‘সৌদি আরবে কত রোহিঙ্গা পাসপোর্ট পাবেন নির্ধারণে হচ্ছে যৌথ কমিটি’

সৌদি আরবে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে কতজন পাসপোর্ট পাবেন তা নির্ধারণে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
Home Minister-1.jpg
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল| ফাইল ফটো

সৌদি আরবে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে কতজন পাসপোর্ট পাবেন তা নির্ধারণে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

পাসপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

আজ রোববার সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদের সঙ্গে বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

এদিন সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি সচিবালয়ে এসে পৌঁছে। সকাল সোয়া ১০টায় বৈঠক শুরু হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আলোচনা বারবার উঠে এসেছে সেটি হলো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে তারা সব ধরনের সহযোগিতা আমাদের দিচ্ছে তাদের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) এবং সরকারি মাধ্যমে। সেটাকে কীভাবে আরও জোরদার করা যায় এবং নিরাপদে ও সসম্মানে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফেরত যাবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা আমাদের জানিয়েছে, তাদের কাছে ৩ লাখ রোহিঙ্গা আছে। এখন তারা সেখানে বসবাস করে এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সবই করছে। আমাদের কাছে সৌদি আরব আবেদন করেছিল, সেটা আমরা দেখছি। আমাদের ব্যবস্থা অনুযায়ী, আমরা পাসপোর্ট নবায়ন করছি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সৌদিতে ২৭ লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করছেন। তারা বিভিন্ন পেশায় নিয়জিত এবং কেউ কেউ ব্যবসা করেন। তারা যেন ব্যবসায় আরও বেশি সুবিধা পান সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

পাসপোর্ট নবায়ন প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা ই-পাসপোর্ট শুরু করেছি। এতে এনআইডি, বার্থ সার্টিফিকেট, আইরিশ ও ফিঙ্গার প্রিন্টের প্রয়োজন হয়। সেগুলো দিতে আমাদের একটু সময় লাগছে। এটা তারা আরও দ্রুত করতে অনুরোধ জানিয়েছে। আমরাও বলেছি, তাড়াতাড়ি করবো। সেই সঙ্গে আমাদের সমস্যাগুলো জানিয়েছি। এই সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা যৌথভাবে একটি কমিটি করবো।

সৌদি আরবে বসবাসরত ৩ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে গেছে কি না জানতে চাইলে কামাল বলেন, আমাদের দেশ থেকে তারা গেছে, আমাদের দেশ হয়ে, এটা সঠিক। রোহিঙ্গারা তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। ৩ লাখ লোক যারা গেছে, আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে যায়নি তারা। তারা তাদের নিজস্ব কৌশলে গেছে।

এ বিষয়ে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, কিছু রোহিঙ্গা আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে গেছে। এখন সেখানে ৩ প্রজন্মের রোহিঙ্গা রয়েছে। ষাট-সত্তরের দশকে গেছে। বাংলাদেশ হওয়ার আগেও পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে গেছে, সে সময় পাকিস্তানের পাসপোর্ট ছিল।

তাদের বাংলাদেশি পরিচয়পত্র দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সৌদি আরব রোহিঙ্গাদের পরিচয়পত্র দিতে বলেনি। বাংলাদেশি যারা সেখানে অবস্থান করছে এবং যাদের পাসপোর্ট নবায়ন করতে হবে সেই প্রক্রিয়া যেন আমরা তরান্বিত করি, সেটাই তারা বলেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে যেমন গেছে এটা সত্যি, আবার বাংলাদেশের বাইরে থেকেও গেছে। পাকিস্তান আমলে কিছু সংখ্যক পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে যদি কিছু গিয়ে থাকে...কিছু সংখ্যক লোক আমরা জানি, তাদের অনুরোধে আমরা পাসপোর্ট দিয়েছিলাম। ৩ প্রজন্ম যারা সৌদি আরবে আছে তাদের আমরা পাসপোর্ট দেবো না, তাদের শনাক্তও করতে যাচ্ছি না। যারা বিশেষ বিবেচনায় গিয়েছিল সেগুলো চিহ্নিত করে, যাদের আমরা পাসপোর্ট দিয়েছি সেগুলো নবায়ন করতে আমরা ওয়াদাবদ্ধ। সেগুলো আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ হচ্ছে সেখানে তাদের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা থাকবেন। যখন যে সমস্যা সামনে আসবে সেটা তারাই সমাধান করবেন। তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করে দেওয়ার জন্যই কমিটি করে দেওয়া হচ্ছে। কমিটি যেটা মনে করবে এটা নবায়ন করে দিতে হবে—বাংলাদেশি, সঙ্গে সঙ্গে তারা নবায়ন করে দেবে। কীভাবে যাচাই-বাছাই হবে তারাই ঠিক করবেন। আমরা আমাদের পাসপোর্টধারীদের প্রাধান্য দেবো, এর বাইরে কাউকে প্রাধান্য দেবো না।

Comments