গরিবের ইফতারিতে ফল নেই

সারা বছরের তুলনায় রমজান এলেই বেড়ে যায় মৌসুমিসহ সব ধরনের ফলের চাহিদা। ইফতারের টেবিলে রোজাদাররা দেশি-বিদেশি ফল রাখতে চান।
ফল
দাম বেশি হলেও ফলের দোকানগুলোতে ভিড়ের কমতি নেই। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

সারা বছরের তুলনায় রমজান এলেই বেড়ে যায় মৌসুমিসহ সব ধরনের ফলের চাহিদা। ইফতারের টেবিলে রোজাদাররা দেশি-বিদেশি ফল রাখতে চান।

তাই ইফতারের মেন্যুতে নিয়মিত আইটেম হিসেবেই দেখা যায় খেজুর, কলা, তরমুজ, পেঁপে, আনারস, বেল, আঙুর, আপেল, কমলা, বরই, আনারসহ বিভিন্ন ফল।

সম্প্রতি বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে ফলের দামও। এর প্রভাব পড়তে যাচ্ছে মধ্য ও নিন্মবিত্তসহ নিন্ম আয়ের মানুষের ইফতারির পাতেও। 

গতকাল বৃহস্পতিবার ও আজ শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার বিভিন্ন ফলের আড়ত ও দোকান ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই চোখে পড়েছে। 

দেখা গেছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বাজারে বিদেশি ফলের দাম কেজিতে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেশি ফলের দামও ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি।

কড়াইল বস্তি থেকে কারওয়ান বাজারে আজ শুক্রবার বিকেলে বাজার করতে এসেছেন বিলকিস বেগম। নিয়মিত সদাই ছাড়াও ইফতারির জন্য ফল কেনার ইচ্ছা ছিল তার। কিন্তু মুরগি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনসহ অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই টাকায় টান পড়ে তার। তাই ফল কেনা আর হয়ে ওঠেনি তার।

কারওয়ান বাজারের ফলের দোকান। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

দ্য ডেইলি স্টারকে বিলকিস বলেন, 'দাম কম তাই কারওয়ান বাজারে আসা। যে টাকা নিয়ে এসেছি, অন্য বাজার করতেই তা শেষ হয়ে গেছে। ফল কেনার টাকা নেই। পেঁপে, বেল, কলা কিনতে চেয়েছিলাম।'

বিলিকিস ভেবেছিলেন, পেঁপের দাম সর্বোচ্চ ৭০-৮০ টাকা হবে। দেখেন ১৫০ টাকা। একইভাবে ৫০ টাকায় ১ হালি কলা আর প্রতিটি বেল ৮০ টাকায় কেনার সাহস করেননি তিনি। 
এই কর্মজীবী নারী বলেন, 'এখন শুধু কিছু পেয়ারা কিনে ফেরত যাব।'

কারওয়ান বাজারে ফলের দাম যেমন গত বছরের তুলনায় বাড়তি, তেমনি আজ প্রথম রোজার দিনে গতকালের চেয়েও দাম বেড়ে গেছে।

গতকাল যে পেঁপের দাম ছিল ৯০ টাকা, আজ তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। মাল্টার দাম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ২৩০। একইভাবে আপেল ২৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা, সাগর বা সবরি কলার হালি ৪০ টাকা থেকে ৫০ টাকা হয়েছে।

এছাড়া, কমলার দাম গতকাল ছিল ২০০ টাকা কেজি, আজ দেখা গেছে ২৫০ টাকা। আনার ৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪০০ টাকা, আঙুর ২২০ টাকা থেকে বেড়ে ২৫০ টাকা এবং বাংগি ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে।

তবে তরমুজ ও পেয়ারার দাম অপরিবর্তিত আছে।

ফল ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন ২২ বছর ধরে কারওয়ান বাজারে ব্যবসা করছেন। দেশি-বিদেশি সব ধরনের ফল বিক্রি করেন তিনি। তার মতে, অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় এবার ফলের দাম বেশি। 

দুলাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদেশি যে কোনো ফল গত বছরের তুলনায় এবার কেজিতে ২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেশি ফলের মধ্যে তরমুজ ছাড়া অন্য ফলের দাম কেজিতে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।'

'রোজার মাসে প্রতিবছরই ফলের চাহিদা বেড়ে যায়' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'গরিব-ধনী সবাই ইফতারে ফল খেতে চায়। তবে এবার দাম বেশি হওয়ায় গরিব মানুষ ফল কেনার সুযোগ তেমন পাচ্ছে না। এতে আমাদের ব্যবসা কমে গেছে এমন নয়। ধনী ও মধ্যবিত্তের এক শ্রেণির ক্রেতা ঠিকই পর্যাপ্ত ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।'

বাজারে দেখা গেল, ফলের দোকানগুলোতে ভিড়ের কমতি নেই। যে যতটা পারছেন, পছন্দের ফল কিনে নিচ্ছেন। মূলত ইফতারকে সামনে রেখেই তাদের এই ফল কেনা বলে জানালেন অনেকে।

Comments