মহিপুরে ১৩ কোটি টাকার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র চালু হয়নি ১ বছরেও

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরে সরকার ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করলেও উদ্বোধনের এক বছরেও তা চালু হয়নি।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি উদ্বোধনের এক বছরেও চালু হয়নি। ছবি: সোহরাব হোসেন/ স্টার

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুরে সরকার ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণ করলেও উদ্বোধনের এক বছরেও তা চালু হয়নি।

অবতরণ কেন্দ্রটিতে চাহিদা অনুযায়ী জায়গা না থাকা এবং মৎস্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের সমন্বয়হীনতার কারণে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এটি চালু না হওয়ায় সরকার বছরে অন্তত ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মৎস্য আহরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের জন্য ২০১২ সালে আলিপুর, মহিপুরে দুইটি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। তবে জমি অধিগ্রহণ করতেই সময় লাগে চার বছর।

২০১৬ সালে ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করে সংস্থাটি।

এখানে নির্মাণ করা হয় ট্রলার থেকে মাছ নামানোর জন্য পল্টুন ও গ্যাংওয়ে, এক হাজার বর্গফুটের অকশন এলাকা, প্যাকেজিং সেট, আড়তদার কক্ষ, বরফকল, জেনারেটর কক্ষ, অফিস ভবন, পয়ঃনিষ্কাশন সুবিধাসহ মাছ পরিবহনের জন্য সাত হাজার বর্গফুটের একটি ট্রাক স্ট্যান্ড।

২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম মহিপুর ও আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র দুটি উদ্বোধন করেন। তবে আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে পুরোদমে জেলে ও পাইকারদের হাকডাকে সরগরম থাকলেও, নিস্তব্ধ মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। সবকিছুই রয়েছে তালাবদ্ধ অবস্থায়।

ছবি: সোহরাব হোসেন/ স্টার

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটিতে ৪০ জন ব্যবসায়ী থাকার সক্ষমতা থাকলেও পুরো মহিপুরে রয়েছেন ৮২ জন নিবন্ধিত ব্যবসায়ী। এ ছাড়া মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পন্টুন ২০টি ট্রলার অবস্থান করার উপযোগী, কিন্তু ৮২ জন ব্যবসায়ীর দুই হাজারেরও বেশি ট্রলার রয়েছে। এ ছাড়া পাইকার আছেন ২০০ ও শ্রমিক রয়েছেন ৮০০ জন। মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, চাহিদা অনুযায়ী সক্ষমতা না থাকায় অবতরণ কেন্দ্রে ভিড়তে চান না তারা।

মহিপুরের আড়তদার মনির হোসেন বলেন, 'আমাদের ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি নির্মাণ করলেও এখন এটি কোনো কাজে আসছে না। এর মূল কারণ পরিকল্পিতভাবে এটি নির্মাণ করা হয়নি। মহিপুরে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত শতাধিক ব্যবসায়ী আছেন; কিন্তু অবতরণ কেন্দ্রের সক্ষমতা আছে ৪০ জনের। দরকার হলে ব্যবসা ছেড়ে দেব। তারপরও ওখানে যাব না।'

মহিপুর মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ রাজা বলেন, 'আমাদের মহিপুরের ব্যবসায়ী, পাইকার ও শ্রমিকদের দাঁড়ানোর জায়গা পর্যন্ত হবে না অবতরণ কেন্দ্রে। এ ছাড়া ২ হাজার ট্রলারের জন্য একটি পন্টুন এখানে পাওয়া অসম্ভব। তারা যদি এটি নির্মাণ করার আগে আমাদের পরামর্শ নিয়ে করতেন, তাহলে এই সমস্যা হতো না। তারপরও আমরা বলেছি আপনারা জায়গা বড় করেন। আমরা সবাই যাব।'

মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক মো. শাকিল আহমেদ বলেন, 'মহিপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এক বছরেও অপারেশনে যেতে পারেনি। কারণ ব্যবসায়ীরা আসতে চাইছেন না। আমাদের এখানে জায়গা কম হলেও বাড়ানোর সুযোগ আছে, আমরা তাদের অনেকবার বলেছি। এর জন্য বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। ব্যবসায়ীরা না আসায় সরকার বছরে অন্তত ৫ কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে।'

কুয়াকাটা ও আলীপুর মৎস্য সমবায় সমিতির সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা বলেন, অবতরণ কেন্দ্রটি চালু হলে মহিপুরের ট্রলারমালিক, জেলে, আড়তদার, পাইকারসহ সবাই এক ছাদের নিচে মাছ কেনাবেচা এবং রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করবেন। এতে মৎস্য খাতের ভোগান্তি এবং সমস্যা অনেকটাই লাঘব হবে।

Comments