‘মাটি বিক্রির জন্য’ বাড়তি খনন, খালের পাড় ধসের শঙ্কা
ঝিনাইদহে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে খাল পুনঃখনন প্রকল্পের মাটি পাড়ে না ফেলে ইটভাটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দরপত্রে যেভাবে খননের কথা বলা আছে, ঠিকাদার সেটা না মেনে প্রায় ২৫-৩০ ফুট গভীর এবং ৬০-৭০ ফুট চওড়া করে খালটি খনন করছে। মূলত মাটি বিক্রির জন্য অতিরিক্ত গভীর করে খনন করা হচ্ছে।
খননের মাটি খালের ২ পাশে না ফেলে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ট্রাক ও লরি দিয়ে খননের মাটি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এতে আসছে বর্ষা মৌসুমে ২ পাশের রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যেই কয়েক জায়গায় পাড় ধসে পড়তে শুরু করেছে।
জেলার মাঝিপাড়া থেকে কাজীপাড়া পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের জন্য ২০২২ সালে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় প্রকল্পের দরপত্র আহ্বান করা হয়। ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির কাজ পায়।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে খনন কাজ শুরু হয় এবং এটি আগামী জুলাই পর্যন্ত চলার কথা। ঠিকাদার রাইস আহমেদ কাজটি বাস্তবায়ন করছেন।
স্থানীয়দের ভাষ্য অতিরিক্ত খনন এবং মাটিভর্তি ট্রাক-লরি চলাচলের কারণে খালপাড়ে থাকা মকিমপুর গ্রামের পিচঢালা সড়কটি ভাঙনের মুখে পড়েছে। এতে আসছে বর্ষা মৌসুমে বেশ কয়েকটি জায়গা ধসে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। পাশাপাশি ধুলা-বালি ও ভাঙা রাস্তায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।
চরমুরারিদহ গ্রামের বাসিন্দা সীতা রানী (৫৫) দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি ঘরবাড়ি নিয়ে আতঙ্কে আছেন। খাল খননের কারণে তিনি বাড়িতে থাকতে পারছেন না।
এছাড়া খালের ২ পাশে কোনো বাধ না থাকার কারণে তার আঙ্কা, বৃষ্টির পানি খালে প্রবেশের সময় পাড় ভেঙে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হবে।
মকিমপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, কয়েকদিন আগে রাতে খালের মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করা হয়েছে। এভাবে খননের ফলে খালটি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
তিনি আরও জানান, খননের নামে মাটি বিক্রি করে দেওয়ার কারণে খালের ২ পাশে কোনো রক্ষা বাঁধ তৈরি করা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, 'আমরা কয়েকবার প্রতিবাদ করেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আরেক জন বলেন, 'এই কাজে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জড়িত। এই মাটি বিক্রি করে তারা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জনসাধারণের ভালোর জন্য কাজ না করে নিজেদের পকেট ভরছে। আমরা অসহায়। প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের ওপর নির্যাতন চালাবে।'
স্থানীয় বাসিন্দা আতিয়ার রহমান, ঝন্টু লস্করও একই কথা বলেন।
অভিযোগের বিষয়ে ঠিকাদার রইস উদ্দিন বলেন, 'খননের মাটি খালের ২ পাশে রাখার জায়গা না থাকায় আমরা বিক্রি করছি। এছাড়া এই মাটি না সরিয়ে আমরা খালের পাড় ঢালু করতে পারব না।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা ঝিনাইদহ সদর ইউএনওর সম্মতি নিয়েছি। ক্রেতারা মাটি কেনার জন্য ট্রেজারির মাধ্যমে টাকা জমা দিয়েছেন।'
ঝিনাইদহের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু রায়হান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বিভিন্ন স্থানে খালের উচ্চতার তারতম্য রয়েছে। সেই অনুযায়ী খনন করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, 'পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাটি বিক্রি করা হচ্ছে। আমরা প্রতি ঘনফুট ৭০ পয়সা দরে অতিরিক্ত মাটি বিক্রি করছি।'
Comments