বাহাদুর শাহ পার্ক এখন ‘ক্যাফে বাহাদুর’

ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ফুড কোর্ট নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে।
১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে শহীদদের স্মৃতি সম্বলিত সৌধের ঠিক পেছনেই নির্মাণ করা হয়েছে খাবারের দোকানগুলো। ছবি: রাশেদ সুমন/স্টার

ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ফুড কোর্ট নির্মাণের অনুমতি দিয়েছে।

গত কয়েক মাস ধরে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসা ক্ষুব্ধ স্থানীয়দের মতে, ক্যাফেটি যে জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে তাতে পার্কের জায়গা ও এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য উল্লেখযোগ্যভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে।

ডিএসসিসির কাছ থেকে ৩ কোটি ৬১ লাখ টাকায় ২০২৩ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পার্কটি ইজারা নেয় ডিএআর হোল্ডিং লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠান। চুক্তিতে সংস্থাটিকে এক বছর পার্কে একটি ফুড কার্ট চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।

তবে এই শর্ত ভঙ্গ করে সম্প্রতি পার্কের ভেতর ২টি ক্যাফে স্থাপন করা হয়েছে।

মজার ব্যাপার হলো, এর মধ্যে বড় খাবারের দোকানের সাইনবোর্ডে লেখা আছে- 'ক্যাফে বাহাদুর'।

ক্যাফে বাহাদুর। ছবি: রাশেদ সুমন

এর চেয়েও খারাপ ব্যাপার হলো, পার্কে স্থাপিত ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহে শহীদদের স্মৃতি সম্বলিত সৌধের ঠিক পেছনেই নির্মাণ করা হয়েছে খাবারের দোকানগুলো।

সচেতন নাগরিক ও পুরান ঢাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার থেকে ২টি ফুড কোর্টের মধ্যে একটি সরানোর কাজ শুরু করেছে, যদিও 'ক্যাফে বাহাদুর' পুরোদমে চলছে।

বাহাদুর শাহ পার্ক ও ঐতিহ্য রক্ষা সংগ্রাম কমিটির সদস্যসচিব মো. আখতারুজ্জামান খান বলেন, 'আমরা মনে করি না যে পার্কে এ ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনার কোনো প্রয়োজন আছে। এটি শুধু ঐতিহাসিক স্থানের পবিত্রতাই নষ্ট করছে না, তাজা বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা থেকেও স্থানীয়দেরও বঞ্চিত করছে।'

তার ভাষ্য, লক্ষ্মীবাজার ও তার আশেপাশের ১৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী বিনোদনের জন্য এই পার্কের ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া সব বয়সের মানুষ ব্যায়ামের জন্য পার্কটি ব্যবহার করে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয়দের গণস্বাক্ষর নিয়ে তারা ইতোমধ্যে ডিএসসিসি মেয়র ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'আমরা বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গত ১০ নভেম্বর ডিএসসিসি মেয়রের সঙ্গে দেখা করে ক্যাফেগুলো অপসারণ, পার্কের ইতিহাস তুলে ধরা এবং নিরাপত্তার জন্য সীমানা প্রাচীর স্থাপনের দাবি জানাই। মেয়র আমাদের দাবির সঙ্গে একমত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি তিনি রাখেননি।'

এ বিষয়ে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'দর্শনার্থীদের সেবা দিতে একটি ফুড কোর্ট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে স্থাপন করা হয়নি।'

তিনি জানান, নাগরিকদের দাবি অনুযায়ী ক্যাফেটি ইতোমধ্যে স্মৃতিসৌধের পাশ থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়েছে। তার ভাষ্য, 'শরীরচর্চার জন্য পার্কে এখনো জায়গা আছে। এক্ষেত্রে ক্যাফেটি কোনো সমস্যা তৈরি করবে না।'

চারপাশ সবুজে ঘেরা বাহাদুর শাহ পার্কটি এর সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সমৃদ্ধ স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত।

আগে জায়গাটি ভিক্টোরিয়া পার্ক নামে পরিচিত ছিল। রানী ভিক্টোরিয়ার নামে এই নামকরণ করা হয়েছিল।

পরবর্তীতে ১৯৫৭ সালে উদ্যানটির নামকরণ করা হয় শেষ মুঘল সম্রাট মির্জা আবু জাফর সিরাজুদ্দিন মুহাম্মদ বাহাদুর শাহ জাফরের নামে, যিনি দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ নামে পরিচিত।

১৮৫৭ সালে ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে সিপাহী বিদ্রোহের সময় ইংরেজ সৈন্যরা বন্দী বিদ্রোহীদের এই উদ্যানের বিভিন্ন গাছে ঝুলিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করে।

পার্কের প্রবেশপথে সেই শহীদদের স্মরণে ২টি স্মৃতিসৌধ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পূর্ব দিকেরটা সবচেয়ে উঁচু।

ডিএসসিসির সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন ২০১৬ সালে বাহাদুর শাহ পার্কসহ ১৯টি পার্ক ও ১২টি খেলার মাঠ আধুনিকায়নের জন্য ৭০ জন স্থপতিকে নিয়ে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেন।

ওই মেগা প্রকল্পের পরামর্শক টিম লিডার ও স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান সাতত্য'র প্রধান স্থপতি রফিক আজমের নির্দেশনায় পার্কটি নতুন নকশায় গড়ে তোলা হয় এবং এর প্রাথমিক নকশায় কোনো ফুড কোর্ট ছিল না।

এর আগে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেছিলেন, এখানে স্থায়ী কোনো স্থাপনা নয়; বরং অস্থায়ী ফুড কোর্ট নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, 'বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত স্থান ইজারা দেওয়া সিটি করপোরেশনের একটি সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও একই চিত্র দেখা গেছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English
Yunus meets Malaysian PM Anwar Ibrahim

Anwar Ibrahim to consider issue of Bangladeshi workers

Malaysian Prime Minister Anwar Ibrahim today promised to consider the issue of 18,000 Bangladeshi workers who missed a deadline to enter Malaysia saying that they need workers, but not "modern slaves"

5h ago