২০২২ সালে ৪৪৬ স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২২ সালে ৪৪৬ স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২২ সালে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের ৪৪৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে স্কুল ও সমমান পর্যায়ের ৩৪০ এবং কলেজ পর্যায়ে ১০৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন বলে জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন।

আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন।

আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৪ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থী উল্লেখে করে ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী ২৮৫ জন এবং পুরুষ ১৬১ জন। 

এ ছাড়া ২০২২ সালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছেন বলে জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন।

আঁচল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে ৩৪ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৯ জন, মার্চে ৪১ জন, এপ্রিলে ৫০ জন, মে মাসে ৪৫ জন, জুনে ৩১ জন, জুলাইয়ে ৪০ জন, আগস্টে  ২১ জন, সেপ্টেম্বরে  ৩২ জন, অক্টোবরে ৩০ জন, নভেম্বরে ৪৯ জন এবং সবশেষ ডিসেম্বরে ৩৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন। দেখা যায়, এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক স্কুল এবং কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেন যা ছিল ৫০ জন। 

প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩৭ জন স্কুল এবং কলেজগামী শিক্ষার্থী আত্মহননের দিকে এগিয়ে গেছেন।

আত্মহত্যায় শীর্ষে ঢাকা

সারাদেশের মোট ৮টি বিভাগে আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগে যা ২৩.৭৭ শতাংশ। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগ যা ১৭.২৭ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগ যা ১৬.৮১ শতাংশ। এ ছাড়া খুলনা বিভাগে ১৪.১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮.৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮.৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬.২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪.৪৮ শতাংশ স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী রয়েছেন।

আবারও এগিয়ে নারীরা

আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী রয়েছেন ৬৩.৯০ শতাংশ এবং পুরুষ রয়েছেন ৩৬.১ শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যাকারী নারী শিক্ষার্থীর পরিমাণ ৬৫.৩০ শতাংশ এবং পুরুষ শিক্ষার্থী ৩৪.৭০ শতাংশ। অন্যদিকে, শুধু কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহননকারী নারী ৫৯.৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০.৫৬ শতাংশ রয়েছে। 

আত্মহত্যার পেছনের কারণ 

আঁচল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, আত্মহত্যাকারী স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীরা তাদের জীবদ্দশায় নানা বিষয়ের সম্মুখীন হন যা তাদেরকে আত্মহননের পথে ঠেলে দিতে বাধ্য করে। জরিপে উঠে আসা এমনই বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায় মান- অভিমান তাদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭.৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন অভিমানের করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান হয়েছে পরিবারের সঙ্গে। অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে প্রেমঘটিত কারণ যা ২৩.৩২ শতাংশ, পারিবারিক কলহ ৩.১৪ শতাংশ, হতাশাগ্রস্থতা ২.০১ শতাংশ, মানসিক সমস্যা ১.৭৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যা ১.৭৯ শতাংশ, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়েছেন ৩.১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মহত্যার পেছনে দায়ী কারণ জানা যায়নি। 

তবে স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে আরও বেশ কিছু ভিন্ন কারণের তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন। সেগুলোর মধ্যে আছে- আপত্তিকর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ৪ জন, শিক্ষক কর্তৃক অপমানিত হয়ে ৬ জন, গেইম খেলতে বাঁধা দেওয়ায় ৭ জন, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭ জন, মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় ১০ জন, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এ ছাড়া অন্যান্য কারণের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষায় অকৃতকার্য বা আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়া, পড়াশোনার চাপ অনুভব করা এবং পারিবারিক চাপে আত্মহত্যা।

এ বিষয়ে সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, ২০২২ সালের এই জরিপে দেখা যাচ্ছে ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি। অর্থাৎ তারা যে বয়সন্ধিকালের সময়টি পার করছে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সময়ে কিশোর কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন এবং সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কি কারণে তাদের সংখ্যা গতবছর এত বেশি ছিল তার কারণগুলো অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তাদের পারিবারিক বন্ধন, ব্যক্তিগত চাহিদা, সামাজিক অবস্থান এ সব বিষয় জানার প্রয়োজন রয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Record toll collection on Padma and Jamuna bridges

Padma Bridge generated a record toll revenue of Tk 54.32 crore, while Jamuna Tk 41.81 crore

1h ago