১১৯ কোটি টাকা ‘অপচয়ে’র পর ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়’ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা

১১৯ কোটি টাকা ‘অপচয়ে’র পর ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায়’ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা

১৫ বছরে ট্রাফিক লাইটের পেছনে ১১৯ কোটি টাকা ব্যয় করার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) চালিত সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, এই উদ্যোগও ব্যর্থ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. শামসুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শহরে যথাযথ ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকলে কোনো ডিজিটাল উদ্যোগই কার্যকর হবে না।'

তিনি বলেন, 'যত খুশি তত প্রকল্প গ্রহণ করা যায়। কিন্তু ডিজিটাল সিস্টেম এখানে কাজ করবে না, অতীতেও করেনি, ভবিষ্যতেও করবে না।'

অধ্যাপক মো. শামসুল হক বলেন, 'আমাদের সড়ক নেটওয়ার্ক সুশৃঙ্খল নয়। লেন বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা নেই, মোটরচালিত যান ও পেশীচালিত যান একই রাস্তায় চলাচল করে এবং যানবাহনের পরিমাণ রাস্তার ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। এমন অবস্থায় কোনো প্রযুক্তিই কাজ করবে না।'

তবে, প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শুরু করেছে ডিএসসিসি।

ডিএসসিসির ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মো. বোরহান উদ্দিন সম্প্রতি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সম্ভব্যতা যাচাই করতে ৫৩টি ট্র্যাফিক সিগন্যালে কাজ করতে ইপিসিকে (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালটেন্টস লিমিটেড) পরামর্শদাতা সংস্থা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।'

ডিএসসিসি ইতোমধ্যে ইপিসিকে পরামর্শ ফি বাবদ ৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে।

বোরহান জানান, তারা ৪ মাসের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন পাবেন বলে আশা করছেন।

তিনি বলেন, 'একাধিক ক্যামেরা ও অন্যান্য ডিভাইসের সঙ্গে এআই প্রযুক্তি ট্র্যাফিকের ভলিউম নিরীক্ষণ করতে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে সক্ষম হবে। তবে প্রযুক্তিটি কার্যকর করতে সময় লাগবে। কারণ এর জন্য তহবিল ও সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন।'

এই প্রকল্পের বাজেট বিষয়ে জানতে চাইলে বোরহান জানান, তারা এখনো এটা নিয়ে কাজ করেনি।

ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিএসসিসি অতীতে যে উদ্যোগগুলো নিয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল সিগন্যাল লাইট স্থাপন, কাউন্টডাউন, সৌর প্যানেল এবং ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড।

স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাফিক লাইটগুলো ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে প্রথম স্থাপন করা হয়। তবে সেগুলো মেনে যানবাহন চলাচল করেনি এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শিগগিরই তা অকার্যকর হয়ে যায়।

২০১২-১৩ সালে ডিএসসিসি সেগুলো সংস্কার করে এবং পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে। তবে, এই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়।

পরবর্তীতে লাইটগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্র্যাফিক পুলিশকে রিমোট কন্ট্রোল দেওয়া হয়েছিল। সেটাও ১ মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি।

তারপর থেকে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হাতের ইশারাই ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি কিছু জায়গায় দড়ি ও বাঁশও ব্যবহার করা হয় যানবাহন আটকে রাখতে।

বিশ্ব ট্রাফিক সূচক ২০২০ অনুযায়ী, জরিপ করা ২৪১টি শহরের মধ্যে খারাপ ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ঢাকা সপ্তম।

বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই) জানিয়েছে, গত বছর ঢাকা শহরে যানজটের কারণে দেশে আনুমানিক ৫৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞরা এই পরিস্থিতির জন্য অবিবেচনাপ্রসূত ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনা, অবাস্তব প্রকল্প এবং জনাকীর্ণ রাস্তায় নতুন যানবাহনের জন্য অপরিকল্পিত অনুমোদনকে দায়ী করেছেন।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, 'একটি শহরের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ এলাকা সড়ক হওয়া উচিত, কিন্তু ঢাকায় আছে ১০ শতাংশেরও কম।'

তিনি বলেন, 'সিটি করপোরেশন ও ইউটিলিটি সার্ভিস প্রোভাইডারদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, অনিয়ন্ত্রিত পার্কিং এবং হকারদের অব্যবস্থাপনার কারণে এই সীমিত পরিমাণ সড়কেরও ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করা যাচ্ছে না।'

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিবুর রহমান বলেন, 'নগরীর ট্রাফিক সিগন্যালগুলো সচল করতে একটি সমন্বিত পরিকল্পনা জরুরি এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের মধ্যে সমন্বয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'

তিনি বলেন, 'ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির মতো ট্রাফিক পুলিশ কেবল একটি স্টেকহোল্ডার।'

সংক্ষেপিত: পুরো প্রতিবেদনটি AI-Run Traffic Signal: Thoughtless, likely to fail লিংকে

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago