হাফিজুর রহমান কেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাবেন না, রুল হাইকোর্টের

শহীদ সৈয়দ হাফিজুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

ক্র্যাকপ্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সৈয়দ হাফিজুর রহমান কেন 'শহীদ মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন না এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট।

আজ রোববার বিচারপতি কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রুল জারি করেছেন।

এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট করা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বাকির হোসেন মৃধা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের মহাপরিচালক (ডিজি), মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মহাপরিচালক এবং ঢাকার জেলা প্রশাসককে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গত ২৮ নভেম্বর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ হাফিজুর রহমানের ভাইয়ের করা আবেদনের নিষ্পত্তি না করাকে কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না এই মর্মেও প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। রুলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করার জন্য কেন সার্চ কমিটি গঠন করা হবে না এ নিয়েও প্রশ্ন করেছেন বিচারপতি কামরুল কাদের ও  বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বিত বেঞ্চ।

একইসঙ্গে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করতে ২৬টি দালিলিক প্রমাণপত্র জনসম্মুখে উন্মুক্ত করতে কেন আদেশ দেওয়া হবে না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। 

ক্র্যাকপ্লাটুনের মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সৈয়দ হাফিজুর রহমানকে 'শহীদ মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে স্বীকৃতি দিতে তার পরিবারের দেওয়া আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করতে গত ১৫ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বাকির হোসেন মৃধা। রিটে সার্চ কমিটি গঠন করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের খুঁজে বের করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়ার আবেদন করা হয়।

আজ আদালতে ব্যারিস্টার বাকির হোসেন নিজেই রিটের পক্ষে শুনানি করেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শহীদ সৈয়দ হাফিজকে 'শহীদ মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে স্বীকৃতির জন্য তার পরিবারের সদস্যরা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ১০ বার আবেদন করেছেন। তবে প্রতিবারই তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

সবশেষ গত ২৮ নভেম্বর দশমবারের মতো জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে শহীদ হাফিজকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতির জন্য আবেদন করেছিলেন শহীদ হাফিজের ভাই সৈয়দ মুসাদ্দেকুর রহমান। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল সেই আবেদনটিও গ্রহণ না করায় ব্যারিস্টার বাকির হোসেন মৃধা স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট দায়ের করেন। 

গত বছরের ২৪ ও ৩১ অক্টোবর দ্য ডেইলি স্টারে 'Half a century gone chasing recognition' ও 'Denied Again' শীর্ষক একটি সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে উঠে আসে সৈয়দ হাফিজুর রহমানের 'শহীদ মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে স্বীকৃতির জন্য তার পরিবারের বিগত অর্ধ শতাব্দীর লড়াইয়ের ভোগান্তি ও দুর্ভোগের চিত্র।

২৪ অক্টোবর 'Half a century gone chasing recognition' প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নজরে এসেছিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বাকির হোসেন মৃধার।

মুক্তিযুদ্ধে ক্র্যাক প্লাটুনের একাধিক দুর্ধর্ষ অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন সৈয়দ হাফিজুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তিনি 'মাইন হাফিজ' নামেও পরিচিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের জুলাই বা আগস্ট মাসের এক রাতে ঢাকার ভিন্ন ৬টি অবস্থানে মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলেন তিনি।

১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট রাতে রাজধানীর ইস্কাটনের বাড়ি থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এরপর তার ওপর চালানো হয় লোমহর্ষক নির্যাতন। ৩০ আগস্টের পর আর খুঁজে পাওয়া যায়নি সৈয়দ হাফিজুর রহমানকে। হাফিজুর রহমানের সঙ্গে একই রাতে ধরা পড়া শহীদ সহযোদ্ধাদের সবাই রাষ্ট্রীয় খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও স্বীকৃতি পাননি শহীদ হাফিজ।

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

7h ago