‘সরকারি চাকরির বেতন মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি’

কেউ অনাথ হলে আইএমএফ তাদের ঋণ দেয় না: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী
সদ্য সমাপ্ত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

মহার্ঘ্য ভাতা নয়, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।

সদ্য সমাপ্ত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর নিয়ে আজ সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, '২০১৫ সালে বেতন-ভাতা বৃদ্ধির সময় আমরা একটা প্রভিশন রেখেছিলাম যে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে বেতন বাড়বে। তারও একটা সময় সুনির্দিষ্ট করা ছিল। যেহেতু এখন মূল্যস্ফীতি একটু বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সেই জায়গাটা আবার নতুনভাবে কতটুকু পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া যায়, সেটা আমরা চিন্তাভাবনা করছি।' 

'এর জন্য আবার একটা কমিশন করো, এটা করো সেটা করো, তাতে খুব একটা লাভ হয় না। কিছু লোক বঞ্চিত হয়ে যায়, কিছু লোকের বাড়ে। সেজন্য আমরা প্রতি বছর হিসাবমতো মূল্যস্ফীতি যত বাড়বে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রেখে একটা পার্সেন্টেজ আমরা বেতন বাড়াই,' বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা অনেকগুলো সুযোগও দিয়েছি। নানা ধরনের ভাতা দিয়েছি, ফ্ল্যাট কেনার, গাড়ি কেনার লোন অনেক রকমের সুযোগ-সুবিধা দিয়েছি। বেতন যেভাবে বাড়িয়ে দিয়েছি, সেটা কিন্তু সকলের ক্ষেত্রেই, শ্রমিকদের, সরকারি কর্মচারীদের সবার জন্য আমরা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। কাজেই মহার্ঘ্য ভাতার মতো কিছু দেওয়ার প্ল্যান নেই।'

'আমরা যেটা করব, যেহেতু মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে, সেখানে যাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে তাদের হিসাব করে মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে যতদিন এই সমস্যা চলবে ততদিন পর্যন্ত বেতনের একটা পার্সেন্টেজ বাড়তে পারে সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। সেটাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অন্য কিছু না,' যোগ করেন তিনি।

বেসরকারি খাত প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, 'এটা তো সরকারের ব্যাপার না। তারপরও বেসরকারি খাত করোনাভাইরাসের সময় যেন বিপদে না পড়ে সেজন্য আমরা প্রণোদনা দিয়েছি। তাদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া হয়েছে। আমরা ভর্তুকি পর্যন্ত দিয়েছি।'

বাজেটে ভর্তুকি প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, 'সার্বিকভাবে যে হারে ভর্তুকি আমরা দিচ্ছি, সেটাই তো বাজেটে আমাদের সবচেয়ে বিপদে ফেলছে। পৃথিবীর কোনো দেশে সেটা দেয় না। জ্বালানি-বিদ্যুতে ভর্তুকি দিয়ে লাভ কে বেশি পায়? যে সবচেয়ে বেশি এয়ারকন্ডিশন চালায় তার লাভ হয়। গরিব মানুষের তো লাভ হয় না। তারা তো কত ওয়াট পর্যন্ত এমনিই পায়। আসল লাভবান তো হচ্ছে বিত্তশালীরা। অথচ আমাদের বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।'

তিনি আরও বলেন, 'জ্বালানি তেল, পরিবহন সব ক্ষেত্রে ভর্তুকি এত বেড়ে গেছে যে এটা তো আমাদের পক্ষে একা টানা সম্ভব না। এটার ক্ষেত্রে আমরা যেটা করেছি, মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে প্রাইস অ্যাডজাস্ট। এটা অটোমেটিক যেন হয়, সেটার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। যে দামে উৎপাদন হবে, সে দামেই কিনতে হবে। যে যতটুকু পারবে ততটুকু কিনবে, ততটুকু ব্যবহার করবে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করে এসব জায়গায় ভর্তুকি দেওয়ার তো কোনো যুক্তি নেই। এটা বাস্তবতা।'

'এবার ঝড়ের জন্য গ্যাস লাইন, বিদ্যুতের লাইন ছিঁড়ে গেছে, ঝড়ের সময় এক্সিডেন্ট হতে পারে। সেগুলো এখন ঠিকঠাক করতে সময় লাগবে কিছু। একটু কষ্ট হচ্ছে মানুষের। তারপরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি,' যোগ করেন তিনি। 

বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'করোনা-ইউক্রেন যুদ্ধ, এর মধ্যে বাজেট যে করতে পারছি, এর জন্য ধন্যবাদ জানায়েন। গতকাল আমরা বাজেটের প্রস্তুতি শেষ করেছি। এখন কে অনাথের কথা বলছে তার দায় তো আমরা নেবো না। আইএমএফ ঋণ তাদেরই দেয়, যাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা থাকে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এত অনাথ হয়নি। আর কেউ অনাথ হয়ে গেলে আইএমএফ লোন দেয় না। পরিশোধের সক্ষমতা আছে বলেই আমরা ঋণ নিয়েছি। এটা বাস্তব কথা। আমরা পারতপক্ষে কারও কাছে হাত পাতি না।'    

Comments