নতুন বছরের সংকল্প

রাত পেরোলেই শুরু হচ্ছে নতুন একটি বছর। নতুন বছর মানেই পুরনো থেকে রূপান্তরের প্রতীক। অতীত অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে আরও সামনে এগিয়ে যেতে নিজেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বা সংকল্প করার একটি ভালো সময় নতুন বছরের শুরুটা।

নতুন বছরে নতুন শপথ নেওয়ার রীতি ছিল ৪ হাজার বছর আগে ব্যাবলিয়ানদের মাঝেও। নতুন রাজার রাজ্যাভিষেক, ঈশ্বরের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে তারা বেছে নিতেন নতুন বছরকে।

প্রাচীন রোমান যুগ ও মিশরীয়দের মাঝেও এভাবে শপথ নেওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। তবে সেই শপথগুলো ছিল নৈতিক ও ধর্মীয়।

নরওয়ের একদল মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এক সমীক্ষায় দেখতে পান, বিশ্বে প্রতি বছর যত মানুষ 'নিউ ইয়ার রেজোলিউশন' গ্রহণ করেন, তার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করতে পারেন।

নতুন বছরের সংকল্প কীভাবে নির্ধারণ ও পূরণ করা যায় তা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের 'শিশু ও কিশোর' মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ বলেন, 'প্রথম থেকেই আমরা "করতে হবে"র তালিকায় এমন কিছু যোগ করি, যা আদতে সম্ভব নয়। আবার অনেক সময় এমন কিছু রাখি, যা মেনে চলা খুবই সহজ। সেই সহজ নিয়ম মানতে মানতে আমরা নিজেদের অজান্তেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলি। নিজের সংকল্প নিজেকেই পর্যালোচনা করে দেখতে হবে।'

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য

সংকল্প হতে হবে সুনির্দিষ্ট। যেমন: লক্ষ্য হবে ১০০ বই পড়া। সেক্ষেত্রে মাসে কয়টি বই এবং দিনে কত পৃষ্ঠা পড়তে হবে সেটা নির্ধারণ করে ফেলতে হবে। দিনের কোন সময়ে বই পড়বেন তাও নির্ধারণ করতে হবে। লক্ষ্য যত সুনির্দিষ্ট হবে, সংকল্প পূরণের দিকে ধাবিত হওয়া ততই সহজ হবে।

লক্ষ্যে লক্ষ্য

সংকল্প পূরণে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা খেয়াল রাখতে হবে। বছরে '১০০ বই' পড়ার সংকল্প নিলে প্রতিদিন পড়তে পারছেন কি না, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিদিন কতটুকু পড়ছেন তা একটি নোটবুকে লিখে রাখা যেতে পারে। তাহলে বোঝা যাবে, আসলে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে।

অর্জনযোগ্য লক্ষ্য

সংকল্প এমন কোনো বিষয়ে করা উচিত না, যা সাধ্যের বাইরে। ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ বলেন, 'এইখানে আমরা বড় ভুল করে থাকি। এমন সব লক্ষ্য নির্বাচন করি, যা লক্ষ্য ও প্রাপ্তির মধ্যে বিস্তর ফারাক তৈরি করে। ফলে আমরা একটা সময় হাল ছেড়ে দেই।'

তিনি পরামর্শ দেন, খুব দ্রুত একটি বড় কাজের চেষ্টা না করে সাধ্যের মধ্যে থাকবে এমন লক্ষ্য নির্বাচন করা উচিত।

প্রাসঙ্গিক লক্ষ্য

কানাডিয়ান মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. মাইকেল বেনেট বলেন, 'এমন সংকল্প নেওয়া উচিত, যা আপনার জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে, আপনার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। পাশাপাশি এমন ব্যক্তিদের জীবনে আনুন, যারা আপনার প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করবে।'

কেন আপনি এটি অর্জন করতে চান? জীবনে কি এর আসলেই প্রয়োজন আছে, নাকি সাময়িক ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লক্ষ্য নির্বাচন করছেন, তা নির্ধারণ করতে হবে আগে।

সময় নির্ধারণ

লক্ষ্য পূরণের জন্য বাস্তবসম্মত সময় নির্ধারণ করা উচিত। ১ মাসে ১০০ পড়া যেমন কঠিন কাজ, তেমনি ১ মাসে ২০ কেজি ওজন কমানোর পরিকল্পনাও অস্বাস্থ্যকর পন্থা। লক্ষ্য পূরণের জন্য নিজেকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে। 'দ্য পাওয়ার অব হেবিট' এর রচয়িতা চার্লস ডুইহিগ বলেন, 'আপনি যদি একটি অভ্যাস তৈরি করেন, তাহলে তা পরবর্তী সারা জীবনের জন্য হওয়া উচিত, কয়েকদিনের জন্য না। লক্ষ্যকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে তা পূরণের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
NCP protest rally for election commission reform

NCP unveils crowdfunding-based model to finance activities

The party has sold around 50,000 membership forms priced at Tk 100 each

5m ago