রোকিয়া আফজাল রহমান: নারী উদ্যোক্তাদের আদর্শ
বিশিষ্ট উদ্যোক্তা রোকিয়া আফজাল রহমান আজ বুধবার ভোরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ নোভেনা হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। দ্য ডেইলি স্টারের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মিডিয়াওয়ার্ল্ড লিমিটেডের চেয়ারপারসন ছিলেন তিনি।
নারীর ক্ষমতায়নে সোচ্চার রোকিয়া আফজাল রহমান ব্যবসায় ক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে নেওয়ায় অবদানের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে সব সময় অটল ছিলেন তিনি।
রোকিয়া আফজাল রহমানের মৃত্যুতে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শোক জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, তার মৃত্যুতে দেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
'তার কাছে অনেক কিছু শিখেছি'
চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী বলেছেন, রোকিয়া আফজাল রহমানের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তিনি বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের পথপ্রদর্শক ছিলেন। তিনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন।
রোকিয়া আফজাল রহমান নারী উদ্যোক্তাদের খুব ভালোবাসতেন। তিনি আমাদের সবসময় মানুষের জন্য কাজ করার পরামর্শ দিতেন। তিনি নারীদের ব্যবসায়িক উদ্যোগের প্রতীক হয়ে আমাদের মাঝে থাকবেন। তিনি বিশ্বাস করতেন নারীদের অগ্রগতি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি সবসময় আমাকে অনাড়ম্বর জীবনের পরামর্শ দিতেন। আত্মবিশ্বাস নিয়ে চলতে বলতেন। তার কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
'অতুলনীয় দূরদর্শিতা'
ব্যবসায়ীদের শীর্ষস্থানীয় সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, রোকিয়া আফজাল রহমান অসাধারণ মানবিক গুণাবলীর অধিকারী একজন দূরদর্শী ব্যবসায়ী নেতা ছিলেন।
সাইফুল ইসলাম স্মৃতিচারণ করে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রোকিয়া আফজাল রহমান দুই মেয়াদে এমসিসিআই সভাপতি ছিলেন। দূরদর্শিতায় তিনি ছিলেন অতুলনীয়।
'তিনি মানুষকে শ্রদ্ধা করতেন, যা আজকাল বিরল। তার কোনো লুকোনো এজেন্ডা ছিল না,' বলেন সাইফুল।
এমসিসিআই ২০১৪ সালে ১১০ বছর পূর্তি উদযাপন করে। রোকিয়া আফজাল রহমান তখন সংগঠনের সভাপতি। তখন বিশ্বের সামনে দেশের অগ্রগতি তুলে ধরায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি।
'অপূরণীয় ক্ষতি'
রোকিয়া আফজাল রহমান বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক সদস্যও ছিলেন।
বিল্ডের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তার মৃত্যুতে ট্রাস্টি বোর্ডের সব সদস্য, কর্মী এবং ব্যবস্থাপনার কর্মীরা গভীরভাবে শোকাহত ও দুঃখিত।
'ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিল্পায়ন, উদ্যোক্তা এবং সামাজিক উন্নয়নে তার বিশাল অবদানকে আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।'
তিনি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বেসরকারি খাতের উন্নয়নে তার নিষ্ঠা ও অঙ্গীকার সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক এবং অনন্য।
'আমরা তার পরিবারের সদস্যদের এবং স্বজনদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাই।'
'সাহায্যের জন্য অবারিত ছিলেন তিনি'
যশোর-ভিত্তিক সংগঠন 'বাঁচতে শেখা'র চেয়ারপারসন ছিলেন রোকিয়া আফজাল রহমান। সংগঠনটি সমাজের হতদরিদ্রদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করে।
তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বাঁচতে শেখার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক অ্যাঞ্জেলা গোমেজ বলেন, 'একজন বন্ধু হিসেবে রোকিয়া আফজাল রহমান আমাদের সাহায্য করতেন। তিনি সব সময় আমাদের জন্য, সংস্থার জন্য কী ভালো হবে, তা নিয়ে ভাবতেন। আমরা তার জন্য গর্বিত।'
'দেশে সুশাসন নিশ্চিতে অনুঘটক ছিলেন রোকিয়া আফজাল রহমান'
রোকিয়া আফজাল রহমানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক সদস্য রোকিয়া মৃত্যুকালে সংগঠনটির জেনারেল অ্যাসেম্বলির সদস্য ছিলেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, 'রোকিয়া আফজাল রহমানের মৃত্যু দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। দেশে সুশাসন নিশ্চিতে অনুঘটকের ভূমিকা পালনের লক্ষ্যে টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনে তার সক্রিয় ও সাহসী অংশগ্রহণ অনুকরণীয়। তার সুচিন্তিত দিক-নির্দেশনা আমরা কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। একজন কর্মনিষ্ঠ ও দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন।'
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, 'রোকিয়া আফজাল রহমান ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। টিআইবির কার্যক্রমে তার ন্যায়নিষ্ঠ অবদানের জন্য আমরা তার প্রতি ঋণী। টিআইবির বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, ম্যানেজমেন্ট এবং টিআইবির অনুপ্রেরণায় গঠিত সারাদেশের সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), ইয়ুথ এনগেজমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট (ইয়েস), অ্যাকটিভ সিটিজেনস গ্রুপ (এসিজি) ও টিআইবি সদস্যদের পক্ষ থেকে আমরা তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।'
'তিনি আমার মায়ের মতো ছিলেন'
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, তিনি একজন মা/বড় বোনের মতো যত্নশীল ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে আমি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। তিনি আমার মায়ের মতো ছিলেন।'
ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স-বাংলাদেশের (আইসিসি-বি) সদস্য ফজলুল হক বলেন, 'তিনি আমার প্রতি ভীষণ যত্নশীল ছিলেন। তিনি আমার নিজের ও পরিবারের সদস্যদের খোঁজ রাখতেন।'
'আইসিসি-বি-এর বোর্ড মিটিংয়ে আমরা আমাদের ভাবনা শেয়ার করতাম। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সংগঠনের সহ-সভাপতি ছিলেন।'
তিনি আরও বলেন, 'রোকিয়া আফজাল রহমান তিনজন নারী কূটনীতিককে নিয়ে কয়েক বছর আগে নারায়ণগঞ্জে আমার কারখানা পরিদর্শন করেছিলেন।'
'রোকিয়া আফজাল রহমানের আরেক নাম নম্রতা'
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি রুবানা হক বলেন, 'রোকিয়া আফজাল রহমানের আরেক নাম নম্রতা। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের ভাইস-চ্যান্সেলর রোকিয়া আপা আমাদের সবার মাঝে বেঁচে থাকবেন।'
'বাংলাদেশের এসএমই খাতে তার অবদান অসামান্য। তরুণ নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তিনি অনুকরণীয়। সাহসী, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রোকিয়া আপা সবসময় আমাদের হৃদয়ে থাকবেন।'
Comments