ঢাকার সঙ্গে পটুয়াখালীর ৪ উপজেলায় বাস চলাচল বন্ধ, ঈদযাত্রীদের ভোগান্তি

ছবি: স্টার

পটুয়াখালীর ৪ উপজেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ৪ উপজেলার কয়েক লাখ ঈদযাত্রী। 

জানা গেছে, ২৩ বছর ধরে এসব রুটে ঢাকার সঙ্গে বাস চলাচল করলেও পদ্মা সেতু চালুর পর রুট পারমিটের অজুহাতে গত বছরের আগস্ট থেকে পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতি বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। 
 
গতকাল রোববার পটুয়াখালী জেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হয় এবং এ ব্যাপারে বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম।

পটুয়াখালী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম সরোয়ার বিষয়টি সভায় উত্থাপন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০০ সালে জেলার বাউফল-গলাচিপা-দশমিনা ও দুমকি উপজেলা শহরের সঙ্গে ঢাকার বাস সার্ভিস চালু হয়। এ রুটের বাসগুলোতে সাধারণ যাত্রী ছাড়াও বিভিন্ন কৃষিপণ্য ও মাছ পরিবহন করা হতো। ২০২১ সালের অক্টোবরে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে পায়রা সেতু ও গত বছরের জুনে পদ্মা সেতু চালুর পর এসব রুটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন আরও গতিশীল হয়। লঞ্চের পরিবর্তে এসব রুটে বাসযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। 

দিবা ও নৈশকোচ সুগন্ধা, মুন, অন্তরা, মেঘনা, হানিফ, বেপারী, চেয়ারম্যান, খানজাহান পরিবহনসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্রায় ২৫টি বাস এসব রুটে চলাচল করতো। পায়রা ও পদ্মা সেতু হয়ে ৪-৫ ঘণ্টায় এসব উপজেলা থেকে সরাসরি ঢাকায় যেতে পারতেন যাত্রীরা। যাত্রী ছাড়াও উপকূলীয় জেলার ৪ উপজেলা থেকে মাছসহ বিভিন্ন কৃষিজ পণ্যও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। গত বছরের আগস্ট মাস থেকে রুট পারমিটের কথা বলে বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা ও দুমকি উপজেলায় চলাচলকারী বাসগুলো বন্ধ করে দেয় পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতি। 

দশমিনা উপজেলার নলখোলা বাসস্ট্যান্ডে অন্তরা পরিবহনের কাউন্টার পরিচালক মো. চাঁন মিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছরের আগস্ট থেকে রুট পারমিটের দোহাই দিয়ে বাস মালিক সমিতি এ রুটে বাস চলাচল করতে দিচ্ছে না। কিন্তুজেলার কুয়াকাটা, মহিপুর, খেপুপাড়া, তালতলী, কলাপাড়া উপজেলায় কীভাবে ঢাকাগামী বাস চলাচল করে?'
 
মুন পরিবহনের কাউন্টার পরিচালক কবির মৃধা জানান, 'পটুয়াখালী বাস মালিক সমিতি খামখেয়ালি করে বাস বন্ধ করে দেওয়ায় পায়রা ও পদ্মা সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৪ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।' 

স্থানীয়রা জানান, এ ৪ উপজেলার কমপক্ষে ২ হাজার যাত্রী গড়ে প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করেন। বাস বন্ধ থাকায় তারা বিকল্প পথে যাতায়াত করেন। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। ব্যয় হবে অতিরিক্ত টাকা ও সময়। 

গলাচিপার চর কাজল এলাকার রাশেদ বলেন, 'আমি ঢাকায় চাকরি করি। ঈদে বাড়ি যেতে সরাসরি বাস পাচ্ছি না। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ি যেতে খুবই কষ্ট হবে। গত বছর ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে গলাচিপা গিয়েছিলাম কিন্তু এ বছর কেন বাসগুলো যেতে দেওয়া হচ্ছে না বুঝতে পারছি না'
 
দশমিনার আনোয়ার বলেন, 'পায়রা ও পদ্ম সেতু চালু হওয়ার পর থেকে নিজ বাড়ি থেকে কম সময়ে ঢাকা পৌঁছে যেতাম। ঢাকা থেকে ফিরতামও কম সময়ে। বিকল্প পথে পটুয়াখালী হয়ে যাওয়া-আসা করলে খরচ বেশি লাগে। পদ্মা সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা।' 

বাউফল উপজেলার কালাইয়ার মৎস্য আড়তদার রেদোয়ান ইসলাম শাকিল বলেন, 'ঢাকায় আমরা প্রতিদিন মাছ পাঠাই। বাসে মাছ পাঠালে আমাদের জন্য সুবিধা হয়। কম সময়ে পাঠানো যায়। বাস বন্ধ থাকায় এখন বাধ্য হয়ে লঞ্চে পাঠাতে হয়। অনেক সময় ঢাকার বাজারে ঠিক সময়ে মাছ পৌঁছানো যায় না। এতে মাছ পচে যায়। ফলে আমাদের ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়তে হয়।' 

পটুয়াখালী জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি রিয়াজ মৃধা বলেন, 'ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাসগুলোর রুট পারমিট জেলা শহর পর্যন্ত। ওইসব বাসগুলো যাত্রী পটুয়াখালী বাস টার্মিনালে পৌঁছে দেবে এবং আমরা সেখান থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের গন্তব্যে পৌঁছে দেব। ওই সব বাসগুলো যদি উপজেলা শহর পর্যন্ত যাতায়াত করে তবে আমাদের অভ্যন্তরীণ বাসগুলো লোকসানের মুখে পড়বে।'
 
তিনি আরও বলেন, 'কুয়াকাটা যেহেতু একটি পর্যটন এলাকা তাই সেখানে আমরা দূরপাল্লার বাস চলাচালে বাধা দিচ্ছি না।' 

এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মো. শরীফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি নিয়ে জেলা বাস মালিক সমিতির সঙ্গে অলোচনা সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পটুয়াখালী-দশমিনা এলাকার সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা বলেন, 'এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

11 years of N’ganj 7-murder: Hope fading as families still await justice

With the case still pending with Appellate Division, the victims' families continue to wait for the execution of the culprits' punishment

2h ago