ফেরিওয়ালাকে প্রকাশ্যে মারধর করে পুলিশে দিলেন বিতর্কিত চসিক কাউন্সিলর

গতকাল বুধবার চট্টগ্রামের আকবর শাহ থানার হাজী ঘোনা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরে রাত থেকে মারধরের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রবল সমালোচনা তৈরি হয়।
ভ্যানে ফেরি করে ক্রোকারিজ সামগ্রী বিক্রেতা অপুকে মারধর করছেন কাউন্সিলর জসিম। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

রাস্তার পাশে এক ফেরিওয়ালা যুবককে প্রকাশ্যে মারধর করে পুলিশে দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বিতর্কিত কাউন্সিলর জহুরুল আলম জসিম।

গতকাল বুধবার আকবর শাহ থানার হাজী ঘোনা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরে রাত থেকে মারধরের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রবল সমালোচনা তৈরি হয়।

মাধরোরের শিকা ওই যুবকের নাম অপু প্রধান। তিনি হাজীঘোনা এলাকায় ক্রোকারিজ হকার হিসাবে রাস্তার পাশে মালামাল বিক্রি করেন। তবে মারধর করে পুলিশে দেওয়ার সময় কাউন্সিলর জসিম দাবি করেন, অপু মালামাল বিক্রির জন্য জুয়ার আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন লটারির মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন পন্য বিক্রি করছিলেন সেখানে।

অপু প্রধান এখনো আকবর শাহ থানার হেফাজতে আছেন। তবে এ ঘটনায় কোনো মামলা বা অভিযোগ দেননি কাউন্সিলর জসিম।

বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শেখ সাব্বির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই যুবক রাস্তার পাশে ফেরি করে জিনিস বিক্রি করেন। জসিম কাউন্সিলরের দাবি, সে লটারি-জুয়া করছিল। আমরা তাকে হেফাজতে নিয়েছি। আমরা এখনো কাউন্সিলেরর অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে পারিনি।'

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, কাউন্সিলর জসিম অপুর কলার ধরে থাপ্পড় দিচ্ছেন আর বলছেন, 'তোর বাড়ি কোথায় বল?' তিনি তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালিও করেন। এক পর্যায়ে অপুর বাম পায়েরে হাঁটুতে সজোরে লাথিও মারেন তিনি। তখন পুলিশের গাড়ি পৌঁছালে পুলিশের সামনেই আবার অপুকে মারতে থাকেন তিনি। বলতে থাকেন, 'তোকে এখানে বসার পারমিশন কে দিয়েছে?'

মারধরের সময় অপুর ভ্যানে থাকা ক্রোকারিজের জিনিসপত্র ভ্যানের পাশে ছাড়ানো-ছিটানো অবস্থায় থাকতে দেখা যায়। অপুকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে জসিম বলেন, 'আমি বাদী হবো।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আকবর শাহ থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কাউন্সিলর জসিম দাবি করেছেন এটি প্রকাশ্য জুয়া। তবে ওই ফেরিওয়ালা লটারির মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছিল। জসিমের বিরুদ্ধেই নানা অনিয়মের অভিযোগ আছে। আর তিনি নিজেই এখন জুয়ার কথা বলছেন। এ ঘটনায় আমরা খুব বিব্রত।'

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য কাউন্সিলর জসিমের মোবাইলে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন কেটে দেন।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা ও খাল ভরাটের কর্মকাণ্ড পরিদর্শনে গেলে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহীসহ অন্যদের ওপর হামলার অভিযোগে জসিমের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানায় মামলা হয়।

৭ এপ্রিল আকবর শাহ থানার বেলতলী ঘোনায় এডিবির অর্থায়নে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন পরিচালিত একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে রাস্তা নির্মাণের সঙ্গে রিটেইনিং ওয়াল তোলার সময় পাহাড়ের মাটি ধসে ১ শ্রমিক নিহত ও ৩ জন আহত হন।

ওই ঘটনার ৬দিন পর স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম ও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশনের ৩ প্রকৌশলীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এছাড়া পাহাড় কেটে গরুর খামারের অবকাঠামো তৈরি করছিলেন কাউন্সিলর জসিম। ২৯ এপ্রিল এক অভিযানে জেলা প্রশাসন সেই অবকাঠামো ভেঙে দেয়।

Comments