বাংলাদেশ

সৌদির সঙ্গে মিল রেখে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঈদ উদযাপন

এসব এলাকার মুসলমানরা সৌদি আরবের সঙ্গে একই দিন রোজা শুরু করেন; একই দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপন করেন।
জামালপুরের ঈদ জামাত। ছবি: সংগৃহীত

প্রতিবারের মতো এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশের বেশ কিছু জায়গায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে।

এর মধ্যে আছে বরিশাল, নোয়াখালী, চাঁদপুর, জামালপুর, ফেনী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকা।

এসব এলাকার মুসলমানরা সৌদি আরবের সঙ্গে একই দিন রোজা শুরু করেন; একই দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা উদযাপন করেন।

দ্য ডেইলি স্টার প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

বরিশাল

বরিশালের ঈদ জামাত। ছবি: টিটু দাস/স্টার

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল আজহা উদযাপন করছে বরিশাল বিভাগের ২০ হাজারেরও বেশি পরিবার। বরিশাল সদর ছাড়াও বাবুগঞ্জ ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার ৫ হাজার পরিবার এবং বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলার ১০-১৫ হাজার পরিবার ঈদুল আজহা উদাযপন করছে বলে জানান মুসল্লিরা।

এসব এলাকায় আজ বুধবার সকল ৮টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নিয়ম মেনে শুরু হয় পশু কোরবানি।

বরিশাল নগরের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হরিণাফুলিয়া চৌধুরী বাড়ি শাহ্-মমতাজিয়া জামে মসজিদের ঈমাম মাওলানা আবু জাফর বলেন, 'আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে কোরবানি করি- বিষয়টা এমন নয়। মূলত আরবি তারিখ মেনে চলার জায়গা থেকে এটা করা হয়। সে হিসেবে আজ ঈদুল আজহার নামাজ সমাপ্ত করেছি। এরপর পশু কোরবানি করেছি।

বরিশাল নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাজকাঠী হাজীবাড়ি শাহ সুফি জাহাগীরিয়া জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আমির হোসেন জানান, ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাগরদী, তাজকাঠীসহ আশপাশের প্রায় ৫০০ পরিবার আজ ঈদ পালন করছে। ঈদের জামাত শেষে তারা মহান সৃষ্টিকর্তার নামে পশু কোরবানিসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালন করছেন। এভাবে বিভাগের অন্তত ২০ হাজার পরিবারের ১ লাখ মানুষ আজ ঈদ উদযাপন করছেন বলেও জানান তিনি।

নোয়াখালী

নোয়াখালীতে নামাজ শেষে শিশুদের ঈদ আনন্দ। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে নোয়াখালীতে ৩টি ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বুধবার সকাল ৯টার দিকে জেলা সদর ও বেগমগঞ্জ উপজেলার ৩টি মসজিদে পবিত্র ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্তবাগ গ্রামের মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ ও জিরতলী ইউনিয়নের ফাজিলপুর গ্রামে দায়রা বাড়ী মসজিদে ঈদের একটি করে জামাত অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে নোয়াখালী পৌরসভার হরিনারায়ণপুর এলাকার পশ্চিম শাহপুর দারোগাবাড়ি এলাকায় সকাল ৮টা ও ৯টায় ২টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।   

এগুলোর মধ্যে মুন্সিবাড়ি জামে মসজিদ ২৫০-৩০০ জন, দায়রাবাড়ি মসজিদে ১০০-১২০ জন এবং নোয়াখালী পৌরসভার হরিনারায়ণপুর এলাকার পশ্চিম শাহপুর দারোগাবাড়ি এলাকার ২টি জামাতে ২৬ জন মুসল্লি ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন।

চাঁদপুর

চাঁদপুরের ৫ উপজেলার অর্ধশত গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার মুসল্লি আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন। এদিন সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে এসব গ্রামের বিভিন্ন মাঠে ও মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে সকাল ৮টায় হাজীগঞ্জ সাদ্রা গ্রামের সাদ্রা দরবার শরীফ মাঠে ঈদুল আজহার নামাজ পড়ান মাওলানা জাকারিয়া চৌধুরী মাদানী।

তিনি জানান, ১৯২৮ সাল থেকে তার বাবা সাদ্রা গ্রামের পীর মাওলানা ইসহাক বিশ্বের যে কোনো স্থানে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে এই রীতি চালু করেন। এরপর থেকেই তার অনুসারীরা এটি চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন গ্রামের ও দেশের জায়গায় তা অনুসরণ করতে শুরু করেন।

চাঁদপুরে আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করা অন্য এলাকাগুলোর মধ্যে আছে হাজীগঞ্জের সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, জাকনী, প্রতাবপুর, বাসারা; ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা ও গোবিন্দপুর; মতলব উপজেলার দশানী, মোহনপুর, পাঁচানী, কচুয়াসহ শাহরাস্তি উপজেলার কয়েকটি গ্রাম।

জামালপুর

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে ১৭ গ্রামের ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ আজ ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিয়েছেন।

সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে সরিষাবাড়ী পৌরসভার বলারদিয়ার মধ্যপাড়ায় এই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। বলারদিয়ার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা আজিম উদ্দিন জামাতে ইমামতি করেন।

সরিষাবাড়ী পৌরসভার বলারদিয়ার, বালিয়া, বাউসি, মূলবাড়ি, সাতপোয়া, সাঞ্চারপাড়, পঞ্চপীর, হোসনাবাদ, পাটাবুগা, পাখাডুবি, বনগ্রাম, বগারপাড় ও পুঠিয়ারপাড় গ্রামের লোকজন এই জামাতে অংশ নেন।

ইমাম আজিম উদ্দিন মাস্টার দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা প্রতি বছর সৌদির সঙ্গে মিল রেখে রোজা, কোরবানি ও ঈদের নামাজ আদায় করেন। এ ধারাবাহিকতায় এবারও তারা কোরবানি করছেন।

ফেনী

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে এবার ফেনীর ৩টি জায়গায় ঈদুল আজহা উদযাপন করা হচ্ছে। এই জায়গাগুলো হলো- ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদ নগর ইউনিয়নের পূর্ব সুলতানপুরের ৭ নং ওয়ার্ডের ২টি পাড়া এবং পরশুরাম পৌরসভার কোলাপাড়া ছয়ঘরিয়া এলাকা।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. সানা উল্লাহ জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই পূর্ব সুলতানপুরের ২টি জায়গায় সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদ উদযাপিত হয়ে আসছে।

ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদ নগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, 'ইউনিয়নের ওই দুই সমাজে বহু বছর আগে থেকেই সৌদি অনুসারীরা শান্তিপূর্ণভাবে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে আসছেন। আজ বুধবারও তারা অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে নামাজ আদায় ও পশু কোরবানি করেছেন।'

কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট

কুড়িগ্রামের ঈদ জামাত। ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ৪ ইউনিয়নের ১০ গ্রামের ২ হাজারের বেশি মানুষ আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করছেন। এদিন সকাল ৯টায় এসব গ্রামে ঈদুল আজহার জামাত জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়।

গ্রামগুলো হলো কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাইকের ছড়া ইউনিয়নের ছিটপাইকের ছড়া, পাইকের ছড়া ও পাইকডাঙ্গা গ্রাম, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ি ও চর মহিষামুড়ি, তুষভান্ডার ইউনিয়নের সুন্দ্রাহবি, মুন্সিপাড়া এবং চন্দ্রপুর ইউনিয়নের পানি খাওয়ার ঘাট, চন্দ্রপুর ও বোতলা গ্রাম।

ভুরুঙ্গমারী উপজেলার ছিট পাইকেরছড়া গ্রামে অনুষ্ঠিত ঈদ জামাতের ইমাম মওলানা মোকছেদুল ইসলাম জানান, তাদের ঈদের জামাতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে অনেক মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। ২ যুগ ধরে এখানে সৌদি আরবের সঙ্গে মিল ঈদ উদযাপন করা হচ্ছে।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মুন্সিপাড়া এলাকায় অনুষ্ঠিত ঈদ জামাতের ইমাম মাওলানা আব্দুল হামি বলেন, ২০১১ সাল থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের সহস্রাধিক মুসল্লি সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদের নামাজসহ বিভিন্ন ধর্মীয় রীতি উদযাপন করে আসছেন।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) দীপক কুমার দেব শর্মা ও লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও জহির ইমাম জানান, মুসল্লিরা যাতে নিরাপদে ঈদ উদযাপন করতে পারেন সে জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

Comments