রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন

ভিটেমাটিতে ফিরতে চান অনেকে, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

রাখাইনের পরিস্থিতিতে দেখতে মংডুর পথে ২০ রোহিঙ্গাসহ ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল
মংডুর পথে ২৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল । ছবি: মোকাম্মেল শুভ/স্টার

সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য সফর বাংলাদেশের কক্সবাজারের ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।

তাদের অনেকেই মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের তাদের জন্য বিভিন্ন গ্রামে গড়ে তোলা বসতিতে ফিরে যেতে চান না। পূর্বপুরুষের ভিটেমাটিতে ফিরতে চান তারা।

আবার অনেকে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাতে রাখাইনে ফিরে যেতে আগ্রহী।

তবে, উভয় পক্ষই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাদের ভয়, আবারও তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হতে পারেন। অথবা উভয় দেশেই সক্রিয় রোহিঙ্গা বিদ্রোহী ও অপরাধী গোষ্ঠী তাদের আক্রমণ করতে পারে।

মিয়ানমার সফরে যাওয়া ২০ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সদস্য মোহাম্মদ ফারুক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা মিয়ানমারের তৈরি ক্যাম্পে নয়, বরং পূর্বপুরুষের ভিটেমাটিতে ফিরে যেতে চান।

ফারুক বলেন, 'মিয়ানমারে আমরা নিরাপদ না। এখানে আমরা নিরাপদে আছি। এখানকার মানুষ আমাদের ভালোবাসে। আমরা বার্মায় (মিয়ানমার) আমাদের পূর্বপুরুষের ভিটায় ফিরে যেতে পারলে নিরাপদে থাকব।'

টেকনাফের জাদিমোরা ক্যাম্পের সাব মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) বলেন, 'অনেক রোহিঙ্গা ফিরে যেতে চায় কিন্তু তারা আরসার মতো অস্ত্রধারী অপরাধীদের আক্রমণের ভয়ে ফিরে যাওয়ার কথা বলতে পারে না।'

ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে রাতারাতি তাদের হত্যা করা হতে পারে বলে জানান তিনি।

আক্রমণ হতে পারে ভেবে এই রোহিঙ্গা নেতা নামে প্রকাশ করতেও ভয় পাচ্ছিলেন।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন মুহিব উল্লাহ। যিনি প্রত্যাবাসনের জন্য সোচ্চার ছিলেন। ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে সশস্ত্র অপরাধীরা তাকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলি করে হত্যা করে।

ওই সাব মাঝি বলেন, 'আমরা গত ৬ বছর ধরে এখানকার একটি ক্যাম্পে আছি। এখানে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছি, এখানে আর থাকতে চাই না। নিজের দেশে ফিরে যেতে চাই।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিনিধি দলের কিছু সদস্যও এখানকার ক্যাম্পে দুর্বিষহ জীবনযাপনের চেয়ে নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।'

তিনি বলেন, '২ থেকে ২০ জন অপরাধী বাংলাদেশে বসবাসকারী ১২ লাখ রোহিঙ্গার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।'

চাকমারকুল ক্যাম্পের সাব মাঝি জাকারিয়া জানান, তাদের কোনো সহায়তার প্রয়োজন নেই। পূর্বপুরুষের জমি ও নাগরিকত্ব ফিরে পেলেই তারা নিজ দেশে ফিরে যাবেন।
 
চলমান প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিষয়ে রোহিঙ্গাদের প্রতিক্রিয়া জানতে প্রতিনিধিদলের সদস্য, সম্প্রদায়ের নেতা এবং সাধারণ মানুষসহ অন্তত ১২ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে দ্য ডেইলি স্টার।

রোহিঙ্গাদের ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে ২০ জন রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশের ৭ সরকারি কর্মকর্তার একটি প্রতিনিধি দল গত ৫ মে শুক্রবার মিয়ানমারের মংডু ও এর আশেপাশের গ্রামগুলোতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের করা প্রত্যাবাসন ব্যবস্থা দেখতে যান।

পরিদর্শন শেষে মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, মিয়ানমারের মংডু শহর যেখানে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা হবে সেখানে পরিস্থিতি 'খারাপ নয়'।

তবে প্রতিনিধি দলের রোহিঙ্গা সদস্য মোহাম্মদ সেলিম সে সময় সাংবাদিকদের জানান, নাগরিকত্ব না দেওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গারা ফিরবে না।

মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ প্রতিনিধি দলকে ৮টি অঙ্গীকারের বিষয়ে বাংলা, ইংরেজি ও বার্মিজ ভাষায় লেখা একটি পুস্তিকা দিয়েছে।

প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, সহায়তা, আবাসন সুবিধা, জীবিকার প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার বিষয়ে বলা হয়েছে।

বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে বসবাস করছে। তাদের বেশিরভাগই ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তক নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশ পালিয়ে এসে ১৯৮০-র দশকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

Comments

The Daily Star  | English

Expatriates' remittance helps Bangladesh make turnaround: Yunus

It is the expatriates who help sustain the country, says the chief adviser

4h ago