যারা বলছেন দেশ উন্নত হয়েছে, তাদের পরিবার-সন্তান বিদেশে কেন: আনু মুহাম্মদ

অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বাংলাদেশে সম্পদ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তা না হলে কোটিপতিদের সম্পদ কীভাবে বেড়ে চলেছে।
রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের মাঠে অনুষ্ঠিত ‘তাজরীন শ্রমিক হত্যার দশ বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ছবি: স্টার

অর্থনীতিবিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বাংলাদেশে সম্পদ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তা না হলে কোটিপতিদের সম্পদ কীভাবে বেড়ে চলেছে।

তিনি বলেন, 'কিন্তু তারা বিদেশে টাকা পাচার করছেন, তাদের সন্তানরা বিদেশে পড়ালেখা করছে। আবার পরিবারের সদস্যরাও থাকছেন সেখানে। কিন্তু তারাই আবার বলছেন দেশ অনেক উন্নত হচ্ছে। যদি দেশ উন্নত হয়ে থাকে, তাহলে কেন তারা এদেশে থাকছেন না।'

আজ সোমবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের মাঠে অনুষ্ঠিত 'তাজরীন শ্রমিক হত্যার দশ বছর' শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব বলেন তিনি।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'তাজরীন গার্মেন্টস ও রানা প্লাজার মতো বড় ঘটনার পরেও কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকারের নজর নেই। গত বছর নারায়ণগঞ্জের হাসেম ফুডস কারখানায় শ্রমিকদের মৃত্যু হলো। নজর যে নেই তার প্রমাণ আবার একটি বড় দুর্ঘটনা।'

তিনি আরও বলেন, 'স্বাধীনতার ৫০ বছরেরও সরকার কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। কারখানার শ্রম পরিদর্শক পদে নিয়োগ নেই। কিন্তু আমলা, সচিব, যুগ্ম সচিব, সহকারী সচিব, পুলিশ, র‍্যাব, মিলিটারি এদের নিয়োগ হচ্ছে। এসব নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে কারণ তাদের দরকার। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদে খালি পড়ে আছে। অথচ কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত, শ্রম আইনের পরিবর্তনের দাবি তুললেও সেটি বাস্তবায়নে সরকারের আগ্রহ নেই।'

'তাজরীন গার্মেন্টসের মালিক কিছুদিন জেলে থাকার পর জেলের বাইরে আছে। এ ঘটনার বিচার হবে কিনা এটি নিয়েও সংশয় আছে,' যোগ করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, '১০ দিন পর তাজরীন গার্মেন্টসে নিহতের ঘটনার ১০ বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু, নিহতদের এখনো সংখ্যা হিসাবেই গণনা করা হয়। তাদের অধিকার আজ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয়নি।'

তিনি বলেন, 'ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকদের তালাবন্ধ রেখে কাজ করানোর ঘটনা এখনো পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকার কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি।'

'দেশে গার্মেন্টস শ্রমিক নিহতের ঘটনাগুলোকে সবাই মিলে স্মরণ করতে হবে। আমাদের সমাজে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সবচেয়ে কম ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসাবে বিবেচনা করে মালিকপক্ষ। অথচ শ্রমিকদের রাতদিন খাটুনির মাধ্যমেই তারা ধনী হচ্ছে। শ্রমিকদের স্বার্থ সাধারণ মানুষকেও দেখতে হবে। তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আমাদেরও সোচ্চার হতে হবে,' বলেন সামিনা লুৎফা।

আলোকচিত্রী ও দৃক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম বলেন, 'দেশের গার্মেন্টস মালিকপক্ষ কি দেশের জন্য আয় করছেন? গার্মেন্টস শ্রমিক, প্রবাসীরা দেশের জন্য আয় করছেন। শ্রমিকদের ভালো রাখলে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হলে ফ্যাক্টরি ভালো চলবে। এ বোধটুকু মালিকপক্ষের থাকা দরকার।'

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপতি তসলিমা আখতার। তিনি বলেন, 'আহত গার্মেন্টস শ্রমিকদের পুনর্বাসন করা হয়নি। কষ্টে জীবনযাপন করছেন নিহত গার্মেন্টস শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও শ্রমিকদের মজুরি বাড়ছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা চাই গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।'

আজ রাজধানীর পরিবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের মাঠে তাজরীন গার্মেন্টস অগ্নিকাণ্ডের ছবি নিয়ে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তাজরীন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির নিহত শ্রমিক শাহ আলমের মা সাহেল খাতুন এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।

সাহেল খাতুন বলেন, 'আমার মাথার ওপর বটগাছ ছিল নিহত ছেলে। কিন্তু আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার হয়নি ১০ বছরেও। আদৌ বিচার হবে কিনা সে ব্যাপারেও জানি না।'

Comments