২ ‘চোরাকারবারিকে’ অপহরণের অভিযোগ, ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি
মিয়ানমারের চোরাকারবারিরা বান্দরবানের আলীকদম এলাকার ২ গরু 'ব্যবসায়ীকে' অপহরণ করে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের।
অপহৃত ২ জনের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার সন্ধ্যায় আলিকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের বড় আঘলা সীমান্তের ৫৬ নম্বর পিলার এলাকা থেকে আতিকুর রহমান (৩৫) ও জসিম উদ্দিন (৫৫) নামে ২ জন গরু ব্যবসায়ীকে মিয়ানমারের গরু চোরাকারবারীরা ধরে নিয়ে যায়।
আতিকুর ও জসিম সম্পর্কে শালা-দুলাভাই। আলীকদম বাজারের পশ্চিম পুকুরপাড়া এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান, তার বাবার নাম আব্দুস সালাম এবং একই এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন, তার বাবার নাম নুরুল কবির।
কুরুক পাতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ক্রাতপুং ম্রো এ বিষয়ে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২ জনই গরু চোরাকারবারী। তারা অনেকদিন ধরে কুরুকপাতা ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদীর সীমান্ত দিয়ে চোরায়পথে গরু ব্যবসা করে আসছিল।'
চেয়ারম্যান আরও বলেন, 'স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, তাদের কাছে মিয়ানমারের গরু চোরাকারবারীদের ১ কোটি টাকা পাওনা আছে। মোটা অংকের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য তাদের ধরে নিয়ে গেছে। তাদের দুজনকে মিয়ানমারের ভেতরে পিয়ারী এলাকায় আটকে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।'
অপহৃত আতিকুর রহমানের ছোট ভাই সাদ্দাম হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার ভাই আতিকুর রহমান ও দুলাভাই জসিম উদ্দিনকে গত সোমবার সন্ধ্যায় কুরুকপাতা ইউনিয়নে ব্যবসার কাজে গেলে কে বা কারা নাকি ধরে নিয়ে গেছে। গতকাল থেকে কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। এতে আমাদের পরিবার অনেক চিন্তায় আছে।'
২ জনকে অপহরণ ও মুক্তিপণের বিষয়ে জানতে চাইলে আলিকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, আতিকুর রহমান ও জসীমউদ্দিনকে সীমান্তের ওপারে আটকে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে কেউ এখনো থানায় অভিযোগ করেননি। শুনেছি তারা নাকি গরু চোরাচালনের সঙ্গে জড়িত।'
এ বিষয় জানার জন্য আলীকদমে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ৫৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শহীদুল ইসলামকে (পিএসসি) ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগোর চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
বিজিবি হেড কোয়াটার্সের অপারেশস অ্যান্ড প্রশিক্ষণ শাখার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান (পিএসসি) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ঘটনাটি শুনেছি। এ বিষয়ে অপারেশনে আছি। সঠিক তথ্য না পাওয়ার কারণে তথ্য অনুসন্ধানে আছি। তথ্য পেলে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।'
স্থানীয়দের অভিযোগ চোরাই পথে আসা এ সব গরু পাহাড়ী সীমান্ত পার করে প্রথমে কুরুকপাতা ইউনিয়নের পোয়ামোরী, মারান পাড়া, বড় আঘলা, ভেওলা পাড়া, বড় বেটি, ছোট বেটি, মাতামুহুরী নদীর শেষ সীমান্ত, ঝিরি, মেরিংচর, কালায়াছড়া, খেতা ঝিরিসহ বিভিন্ন এলাকায় রাখা হয়। কখনো কখনো মাতামুহুরী রিজার্ভের গভীর বনাঞ্চলেও ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে সুযোগ বুঝে আলীকদম–কুরুকপাতা সড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ট্রাকে করে আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত বছর আলীকদমে বিজিবি ও উপজেলা প্রশাসনের পৃথক ৩টি অভিযানে ৮২টি গরু জব্দ করা হলেও বন্ধ হয়নি গরু চোরা চালান চক্রের তৎপরতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের পশ্চিম এবং দক্ষিণে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। এ ইউনিয়নের সীমান্তে বেশির ভাগ এলাকায় অরক্ষিত ও দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। ফলে এসব এলাকার পাহাড়ি পথ দিয়ে চোরাকারবারিরা অবৈধভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে থাইল্যান্ডের ব্রাহামাসহ মিায়ানমারের বিভিন্ন জাতের শত শত গরু।
আলীকদম সীমান্তের পাহাড়ী পথ দিয়ে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু আসার খবরে গত ১৮ মে আলীকদম উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার মেহেরুবা ইসলাম মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আলীকদম-পোয়ামুহুরী সড়কের বাবু পাড়া এলাকা থেকে ২টি ট্রাকসহ ২৫টি গরু ও এক পাচারকারীকে আটক করেন। এর ৫ দিন পরে গত ২৩ মে গভীর রাতে গোপন খবরের ভিত্তিতে আলীকদম ব্যাটালিয়ানের (৫৭ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ইফতেখারের নির্দেশে বিজিবির সদস্যরা গভীর জঙ্গল থেকে আরও ৪০টি বিদেশি গরু জব্দ করে।
Comments