেশের উত্তরের জেলা নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার পূন্যেরঝার চর গ্রামের চার সন্তানের জননী মারুফা আক্তার। গত রোববার থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় বড় মেয়ের সঙ্গে একসাথে অংশ নিয়েছেন তিনি।

পরীক্ষার দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা দেন মারুফা আক্তার।

২০ বছর আগে পৈত্রিক গ্রাম নাউতারার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের পরীক্ষাগুলোতে বরাবরই মেধা তালিকায় থাকা মারুফার ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া শিখে তিনি নিজের পায়ে দাঁড়াবেন।

কিন্তু দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় ২০০৩ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়ে যায়। স্বামী পাশের পূন্যেরঝার গ্রামের সহিদুল ইসলাম। পেশায় একজন মৎস্য ব্যবসায়ী। তারপর কেটে গেছে ১৯ বছর। একে একে জন্ম হয় দুই ছেলে ও দুই মেয়ের। কিন্তু মনের গভীরে লালন করা লেখাপড়া শিখে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার আকাঙ্ক্ষা সবসময় তাকে তাড়িত করত, বলেন মারুফা।

স্বামী ও বড় মেয়ের উৎসাহে ভর্তি হন বাড়ির কাছেই ছোটখাতা ফাজিল মাদ্রাসায়। সেখানে তার সহপাঠি, তারই জৈষ্ঠ্যাকন্যা শাহী আক্তার। ২০২০ সালে তারা সেখান থেকে একই সাথে এসএসসি সমমানের দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। সেবার মারুফার প্রাপ্ত জিপিএ ৪.৬০ এবং মেয়ে শাহী পান ৩.০০।

এরপর মারুফা ভর্তি হন ডিমলা সরকারী শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সরকারী মহাবিদ্যালয়ে, কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অধীন ভোকেশনালে। আর একই প্রতিষ্ঠানে মেয়ে শাহী আক্তার ভর্তি হন একাদশে।

আজ পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রের বাইরে ডেইলি স্টার প্রতিনিধির সাথে কথা হয় মারুফা আক্তারের।

তিনি বলেলেন, 'এসএসসি পাশ না করতেই আমার বিয়ে তারপর একে একে চারটি সন্তানের জন্ম ও লালনপালনের ব্যস্ততার মধ্যেও একটি স্বপ্ন আমাকে সবসময় তাড়িত করত যে, আমি শিক্ষিত হয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব। আমি আজ এইচএসসিতে অংশগ্রহণ করছি। উত্তীর্ণ হলে আমি স্নাতক সম্মানে ভর্তি হতে আশা রাখি।'

স্ত্রীকে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে নিতে আসা মারুফার স্বামী সইদুল ইসলাম বলেন, 'স্ত্রীর একান্ত ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমি তাকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে সবসময় সহযোগিতা করেছি। ভবিষ্যতে তিনি যতদূর পড়াশোনা করতে চান আমি পাশে থাকব।'

মা ও মেয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডিমলা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সরকারী মহিলা মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হাফিজুর রহমান বলেন, 'মারুফা আক্তার একজন শিক্ষানুরাগী। তিনি আমাদের গর্ব।'

ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, মারুফা আক্তার শিক্ষাক্ষেত্রে সবার জন্য অনুপ্রেরণা।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago