রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকল বন্ধের ৩ বছর, ঢাকায় সিপিবির বিক্ষোভ

আজ, ২ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল বন্ধের কালো দিবসে বিকেলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উদ্যোগে ঢাকার পার্টি কার্যালয় থেকে শুরু করে বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পল্টন মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। ছবি: সংগৃহীত

দেশের ২৬টি সরকারি পাটকল বন্ধের ৩ বছর আজ। এদিনকে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ 'কালো দিবস' হিসেবে ঘোষণা করেছেন। বিগত ২ বছর সংগঠনটি এদিনকে 'কালো দিবস' হিসেবে ঘোষণা দিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।

রোববার বিকেল ৪টায় নাগরিক পরিষদ খালিশপুর শিল্পাঞ্চলে পদযাত্রা করে গোল চত্ত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করে।

কালো দিবস পালন উপলক্ষে এদিন খুলনার খালিশপুর, ফুলতলার ইস্টার্নগেট, যশোরের রাজঘাটসহ সারাদেশে প্রতিবাদ হিসেবে পদযাত্রা ও মিলগেটে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

নাগরিক পরিষদের নেতারা জানান, ২০২০ সালের ২ জুলাই দেশের প্রধান পরিবেশবান্ধব শিল্প ২৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরকার মিল বন্ধের দুমাসের মধ্যে সব পাওনা পরিশোধের অঙ্গীকার করলেও অদ্যাবধি অনেক শ্রমিক এরিয়ারসহ তাদের বকেয়া পাওনা পায়নি। খুলনার খালিশপুর জুট মিল ও দৌলতপুর জুট মিল, সিরাজগঞ্জের জাতীয় জুট মিল এবং চট্টগ্রামের কেএফডি ও আর আর জুটমিলের শ্রমিকরা এখনও বকেয়া কোনো টাকা পায়নি।

এছাড়াও বিভিন্ন মিলের শ্রমিক যাদের মামলা আছে তাদের দ্রুত মামলা নিস্পত্তি করে বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হচ্ছে না। অনেকে সঞ্চয়পত্রের কাগজ এখনও পায়নি। ফলে শ্রমিকেরা নিদারুণ যন্ত্রণা ও উৎকণ্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। মিলগুলোর স্কুলের ছাটাইকৃত শিক্ষক-কর্মচারিরা অনেক কষ্টে আছেন। 

পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহবায়ক কুদরত-ই-খুদা  বলেন,'বিশ্বব্যাপী পাট ও পাট পণ্যের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। অথচ বাংলাদেশে একযোগে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকল গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কয়েক হাজার শ্রমিক সেখানে বেকার। এই পাটকলগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু বন্ধ করার সময় তারা বলেছিল এটাকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় আবার চালু করবে। সরকার তার কথা রাখেনি। বরং এই সকল পাটকলের হাজার হাজার বিঘা জমি ব্যক্তি উদ্যোগে ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ২০২০ সালের ২ জুলাই একযোগে দেশের ২৬ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। 

রাজপথে সিপিবি'র সমাবেশ-বিক্ষোভ মিছিল

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স বর্তমান ও অতীতের সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সমালোচনা করে বলেছেন, লিজ বা ব্যক্তিমালিকানার নামে জাতীয় সম্পদ লুটপাট নয়, আধুনিকায়ন করে বন্ধ সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল চালু করতে হবে।

আজ, ২ জুলাই রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকল বন্ধের কালো দিবসে বিকেলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উদ্যোগে ঢাকার পার্টি কার্যালয় থেকে শুরু করে বিক্ষোভ মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পল্টন মোড়ে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

সিপিবি'র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্সের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবি ঢাকা দক্ষিণ এর নেতা সাইফুল ইসলাম সমীর, পাটকল শ্রমিক নেতা মো. গোফরান। সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা, আসলাম খান, ডা. সাজেদুল হক রুবেলসহ প্রমুখ নেতারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, 'পাটকলে উৎপাদন না থাকলেও কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকা বেতন দিচ্ছে। অথচ বদলী শ্রমিকসহ সকল শ্রমিকের পাওনা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।'

'বিশ্বে পরিবেশবান্ধব পাটের চাহিদা বেড়ে চলছে, অথচ দেশে এই শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্থ করে পরিবেশ ধ্বংসকারী প্লাস্টিক শিল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এসব হচ্ছে সরকারের দেশবিরোধী, বিশ্বব্যাংক আইএমএফ ও লুটেরা ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষার নীতির জন্য। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলো অথচ গরিব মধ্যবিত্তের জন্য সার্বজনীন রেশন ব্যবস্থা ও ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করা হলো না। পাচারের টাকা উদ্ধার করা হলো না, ঋণ খেলাপীদের আবার ঋণ পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলো,' বলেন তিনি,

তিনি এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে সরকারের দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করার আহ্বান জানান।

Comments

The Daily Star  | English

Foreign observers who endorsed past three polls won’t be allowed: CEC

Experienced and reliable observers will be permitted to monitor the upcoming national election, he says

57m ago