থেমে আছে ইছামতীর দখল উচ্ছেদ ও খনন কাজ

পাবনার ইছামতী নদী অবৈধ দখলমুক্ত ও খনন কাজ আবারও মুখ থুবড়ে পড়েছে। উচ্ছেদ ও খনন শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ে অর্ধেক কাজও এগোয়নি।
 ইছামতী নদী খনন
খনন করা এলাকায় আবারও পলি জমে আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে নদী। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

পাবনার ইছামতী নদী অবৈধ দখলমুক্ত ও খনন কাজ আবারও মুখ থুবড়ে পড়েছে। উচ্ছেদ ও খনন শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ে অর্ধেক কাজও এগোয়নি।

মামলা জটিলতায় আটকে গেছে উচ্ছেদ কার্যক্রম। ফলে নির্ধারিত কাজ শেষ না করেই প্রকল্প এলাকা ছেড়ে চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও নদী খননে প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ না নেওয়ায় বেশিরভাগ টাকা ছাড় করা আটকে গেছে। খনন করা এলাকায় আবারও পলি জমে আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে নদী। উচ্ছেদ করা এলাকাতে আবারও দখল প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

ইছামতী নদী
কাজ শেষ না করেই প্রকল্প এলাকা ছেড়ে চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫.৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২.৬৭ কিলোমিটার উৎসমুখ খননসহ শহরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত আরও ৫.৬৭ কিলোমিটার নদী খননের কাজ এবং ২.৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে পাবনা শহর দিয়ে প্রবাহিত নদী অবৈধ দখলমুক্ত করতে ২০২১ সালের মার্চে ২টি আলাদা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

পাবনার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে এ প্রকল্প নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। উচ্ছেদ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত থাকলেও খনন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন মাসে শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে মাত্র ৩০ শতাংশ খনন কাজ করেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ছেড়ে চলে গেছে।

খনন করা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পরিপূর্ণভাবে নদী খনন না করায় এবং নদীতে পানির প্রবাহ না আসায় খনন করা এলাকায় পলি ও নর্দমা জমে আবারও আগের অবস্থায় ফিরে গেছে নদী।

ইছামতী নদী
উচ্ছেদ ও খনন শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ে অর্ধেক কাজও এগোয়নি। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

পাবনা শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার এলাকার নদী পাড়ের বাসিন্দা ও স্থানীয় দোকানি মো. ইসমাইল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, নদী পাড়ে তাদের বাড়িঘর উচ্ছেদ করে নদী খনন করা হলেও এক বছরের ব্যবধানে নদীতে আবারও পলি ও আবর্জনা জমে আগের মতো ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

শহরের অদূরে বাংলাবাজার স্লুইচ গেট এলাকায় নদীর উৎসমুখের ২.৬৭ কিলোমিটার এলাকা খনন করা হলেও পানির প্রবাহ না থাকায় আবারও ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাহিন রেজা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নদীর পুরো অংশে খনন করে নদীতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা না গেলে নদী খনন অর্থহীন। ইছামতী নদীতে প্রাণ ফেরাতে হলে নদীর পুরো অংশ খনন করে নদীতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে।'

পাবনার পরিবেশ আন্দোলনের সংগঠক আব্দুল হামিদ খান বলেন, 'পাবনা শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ইছামতী নদী দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ দখল ও দূষণের কারণে শহরের জনজীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।'

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরওয়ার জাহান সুজন ডেইলি স্টারকে বলেন, '১ হাজার ৫৩টি অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়। ৬১০টি স্থাপনা উচ্ছেদের পর মামলা জটিলতায় উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে, প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছর পর্যন্ত আছে।'

এদিকে উচ্ছেদ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার অজুহাতে খনন প্রকল্পের কাজ মাত্র ৩০ শতাংশ করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ ছেড়ে চলে যায়। পরে তারা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য কোন আবেদন করেনি ফলে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় খনন প্রকল্প অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা।

ইছামতী নদী
নদীতে পানির প্রবাহ না আসায় খনন করা এলাকায় পলি ও নর্দমা জমে আবারও আগের অবস্থায় ফিরে গেছে নদী। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু

তিনি আরও বলেন, 'প্রকল্পের কাজ পুরো শেষ না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে মাত্র ১৩ শতাংশ বিল দেওয়া হয়েছে। কাজ না হওয়ায় প্রকল্পের বাকি টাকা ছাড় করা হয়নি।'

তবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই নির্বাহী প্রকৌশলী মনে করেন ইছামতী নদীতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হলে মহাপ্রকল্প গ্রহণ করতে হবে।

তিনি জানান, সিএস ম্যাপ ধরে ইছামতী নদীকে দখলমুক্ত করে ৩৮ কিলোমিটার এলাকা খনন করে পুরোপুরি প্রবহমান করতে ১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে ইছামতী নদীতে প্রাণ ফিরবে।

তবে, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি মো. রুহুল আমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে আমাদের খনন এলাকা বুঝিয়ে দিতে পারেননি। এছাড়া, বারবার কাজ পেছানোয় সময়মতো কাজ করা সম্ভব হয়নি। আর যখন প্রকল্পের মূল্য নির্ধারণ করা তখন ব্যয় ছিল একরকম। কিন্তু, পরবর্তীতে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের খরচ বাড়ে এবং আমাদের লোকসানে পড়তে হয়।'

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, 'উচ্ছেদ অভিযান শুরুর পর থেকে ৭০ জনের বেশি দখলদার জমির মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। আদালত বিভিন্ন মামলায় স্থগিতাদেশ ইস্যু করায় প্রকল্প কাজ বন্ধ রাখতে হয়। কিন্তু, আমরা মামলা লড়ছি।'

Comments