বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে: প্রধান বিচারপতি

আজ সকাল ১০টার দিকে প্রধান বিচারপতি ঢাকা থেকে সড়ক পথে ফরিদপুর যান। তিনি আদালত প্রাঙ্গনে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ এর ফলক উন্মোচন করেন। ছবি: সংগৃহীত

প্রধান বিচরপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, 'ইদানিং সবার মধ্যে কেমন যেন একটা অসহনশীলতা দেখা যাচ্ছে। এ অসহিষ্ণুতা বিচার বিভাগকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। বিচার বিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হলে গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে, রাষ্ট্র্রের অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা আইনের শাসনের জন্য যে সংগ্রাম করে যাচ্ছি তা প্রতিষ্ঠা করতে পারবো না।'

আজ রোববার বেলা ১১টার দিতে ফরিদপুর আইনজীবী সমিতি ভবনে আইনজীবীদের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে বলেন, 'আপনাদের ভাবতে হবে আপনারা আদালতের অংশ। আপনাদের সাহায্য ছাড়া আদালত ঠিকমত সচল রাখা সম্ভব নয়।

'আমরা আইনজীবী ও বিচারকরা মিলে একসঙ্গে চেষ্টা করতে চাই যাতে মামলার জট ছেড়ে যায়। আমি মনে করি জুডিশিয়ারিতে বিচারক যদি হয় ডান হাত তাহলে আইনজীবী বাম হাত। এক হাত যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে কাজ ঠিকমতো হবে না।'

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, 'দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। এদেশের মানুষ এক সময় জবের ছাতু, কচু-ঘেচু খেত। দেশের স্বাধীনতা আমদের অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা আর আগের জায়গায় নেই। অনেক সড়ক নির্মিত হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক বেশি আশাবাদী মানুষ, আমিও আশাবাদী। আস্তে আস্তে ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।'

প্রধান বিচারপতি বলেন, 'দেশের তিনটি স্তম্ভ বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগ। এর কোনো একটা যদি দুর্বল হয় তাহলে সে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, গণতন্ত্র দুর্বল হয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয় না। তাই আসুন আমরা সবাই সম্মেলিত চেষ্টায় বিচার বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে যাই।'

এর আগে প্রধান বিচারপতি ফরিদপুরে জজ কোর্ট প্রাঙ্গনে 'ন্যায়কুঞ্জ' নামে বিচার নিতে আসা ব্যাক্তিদের জন্য একটি বিশ্রামাগার স্থাপনে ভিত্তি ফলক উন্মোচন করেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'দেশে ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলায় কমপক্ষে ৪ কোটি লোক জড়িত। আমরা বলি জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। যারা বিচার চাইতে আসেন তারা এই দেশের মালিক। তাদের কথা চিন্তা করে এ বিশ্রামাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'

'এখানে পানি পান ও টয়লেটের সুবিধা থাকবে। বিচার চাইতে এসে যেন কাউকে এলোমোলো ঘোরাফেরা করে দুর্ভোগে পড়তে না হয় এজন্য এ ব্যবস্থা।'

 এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতি জেলায় বিশ্রামাগার নির্মাণের জন্য ৫০ লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জেলা ও দায়ররা জজের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'কাজ যাতে ঠিক মত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঠিকাদার যেন চুরি না করে। কম লাভ করে তারা যেন এ কাজ করে দেয়।'

প্রধান বিচারপতি ফরিদপুরের মামলার নিস্পত্তির হার বেশি হওয়ায় বিচারক ও আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'ফরিদপুরে ২৫ হাজার ৫৫৭ মামলা গত এক বছরে হয়েছে। এক বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে ৩০ হাজারের বেশি মামলা। নিষ্পত্তির হার ১১৪%। এ ঘটনা আমাদের আশা জাগায়। এ খবর জেনে আমি খুশি।'

এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওহিদুজ্জামান। পরিচালনা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ব্যাপারি। এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জেলা ও জায়রা জজ আকবর আলী শেখসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারকরা এবং ফরিদপুর আইনজীবী সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আজ সকাল ১০টার দিকে প্রধান বিচারপতি ঢাকা থেকে সড়ক পথে ফরিদপুর আসেন।

তাকে সার্কিট হাউজে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। তিনি আদালত এলাকায় এসে প্রথমে 'ন্যায়কুঞ্জ' এর ফলক উন্মোচন করেন। পরে তিনি ফরিদপুরে কর্তব্যরত বিচারকদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এরপর তিনি আদালত চত্ত্বরে একটি গাছ রোপন করেন।

পরে দুপুরে তিনি রাজবাড়ির উদ্দেশে ফরিদপুর ছেড়ে যান।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

9h ago