খাল খনন করছে পাউবো, মাটি লুটে নিচ্ছেন আ. লীগ নেতারা

অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘কবরস্থানের জন্য মাটি নিয়েছি। এজন্য যদি ফাঁসি হয়, হবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুনরায় খনন করা নুরপুর খাল উত্তোলনের সরকারি মাটি লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে। ছবিটি ১৪ মার্চ ২০২৩, মঙ্গলবার তোলা। ছবি: মাসুক হৃদয়/স্টার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের পুনরায় খনন করা নুরপুর খাল উত্তোলনের সরকারি মাটি লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ২ মাস আগে খাল খনন শুরুর পর থেকেই স্থানীয় ইউনিয়ন শাখা আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সিন্ডিকেটের লোকেরা দিন-রাত ট্রাক্টরে করে মাটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সরকারি মাটি কিনে নিয়ে পুকুর-জলাশয় ও তিন ফসলী জমি ভরাট করা হচ্ছে।

এতে ফসলী জমি ক্ষতির পাশাপাশি বর্ষাকালে খাল পাড় ভেঙে যাওয়ারও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্রতিকার চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন এলাকাবাসীরা। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কেবল লিখিতপত্র দিয়েই দায়মুক্ত থাকার চেষ্টা করছেন।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ক্ষমতাসীন দলের নেতাদেরকে রক্ষা করতে 'লোক দেখানো' অভিযান চালিয়ে একটি ট্রাক্টর ও মাটি পরিবহনে নিয়োজিত কয়েকজন শ্রমিককে আটক করেছে। কিন্তু এরপরেও বন্ধ হয়নি মাটি বিক্রি।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের কবরস্থান থেকে পশ্চিম দিকে তিতাস নদীর সীমানা পর্যন্ত ২ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল ১ কোটি ২৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয়ে খনন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত বছর ৬ এপ্রিল জারি করা কার্যাদেশ অনুযায়ী চট্টগ্রামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুছ অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড এটি খননের দায়িত্ব পায়। কিন্তু তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনৈক ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে কাজটি বিক্রি করে দেয়। চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে খনন কাজ শেষ করার কথা রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, প্রায় ১৫ মিটার প্রশস্ত এবং ৩/৪ মিটার গভীর করে খালটি খনন করা হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, খননযন্ত্র (এস্কেভেটর) ও ভেকু মেশিন দিয়ে খাল খননের পর মাটি খালপাড়ে না ফেলে ট্রাক্টরে লোড করা হচ্ছে। খালপাড় সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে কয়েকটি ট্রাক্টরকে মাটি নিয়ে যেতেও দেখা গেছে।

জানতে চাইলে মাটি পরিবহনে নিয়োজিত শ্রমিক সেলিম মিয়া বলেন, নূরপুর গ্রামের আকতার ও রুটি গ্রামের রাসেলের নির্দেশে তারা ট্রাক্টরে করে মাটি নিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগসাজশ করে ধরখার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতার হোসেন ভূঁইয়া, ধরখার গ্রামের জসিম মিয়া, মুসা মিয়া, রুটি গ্রামের রাসেল মিয়া এবং ভাটামাথা গ্রামের নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট এই মাটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, খাল থেকে ২০০-৩০০ ট্রাক মাটি নেওয়া হয়েছে গ্রামের কবরস্থান ভরাট করার উদ্দেশ্যে।

স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকতার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, 'কবরস্থানের জন্য মাটি নিয়েছি। এজন্য যদি ফাঁসি হয়, হবে।'

ঠিকাদার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'মাটি বিক্রির সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত নন।'

তবে জায়গা না থাকায় কিছু মাটি বাইরের জমি এবং পুকুরে ফেলার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, 'মাটি পেয়ে খুশি হয়ে যদি কেউ টাকা দেয় সেটা আমি জানি না।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনজুর রহমান বলেন, 'নুরপুরে খাল খননের মাটি বিক্রির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, মাটি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা অনুযায়ী খালের মাটি বিক্রি করে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মাটি খাস জমি উন্নয়নে ব্যবহার হবে। খালের মাটি পাড়ে রাখতে হবে। মাটির পরিমাণ বেশি হলে তা নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে।'

Comments