বিপজ্জনক খোলা ম্যানহোল

সালাম উদ্দিন তার ৬ বছরের ছেলের চোখের সমস্যা নিয়ে গত সপ্তাহে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যাচ্ছিলেন।
খোলা ম্যানহোল
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনে খোলা ম্যানহোল। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

সালাম উদ্দিন তার ৬ বছরের ছেলের চোখের সমস্যা নিয়ে গত সপ্তাহে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু, পথে ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলে শিশুটির শরীর প্রায় অর্ধেক ঢুকে যায়। গুরুতর আঘাত লাগে পায়ে। চোখের চিকিৎসা বাদ দিয়ে অনন্যোপায় হয়ে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় শিশুটিকে।

ভুক্তভোগী মিরপুর-১ এর বাসিন্দা সালাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাগ্য ভালো সেদিন ও ম্যানহোলের গভীরে পড়ে যাওয়ার আগেই আমি ছেলেটার হাত শক্ত করে ধরে রাখতে পেরেছিলাম। চোখের সমস্যা নিয়ে মানুষ এই হাসপাতালে আসে তার সামনে কীভাবে এমন ম্যানহোল খোলা রাখে।'

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়কে, শিশুমেলা ফুটব্রিজ থেকে চক্ষু হাসপাতাল পর্যন্ত ২৪টির মধ্যে ১৯টি ম্যানহোল এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ঢাকনাবিহীন। বাকি ৬টিতে বাঁশের বেড়া ও গাছের ডাল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। এসব ঢাকনাবিহীন ম্যানহোল যা স্থানীয়দের ভাষায় 'মৃত্যু ফাঁদ' যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে।

রাতের বেলা পথচারীদের জন্য পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে। কারণ রাস্তাটিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চলমান রাস্তা মেরামত কাজের কারণে শুধুমাত্র একমুখী চলাচলের অনুমতি আছে। এজন্য সেখানে পর্যাপ্ত সড়ক বাতিও নেই। প্রায় ৫ মাস ধরে ডিএনসিসি রাস্তার কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটি লেনের নির্মাণ শেষ করার পর, নতুন তৈরি ম্যানহোলে ঢাকনা স্থাপন করেনি হাসপাতালের সামনে।

গত সপ্তাহে সরেজমিনে দেখা যায়, শিশুমেলা থেকে আর্কাইভস অ্যান্ড লাইব্রেরি অধিদপ্তর ভবন পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কে অন্তত ৮০টি ম্যানহোল আছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় এক মাস ধরে ম্যানহোলগুলো খোলা পড়ে আছে। প্রতি সপ্তাহে পথচারীদের ম্যানহোলে হোঁচট খাওয়া, এমনকি শরীরের অর্ধেকাংশ তার ভেতর চলে যায়। এরকম প্রায় ৩ থেকে ৪টি ঘটনা ঘটছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এ বিষয়ে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

২৫০ শয্যা টিবি হাসপাতাল নিরাপত্তা কর্মী সাদেক হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, প্রায় এক মাস ধরে হাসপাতালের সামনের সড়কে খোলা ম্যানহোল। প্রতিদিন অন্তত এক হাজার রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে। তাদের জন্য এরকম খোলা ম্যানহোল মৃত্যু ঝুঁকি।

তিনি বলেন, ৭ দিন আগে এক নারী ম্যানহোলে পড়ে গিয়েছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তারপর ৪ দিন আগে এক শিশু পড়ে গিয়েছিল তাকে আমি উদ্ধার করি। গত এক মাসে আমি ৫ জনকে ম্যানহোলে পড়তে দেখেছি।

স্থানীয় জুতার দোকানদার সোহেল হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, টিবি ও চক্ষু রোগীদের জন্য ২ হাসপাতাল পাশাপাশি হওয়ায় সারাদেশ থেকে মানুষ আসে। সকাল ৭ টা-৯টা পর্যন্ত ফুটপাতে পা রাখার জায়গা থাকে না। তখন খালি ম্যানহোল খুবই বিপজ্জনক তাদের জন্য।

তিনি বলেন, ম্যানহোলগুলোয় বাঁশের বেড়া দিয়ে ঢাকা হলেও সেগুলো মজবুত না। বেশিরভাগ বেড়া ম্যানহোলের তুলনায় ছোট। তাই ঢাকা ম্যানহোল বেশি বিপজ্জনক।

চক্ষু হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মী আনসার সদস্য আশিরুল ইসলাম জানান, সারাদেশ থেকে প্রতিদিন অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। এ হাসপাতালে আসার পথে ফুটপাথে খোলা ম্যানহোল তাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক।

ফুটপাতে টাইলস ও ম্যানহোলে ঢাকনা বসানোর কাজ করছে বেসরকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জনি এন্টারপ্রাইজ। সম্প্রতি, ২ দিন গিয়ে দেখা যায় তাদের কাজ চলছে না। সেখানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায়নি।

নির্মাণ শ্রমিক কাশেম বলেন, টাইলস ও ম্যানহোলে ঢাকনা বসানোর কাজ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা আছে।

ডিএনসিসির আওতাধীন ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাস্তায় স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল ও অফিসসহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক স্থাপনা রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যেই ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য তাগাদা দিয়েছি।'

Comments