২০ হাজার মেট্রিক টন সার গায়েব

যমুনা সার কারখানার বরখাস্ত ৩ কর্মকর্তাকে পুনর্বহালের চেষ্টা

জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার তারাকান্দিতে দেশের বৃহৎ ও একমাত্র দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানার (জেএফসিএল) প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন সার গায়েবের ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যমুনা সার কারখানা। ছবি: সংগৃহীত

জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার তারাকান্দিতে দেশের বৃহৎ ও একমাত্র দানাদার ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানার (জেএফসিএল) প্রায় ২০ হাজার মেট্রিক টন সার গায়েবের ঘটনা ধামাচাপার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৩ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের পুনর্বহাল করা হচ্ছে বলেও গুঞ্জন উঠেছে।

জেএফসিএল সূত্র জানায়, যমুনা সার কারখানায় উৎপাদিত সারের ১ নম্বর গুদামে রক্ষিত ইউরিয়ার হিসাবে গড়মিলের অভিযোগ পায় কর্তৃপক্ষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থার (বিসিআইসি) করপোরাল ডাইরেক্টর মো. ছাকী হোসেনকে আহ্বায়ক ও জেএফসিএল'র সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. সিদ্দিকুর রহমানকে সদস্য সচিব করে ৬ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে গুদামে রক্ষিত ১৯ হাজার ১৩৩ দশমিক ১৩ মেট্রিক টন সার ঘাটতির প্রমাণ মেলে। যার সরকারি বাজারমূল্য ৩০ কোটি ২৬ লাখ ৬৩৬ টাকা।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিসিআইসি চেয়ারম্যান শাহ মো. এমদাদুল হক গত বছরের ১৮ নভেম্বর কারখানার তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) খোকন চন্দ্র দাস, বাণিজ্যিক বিভাগের ব্যবস্থাপক (বিক্রয় প্রধান) ওয়ায়েছুর রহমান ও ব্যাগিং ইনচার্জ (উপ-প্রধান রসায়নবিদ) নজরুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। একইসঙ্গে তাদের চাকরি থেকে কেন স্থায়ী বরখাস্ত ও যথোপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে না, এই মর্মে ১০ দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া, কারখানার আরও ৬ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়।

সাময়িক বরখাস্তকৃত ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনে সার ঘাটতিসহ দায়িত্বে অবহেলা, অসদাচরণ, অদক্ষতা, চুরি, আত্মসাৎ, তহবিল তছরুপ ও প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণিত উল্লেখ করা হলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ফৌজদারি মামলা হয়নি। ঘটনার এক বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কাজ এখনো শেষ হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, বিসিআইসি'র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সাময়িক বরখাস্তকৃত খোকন চন্দ্র দাস, ওয়ায়েছুর রহমান ও নজরুল ইসলাম চাকরিতে পুনর্বহালের চেষ্টা করছেন।

সম্প্রতি কারখানায় এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত খোকন চন্দ্র দাস দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে তাদের ৩ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা হওয়ার পরই চাকরির ভবিষ্যৎ বলা যাবে।

কারখানার ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিসিআইসির তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ৩ জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান। কিছুদিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা হতে পারে। এর আগপর্যন্ত কিছু বলা সম্ভব না।'

Comments