মানুষ ন্যায়বিচার পাক, ভালো থাকুক সেটাই আমরা চাচ্ছি: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার বাবা-মায়ের হত্যার বিচার পেতে আমাকে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। বারবার আমার জীবনের ওপর আঘাত এসেছে, তারপরও আমি বেঁচে আছি। মহান আল্লাহ আমাকে এই দিনগুলো দেখাবে বলেই আমি বেঁচে আছি।
সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ৫৯তম বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমার বাবা-মায়ের হত্যার বিচার পেতে আমাকে ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। বারবার আমার জীবনের ওপর আঘাত এসেছে, তারপরও আমি বেঁচে আছি। মহান আল্লাহ আমাকে এই দিনগুলো দেখাবে বলেই আমি বেঁচে আছি।

তিনি বলেন, 'আমি যতক্ষণ আছি, কাজ করে যাব। তবে আমি চাই সব মানুষেই যেন ন্যায় বিচার পায় এবং দ্রুত মামলাগুলো নিষ্পত্তি হয়। একটি স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার সৃষ্টি হয়। সে পরিবেশটা যেন থাকে সেটাই আমরা চাই।'

আজ সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের ৫৯তম বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

বিচারকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা আইন প্রণয়ন করি, আপনারা আইন ব্যবহার করেন। কাজেই সেখানে যখন যেটা হয়, আমরা সংশোধন করি এবং আরও উন্নত করি। যা-ই করি মানুষের কল্যাণে। মানুষের উন্নয়নে এবং মানুষের ভাগ্য, মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার জন্য আমরা এটা করি। এটাই আমাদের কাজ। মানুষ ন্যায়বিচার পাবে, মানুষ সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুক সেটাই আমরা চাচ্ছি।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি বাংলাদেশের একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানাবিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না। কেউ দরিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হবে না। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান যেন উন্নত হয় সেই লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি। যতবার আমার ওপর আঘাত এসেছে, সব মামলাও করতে পারিনি। অনেক ক্ষেত্রে মামলা করারও সুযোগ ছিল না তখন। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময় আমরা মামলা করতে পারিনি। যেগুলো মামলা হয়েছিল সেগুলো আপনারা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন এবং দোষীরা সাজা পাচ্ছে। এটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা।'

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, '২০০৮ সালের ঘোষণা অনুসারে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। করোনা মহামারির সময় সবকিছু যখন স্থবির তখন এই ভার্চুয়াল কোর্ট প্রতিষ্ঠা করে বিচার যাতে চলে সেই ব্যবস্থাটা তখন আমি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করি এবং তাকে আমি অনুরোধ করেছিলাম আপনি ভার্চুয়াল কোর্ট করেন। যদিও বিষয়টা আমাদের কাছে একটি নতুন ধারণা ছিল। আমার একজন তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা আছেন আপনারা জানেন। তিনি এ বিষয়ে যথেষ্ট পারদর্শী। সজীব ওয়াজেদ জয় আমাকে পরামর্শ দিয়েছিল ভার্চুয়াল কোর্ট করলে পরে তোমাদের বিচার কাজ চলতে পারে এবং প্রধান বিচারপতিকে আমি অনুরোধ করেছিলাম। আলাপ আলোচনা করেই ভার্চুয়াল আদালত করা হয়।'

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা চাচ্ছি আমাদের দেশটা আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হোক। ভার্চুয়াল আদালত হওয়ার পরে মামলা খুব দ্রুত নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। আমাদের যারা আইনজীবী তাদের জন্য খুব সুবিধা হয়ে গেছে। যেখানেই থাকুক দেশে বা বিদেশে থাকুক, তারা কোর্টে কেসগুলো চালাতে পারছে। ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে আমরা এ কাজগুলো করতে চাচ্ছি।'

তিনি বলেন, 'বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমরা তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বিচার বিভাগের সব ক্ষেত্রে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে। সারাদেশে ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ই-জুডিশিয়ারি চালু করা গেলে মামলা ব্যবস্থাপনায় আরও গতি আসবে।'

বিচারকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের জুডিশিয়াল অ্যাকাডেমি প্রতিষ্ঠিত করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'একটি আন্তর্জাতিক মানের জুডিশিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা হবে। ইতোমধ্যে জায়গা দেখা হয়েছে। তবে সে জায়গাটি কার্যকর কিনা সেটাও জানা হবে। সেই সঙ্গে একটি আইনি বিশ্ববিদ্যালয় আমরা প্রতিষ্ঠা করব। আমি মনে করি সর্বক্ষেত্রেই ট্রেনিংটা একান্ত দরকার।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমার ইচ্ছে আছে এই জুডিশিয়াল সার্ভিসকে আরও আধুনিক যুগোপযোগী করার। এমন একটি একাডেমি করব, সেটা যেন আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন হয়। যেন বিশ্ব থেকে এসে দেখতে পারে। আমরা যেমন বিদেশে পাঠাবো ট্রেনিংয়ের জন্য, বিদেশ থেকেও যেন ট্রেনিংয়ের জন্য আমাদের কাছে আসে।'

'ইতোমধ্যে আমরা বাসস্থানের জন্য, ফ্ল্যাট বহুতল ভবন করে দিচ্ছি এবং এটা শুধু ঢাকা শহরে না আমরা প্রতিটি জেলায় জেলায় নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেব। আর সেই সঙ্গে আমরা আমাদের বিচারকদের সার্বক্ষণিক গাড়ির সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য, গাড়ি ক্রয় করার জন্য যে ঋণ নগদায়ন এ ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব। সেটা আমরা করে দেব। আমি নিজেও চাই।'

সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা। এর জন্য আমাদেরকে কিছুটা কৃচ্ছতা সাধন করতে হচ্ছে। সারা বিশ্বে একই অবস্থা। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গে আবার সেকশন পাল্টা সেকশন। আমেরিকার এই সেকশনের কারণে আমাদের যে পণ্য বিশেষ করে বিদেশ থেকে যেগুলো কিনতে হয় সেগুলোর এত বেশি দাম বেড়ে গেছে, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে, ভোজ্য তেলের মূল্য বেড়ে গেছে, গম, চিনি, সার কিনতে হচ্ছে। আমরা যে ক্রয় করি বিদেশ থেকে সেগুলো কয়েকগুণ বেশি মুদ্রাস্ফীতি। সারা বিশ্বব্যাপী উন্নত দেশ, ধনী দেশগুলো নিজেদেরকে এখন অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা করে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশে এখনো আমরা সেই অবস্থায় পৌঁছায়নি। সে কারণে আমি সবাইকে আহ্বান করেছি যার যেখানে যেটুকু জায়গা আছে, যে যা পারবেন অন্তত উৎপাদন করার। অন্তত খাদ্যপণ্যের কোনো কারণে কারো কাছে হাত পেতে না চলতে হয়, জ্বালানি তেল হোক, ভোজ্যতেল হোক, বিদ্যুৎ ব্যবহারের সবাইকে সাশ্রয়ী হতে হবে। নিজের কাজটা করলে, নিজের হাতে সুইচটা বন্ধ করে রাখলে এতে দোষের কিছু নেই। এতে সম্মানহানি হবে না। আমি নিজে করে থাকি। আমি করি আমার ছেলে-মেয়েরা করে। পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়া দরকার।'  

Comments

The Daily Star  | English

Climate change to wreck global income by 2050: study

Researchers in Germany estimate that climate change will shrink global GDP at least 20% by 2050. Scientists said that figure would worsen if countries fail to meet emissions-cutting targets

1h ago