জঙ্গিবিরোধী অভিযান

গোলাগুলি আতঙ্কে বান্দরবানের অন্তত ৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৪ মাস ধরে বন্ধ

কর্তৃপক্ষ স্বীকার না করলেও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্ধ থাকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬টি নয়; বরং রুমার ১০টি ও রোয়াংছড়ির ২টিসহ মোট ১২টি।
বন্ধ হয়ে থাকা আরথাহ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়িতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফ ও জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার বিরুদ্ধে র‍্যাব এবং সেনাবাহিনীর যৌথ অভিযান চলছে গত বছরের অক্টোবর থেকে।

অভিযান শুরুর পর থেকে গোলাগুলির আতঙ্কে এসব এলাকার অন্তত ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে বলে জানিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তবে কর্তৃপক্ষ স্বীকার না করলেও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্ধ থাকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬টি নয়; বরং রুমার ১০টি ও রোয়াংছড়ির ২টিসহ মোট ১২টি।

এর মধ্যে রুমা উপজেলার পাইন্দু ইউনিয়নে মূয়ালপি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরথাহ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাসত্লাং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুননুয়াম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের পাকনিয়ার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কেসপা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, স্লাউপি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাইক্ষ্যং পাড়া, এলিন ছান্দলা পাড়া, নিয়াংক্ষ্যং পাড়ার ১০টি বিদ্যালয় এবং রোয়াংছড়ি উপজেলার রনিন পাড়া, পাইংক্ষ্যং পাড়ার ২টি বিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম গত নভেম্বর থেকে বন্ধ আছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও অভিভাবকরা জানান, যৌথবাহিনী জঙ্গি ও কেএনএফ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযানকালে গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়। এ কারণে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে চান না অভিভাবকরা।

স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবর থেকে রুমা-রোয়াংছড়ি-থানচি উপজেলায় কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) ও জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অভিযান চলছে। বেশ কয়েকবার তাদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।

গত ২৮ জানুয়ারি বাসত্লাং পাড়ায় এক জঙ্গির গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার হয়।

রুমা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, উপজেলার দুর্গম এলাকা রেমাক্রি-প্রাংসা ইউনিয়নের পাকনিয়ার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পুরোপুরি বন্ধ আছে। অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো চালু থাকলেও, সেখানে শিক্ষার্থী নেই।

কেন শিক্ষার্থী নেই, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'শিক্ষার্থীদের পরিবার সন্ত্রাসীদের ভয়ে অন্যত্র পালিয়ে যাওয়ার কারণে এবং যৌথবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলির ঘটনায় শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে বিদ্যালয়গুলোতে যাচ্ছে না।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর্থা পাড়ার এক অভিভাবক ডেইলি স্টারকে জানান, 'ভয়ে অনেক পরিবার এলাকাছাড়া হওয়ায় গত নভেম্বর থেকেই এলাকার প্রাইমারি স্কুলগুলো বন্ধ আছে। এমন পরিস্থিতিতে সময়মতো জুমের ফসলও কাটতে পারিনি।'

তবে স্কুল বন্ধের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকদের ফোন করা হলে তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে রুমা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মামুন শিবলী ডেইলি স্টারকে জানান, বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ বিবেচনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার খুলে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, 'যেহেতু যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, কখনো কখনো গোলাগুলি হচ্ছে, সেজন্য এলাকায় একটু আতঙ্ক আছে। আর শিশুদের আতঙ্কে স্কুলে না আসার বিষয়টি স্বাভাবিক।'

রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা ডেইলি স্টারকে জানান, উপজেলার দুর্গম এলাকার ১নং পাইন্দু ইউনিয়নে মূয়ালপি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আর্থাহ্ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাসত্লাং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুননুয়াম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের পাকনিয়ার পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কেসপা পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়- এ ৬টি বিদ্যালয়ের নিয়মিত শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ আছে।

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রুমা উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'সভায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আশীষ চিরান বিষয়টি উত্থাপন করে জানান যেহেতু সন্ত্রাস ও জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, সে কারণে আতঙ্কে ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছে। সে কারণেই ৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ আছে।'

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বম নেতা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখনই বিদ্যালয়গুলোতে সুস্থ, সুন্দর পরিবেশ গড়ে তুলতে না পারলে নতুন প্রজন্মের শিশুরা শিক্ষায় পিছিয়ে পড়বে।'

Comments