চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়: টেস্টে নয়, টাকায় মেলে স্বাস্থ্য সনদ

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গভীর রাতে দরজা-জানালা বন্ধ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্বাচিত সহকারী শিক্ষকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর টনক নড়েছে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরীর।

পরে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের কোনো বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে সরকারি চাকরিতে নির্বাচিতদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যাবে না।

এদিকে, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গভীর রাতে সরকারি সহকারী শিক্ষক পদে নির্বাচিতের গোপনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। জেলা প্রশাসক দপ্তরের এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে গত বুধবার এই কমিটি গঠন করা হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

জানা গেছে, ১৭ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কনফারেন্স হলে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের শারীরিক (ফিটনেস) পরীক্ষার নমুনা নিচ্ছিলেন সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা। এ ঘটনা জানতে পেরে সেখানে পুলিশ নিয়ে অভিযান চালান সিভিল সার্জন ডা. মো. ইলিয়াছ চৌধুরী। সেসময় কয়েকজনকে পুলিশেও সোপর্দ করেন তিনি। তবে রহস্যজনক কারণে সিভিল সার্জন পরে নিজেই তাদের ছাড়িয়ে নেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

সিভিল সার্জন বিষয়টি স্বীকার করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গোপনে শারীরিক পরীক্ষার নমুনা নেওয়ার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেটি বন্ধ করে দিয়েছি। ওই রাতে সেখানে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ম্যাক্সের দুজন লোককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করেছি। শোকজের জবাব পেলেই জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

তবে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করো হয়েছে? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেননি।

তবে তিনি বলেন, 'তদন্তে কারও জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তাদের বিরুদ্ধে চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

অভিযোগ উঠেছে, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কন্ট্রোলরুমের দায়িত্বে থাকা প্রভাবশালী এক কর্মচারী এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্প্রতি সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামেও সরকারি সহকারী শিক্ষক পদে এক হাজার ২০২ জন চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছেন। এখন তারা শারীরিক ফিটনেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন। আর সরকারি এই বিধির সুযোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সংঘবদ্ধ একটি সিন্ডিকেট।

গত ১৭ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সরকারি সরকারী শিক্ষক পদে উত্তীর্ণদের 'ফিটনেস সনদ' দিতে মেডিকেল টেস্টের নমুনা সংগ্রহ করছিল সংঘবদ্ধ চক্রটি। নগরীর মেহেদীবাগে অবস্থিত বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারীকে দিয়ে গোপনে এই কাজ করা হচ্ছিল। মেডিকেল টেস্টে রিপোর্ট যাই আসুক না কেন, টাকার বিনিময়ে চক্রটি 'ফিটনেস সার্টিফিকেট' বানিয়ে দেয় বলে ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন একাধিক চাকরি প্রার্থী।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চলতি বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চট্টগ্রাম জেলায় মোট এক হাজার ২০২ জনকে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকের জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে যাদের শারীরিক পরীক্ষায় ফিটনেস সনদ, কাগজপত্র ও পুলিশ ভেরিফিকেশন সঠিক হবে, তারাই নিয়োগ পাবেন।'

তিনি আরও বলেন, 'সিভিল সার্জন অফিস থেকে এই স্বাস্থ্য সনদ ইস্যু করা হয়। আনফিট ব্যক্তিকে ফিট বলে সনদ দিলে স্বাস্থ্য বিভাগই দায়ী থাকবে।'   

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago